সব কথা বলা যাবে, সত্যটা বলা যাবে না।
এক
কৌন বনেগা কৌরপতি প্রচার হওয়ার আগের কথা। অমিতাভ বচ্চনের তখন বয়স হয়ে গেছে। নায়িকার সাথে বৃষ্টির মাঝে লাফালাফি দর্শক গ্রহণ করছে না। তার ছবি একের পর এক ফ্লপ! সে অন্য ব্যাবসা শুরু করল।
সেই ব্যাবসায়ও ফ্লপ। দেউলিয়া হতে বেশি সময় লাগল না। মান সম্মান যায় যায় অবস্থা। এই সময় শুরু হল ভারতী টিভি চ্যানেলে কৌন বনেগা কৌরপতি। অমিতাভ বচ্চন উপস্থাপক।
এই অনুষ্ঠানে যারা অংশ গ্রহন করেছেন তার সত্যিকারে কেউ কোটিপতি হয়েছেন এমন নজির নেই। কারণ টাকা পেলে তার বড় একটা অংশ চেরিটিতে দিতে হবে বলে চুক্তি করতে হয়। তবে কেউ কোটিপতি হোক আর নাই হোক অমিতাভ বচ্চন কিন্তু ঘুরে দাড়িয়েছেন। তার সাবলিল উপস্থাপনা মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা পায় অনুষ্ঠানটি। সেই যাত্রায় এই অনুষ্ঠানটির কারণে মানসম্মান বেচে যায় অমিতাভ বচ্চন।
দুই
আমাদের দেশে শুরু হয়েছে কে হতে চায় কোটিপতি। আমাদের টিভি চ্যানেলগুল এক ঘন্টার অনুষ্ঠানের জন্য ৭০হাজার টাকা বাজেট থাকে। সেই টাকাও দিতে টিভি চ্যানেলগুলো গড়িমসি করে। প্রযোজকদের রাজপথে নামার নজির এই দেশে আছে। টিভি চ্যানেল থেকে টাকা তুলতে ঘাম বেরিয়ে যায় প্রযোজকদের।
আমার অনেক বন্ধু আগ্রহ নিয়ে সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান বানিয়েছে। তারা এখন পুজি হারিয় অন্য পেশায় কনভার্ট হয়ে গেছে। কে হতে চায় কোটিপতি অনুষ্ঠানটি এশটি প্রাইভেট চ্যানেল প্রচার করবে। তারা এর আগে ছবিয়াল সন্ধ্যা নামে একটি অনুষ্ঠান শুরু করে ছিল। লোখসান হওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
যারা টাকার অভাবে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় তারা কি ভাবে কোটি টাকা দিবে আমার বোধগম্য না।
তিন
কোটিপতি নিয়ে প্রচলিত জোকস শুনুন-রাস্তার পাশে এক ফকির দশটাকার বিনিময়ে তাবিজ বিক্রি করেছে। কোটিপতি হওয়ার তাবিজ। একলোক সহজে কোটিপতি হওয়ার জন্য তাবিজ কিনল। তাবিজ কেনার সাথে সাথে কাজ হতে শুরু করে।
সবাই তাকে ধারের টাকা ফেরৎ দিতে শুরু করল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেচারা প্রায় লাখপতি হয়ে গেল। সব টাকা নিয়ে যখন বাড়ি ফিরছেন। বাড়ির গলির সামনে অন্ধকার। সেখানে ওৎ পেতে থাকা ছিনতাই কারীরা সব নিয়ে গেল।
এবং সামন্য হালকাপতলা মারও দিয়ে দিল। খালিহাতে সব খুইয়ে ঘরে ফিরলেন বেচারা। সকালে দেখেন সেই তাবিজ বিক্রেতা ফকির সেখানেই বসে তাবিজ বিক্রি করছেন। তাকে দেখে সে নিজেই শিক্ষা নিল এই ফকির যদি তাবিজ দিয়ে কোটিপতি হতে পারত তবে আগে সে নিজেই তাবিজ গলায় দিয়ে কোটিপতি হত। ঈশপ যুগ হলে গল্পটা এখানেই শেষ হত।
কিন্তু বর্তমান হল মেগাসিরিয়ালের যুগ এই গল্প এখানে শেষ হবে না। অনেক ঘাতপ্রতি ঘাতের মাধ্যমে পুলিশকে চাদা দিয়ে ঐ জায়গা স্থায়ী একটা আসন গেড়ে বসেন ফকির। তার কাছ থেকে তদবির নিতে লোক আসে দলবেধে। সবাই কোটিপতি হতে চায়। ভীড় বাড়তে থাকে।
এক সময় সেই ফকির কোটিপতি হয়ে যায়।
চার.
আমার হাত দেখে অনেকেই বলে কোটিপতি হব। কিন্তু এমন কোন সম্ভাবনা দেখছি না। তবে এর পেছেনে কারণটা আমি খুজে পেয়েছি। আমার হাত ভর্তি রেখা।
এত বেশি রেখা যেকোন জ্যাতিষির মাথা ঘুড়ে যায়। তবে আমি বাংলাদেশে কে হবে কোটিপতি অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেখে একরকম হঠাৎ আশাবাদি হয়ে গেলাম। প্রতিদিন টিভির পর্দায় চোখ রাখি। আশায় বুকবাধি। হঠাৎ দেখলাম পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অংশগ্রহণের জন্য এসএমএস করুন।
এসএমএস করে দেখি মোবাইলে পাঁচ টাকা নাই। পরে দেখলাম তারা প্রতিটি এসএমএস এর জন্য চার্জ নিচ্ছেন চার টাকা। প্রথমেই ধরা খেলাম। এমন ধরা আমি আরেকবার খেয়েছিলাম। সেটা বলে নেই।
সেই ধরা দিয়েছিল এক বৃটিশ বাঙালি।
নাফে মোহাম্মদ এনাম নামে এক জুনিয়ার লেখক আছে। ব্রিটেনে থাকেন। সে সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটেনে বসে মাসিক পত্রিকা বের করবেন। রহস্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন তার হরর পত্রিকার।
হরর পত্রিকার লেখদের তিনি এত পরিমাণ সম্মানী দিবেন যেন আর সারাজীবন সম্মানী না পেলেও চলবে। বিজ্ঞাপনটি নিয়মিত রহস্য পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। হাবীব ভাই বলল, মামুন লেখা দাও। ছেলের টাকা পয়সা আছে। যদি একশ পাউন্ড পাঠিয়ে দেয় তাহলে তোমার জন্য অনেক।
যাই হোক নতুন উদ্দাম নিয়ে রম্য রচনা ছেড়ে ভূতের গল্প লেখতে নেমে গেলাম। আমি এমন ভয়ের গল্প লিখলাম যে রাতে ভয়ে নিজেই রিভিশন দিতে পারিনি। ভয়ে সারা রাত লাইট জ্বেলে ঘুমিয়েছি।
পাঠিয়ে দিলাম মেইল করে। জবাবে একটা মেইল পেলাম-
আপনার লেখা ছাপা হয়েছে।
নিউমার্কেটের পত্রিকাটি পাবেন।
পত্রিকা দেখে মন ভাল হয়ে গেল। হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবের সাথে আমার লেখাও। সব চেয়ে বড় গল্পটি আমার। নতুন উদ্যমে আবার একটা ভূতের গল্প লিখে পাঠিয়ে দিলাম।
জবাব এল আপনার গল্প সিলেক্ট হয়েছে। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায় আর কোন জবাব নেই। নাফে এনামের মোবাইলে ব্রিটেনে ফোন করি। নাম্বার ধরে ভূংভাং ইংরেজী বলে। তারপর তাকে খুজে পেলাম ব্লগে।
এনবার শক্ত করে ধরলাম আমার পাউন্ড কই?
সে জবাব দিল অনিবার্জ কারণ বসত হরর পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আমাদের দেশে কে হবে কোটিপতি অনুষ্ঠান দিয়ে যদি প্রযোজকের লাভ না হলে কি হবে?
তারা লোটা কম্বল নিয়ে ভাগবে। বৃটেনে চলে যাবে।
আর যারা টিভির পর্দায় টাকা পেয়ে যাবে হয়ত ক্যামেরার আড়ালে তারা হয়ত হায় হায় করবে।
শেষে একটা ছোট ঘটনা বলি, আমাদেও স্কুল মাঠে ওয়াজ হচ্ছে।
ওয়াজ করতে এসেছে আমাদের এলাকারই এক কৃতি সন্তান। সে এসে বলল, কে জান্নাতে যেতে চান হাত তুলুন।
আমারা সবাই হাত তুললাম। পাশে দেখি আমাদেও স্যার। সে হাত তুলল না।
স্যারকে আমি ফিসফিস করে বললাম, স্যার আপনি জান্নাতে যেতে চান না?
-চাই, তবে যে ওয়াজ করতে এসেছে সে আমার ছাত্র। ওর কথায় কিভাবে হাত তুলি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।