আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৭ জুলাই মিলন হত্যার দুই বছর .......... চার্জশিট না হওয়ায় হতাশ বাদী ও বাদীর আইনজীবি “জাস্টিজ ডিলে, জাস্টিজ ডিনাই”- বাদী আইনজীবি আ্যডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাবুল



নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর কিশোর সামছুদ্দিন মিলন হত্যার ২ বছর অতিবাহিত হলে আজও মামলার কোন চার্জশিট দেওয়া হয়নি। যার কারণে বিচার কাজ বিলম্ব হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মামলার বাদী মিলনের মা কহিনুর বেগম ও তার আইনজীবি এড্যভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাবুলসহ স্থানীয় সুশিল সমাজ। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৭ জুলাই সকালে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাকড়া ইউনিয়নেন টেকের বাজারের তিন রাস্তার মোড় নামক স্থানে তৎকালিন কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমা ডাকাত সাজিয়ে নিহত কিশোর মিলনকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার মাঝে ছেড়ে দেয়। পরে স্থানীয় জনতা তাকে নির্মম এবং নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।

তার কাছ থেকে নগদ ১৪ হাজার টাকা ও দামী মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার দূলভ ভিডিও ফুটেজসহ কয়েক দিনপর “সময়” টিভিতে প্রচার হওয়ার পরে সারাদেশে এবং বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নিহত মিলনের মা কহিনুর বেগমমের মামলাটি পিটিশেন আকারের অভিযুক্তি মামলাটি সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে হত্যা হিসেবে রুজু হয়। এ মামলার তদন্তবার দেওয়া হয় নোয়াখালী ওসি ডিবি বিল্লাল হোসেনকে । মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গয়েন্দা শাখার ওসি খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ জানান আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদেরকে নোটিশ দ্ওেয়াহবে তাদের বক্তব্য গ্রহনের জন্য ।

পরে, ডিবি পুলিশ হত্যার ভিডিও চিত্র দেখে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত থাকায় চিহিৃত স্থানীয় ৯ জনকে আটক করলেও এ ঘটনার মূলহোতা পুলিশ সদস্য কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমাকে অদৃশ্য কারণে আটক করেনি। কিন্তু উদ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রফিক উল্ল্যাহ, এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ হাযারী। এ নির্মম হত্যা কান্ডের এক বছরের মধ্যে তাদেরকে তাদের চাকুরিতে পূর্ণবহাল করা হয়। নিহত মিলনের চাচা জসিম উদ্দিন ও নিহতের দাদী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে আমাদের টাকার লোভ দেখিয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। আ্যডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাবুল জানান, “জাস্টিজ ডিলে, জাস্টিজ ডিনাই” অর্থাৎ বিলম্বে বিচার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করে না।

” এছাড়া মামলার আইনজীবী অভিযোগ করেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও আসামী সনাক্ত করা গেলেও দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত এই মামলার এখনো চার্জশীট দেয়া হয়নি। উপরন্তুএ মামলায় আটক ৭জনসহ ৯জনই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে। তিনি জানান, ৬০দিনের মধ্যে মামলার চার্জশীট দাখিল করার কথা থাকলেও আইও বার বার আদালত থেকে সময় নিচ্ছেন এতে বিচার কাজ বিঘিœত হচ্ছে বলেও তিনি জানান। মামলার চার্জশিট দেওয়া প্রসঙ্গে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো.আনিসুর রহমান পিপিএম আমাদের সময়কে জানান, কোম্পানীগঞ্জে শিশু মিলন হত্যার ঘটনা খুবই স্পর্শ কাতর একটি মামলা। মামলাটিতে সরকারি, বেসরকারি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে নোয়াখালীতে যোগদানের পর তিনি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছেন।

মামলাটির কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে জানিয়ে পুলিশ সুপার জানান, আসামী যেই হোক তাকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া দু-এক মাসের মধ্যেই আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হবে বলে তিনি জানান। আ্যডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাবুল জানান, “জাস্টিজ ডিলে, জাস্টিজ ডিনাই” অর্থাৎ বিলম্বে বিচার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করে না। ” এছাড়া মামলার আইনজীবী অভিযোগ করেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও আসামী সনাক্ত করা গেলেও দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত এই মামলার এখনো চার্জশীট দেয়া হয়নি। উপরন্তুএ মামলায় আটক ৭জনসহ ৯জনই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে।

তিনি জানান, ৬০দিনের মধ্যে মামলার চার্জশীট দাখিল করার কথা থাকলেও আইও বার বার আদালত থেকে সময় নিচ্ছেন এতে বিচার কাজ বিঘিœত হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এেিদক, “সময়” সংবাদে এ চাঞ্চল্যকর হত্যার খবর প্রচার হওয়ার পর ১১ আগষ্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিহত মিলনদের বাড়ীতে ছুঁটে যান এবং মিলনের মাকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে নগদ এক লাখ টাকা নগদ প্রদান করে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন। এবং নিহত মিলনের ছোট ভাই সালা উদ্দিন পাভেলের লেখা পড়ার খরচসহ পরিবারের বরণ পোষন প্রদানের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। কিন্তু গত দু’বছরে যোগাযোগমন্ত্রী বা তার কোন প্রতিনিধি নিহত মিলনের পরিবারের কোন খবর না নেওয়া ক্ষোভ ও হাতাশা প্রকাশ করেন নিহতরে ছোট ভাই সালা উদ্দিন পাভেল ও তার বড় ফুফু সেতারা বেগম। অন্যদিক, গত দুই বছরেও হত্যার সময় নিহত মিলন কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া নগদ ১৪ হাজার টাকা ও মোবাইল সেটটি আজও উদ্ধার করতে পারেনি নোয়াখালী ডিবি পুলিশ।

উপরন্ত মিলনের মাকে চার চার বার নোয়াখালী ডিবি অফিসে নিয়ে সাক্ষী প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মিলনের মা কহিনুর বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে মিলনকে কিভাবে নির্মম ও নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা “সময়” টিভির প্রচারিত ভিডিও দৃশ্যতে সারা দেশবাসী দেখেছে এর ছাইতে আর বড় কোন প্রমাণ বা সাক্ষী আমাদের কাছে নেই। অপদিকে, দুই বছর অতিবাহিত হলেও এ মামলার চার্জশিট প্রদান না করায় স্থানীয় সুশিল সমাজ নিহত মিলনের প্রতিবেশীরা ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন। তার আশা করে বলেন, সরকার কিশোর মিলনের প্রকৃত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দেশ এবং সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। যাতে করে কিশোর মিলনেরমত কাউকে এভাবে অকালে প্রাণনা হারাতে না হয়।

এছাড়াও তার এ নির্মম হত্যা কান্ডের সুষ্ঠ বিচার সরকারের কাছে আশা করেন। ২০১১ সালে যে ভাবে হত্যা করা হয়েছিল কিশোর মিলনকেঃ ২০১১ সালের ২৭ জুলাই সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের রহিম মিয়ার টেক এলাকায় ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন, পিচ্চি কালাম, ফারুক ও নিগ্রো হেলাল ও অজ্ঞাত ১জনসহ ৬জন এবং ডাকাতের গুলিতে ব্যবসায়ী মাসুদসহ মোট ৭জন মারা যায়। ২৭ জুলাই গভীর রাত ২টা হতে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৫ ডাকাতকে গণপিটুনীর ঘটনা ঘটলেও গণপিটুনীতে কিশোর সামুছুদ্দিন মিলন (১৬) খুনের ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ১০টা হতে পৌনে ১১টার মধ্যে। সৌদি প্রবাসী পিতার চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় সামছুদ্দিন মিলন ১৬ বছরের টগবগে তরুণটি পছন্দের আপনজন দূর সর্ম্পকের খালাতো বোন চুমকির সাথে চর কাকঁড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা করতে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন এবং ইউপি সদস্যা ফেরদৌস আরা বেগম মায়ার স্বামী নিজাম উদ্দিন মানিকসহ স্থানীয়রা বেদম মারধর করে মিলনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঐদিন চুমকির সাথে দেখা করে নানা বাড়ি জমি রেজিস্ট্রি হবে সেই জন্য পিতার পাঠানো চৌদ্দ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি হতে বের হয়েছিল মিলন।

নগদ টাকা ও দামী মোবাইল সেট হয়তো তার বিপদের কারণ বলে জানিয়েছে মিলনের আত্মীয়রা। পুলিশের পিকআপ ভ্যানে মিলনে তুলে দেওয়ার পরে। আইনের সেবক জনতার রক্ষক পুলিশ মিলনকে থানায় না নিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে টেকের বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে এনে পুলিশ গাড়ি হতে মিলনকে নামিয়ে ডাকাত সাজিয়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার হাতে ছেড়ে দেয়। পরে নিষ্ঠুর জনতা একের পর এক লাথি, কিল, ঘুষির সাথে ইট দিয়ে থেতলে ও লাঠি দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলে কিশোর মিলনকে। পরে কর্তব্যরত দুই পুলিশ সদস্য চুল ধরে টেনে হিচড়েঁ পুলিশ ভ্যানে তুলে নিহত মিলনের মরদেহ থানায় নিয়ে আসে।

২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় আসামীও করা হয় মিলনকে। এ ঘটনায় ৩ আগস্ট ২০১১ মিলনের মা কোহিনুর বেগম ডাকাত সাজিয়ে তার ছেলেকে হত্যা, হত্যাকান্ডে সহযোগিতা এবং হত্যা পরবর্তী ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘটনায় নোয়াখালীর ২নং আমলী আদালতের বিচারিক হাকিম শাহ মোঃ জাকির হোসেনের আদালতে মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে সময় সংবাদে সেই দৃশ্য প্রকাশ হলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে । শনিবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রফিক উল্যাহ,উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম শেখ সহ দুই কনস্টেবল আবদুর রহিম ও হেমারঞ্জন চাকমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পুলিশের তদন্তেই দোষী পুলিশঃ মিলনের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ আগষ্ট কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমাকে বরখাস্ত করেন পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন উর রশিদ হাযারী।

একই সাথে ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রশিদ, সহকারি পুলিশ সুপার আলী হোসেন এবং নোয়াখালীর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিল্লাল হোসেনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন এসপি। ৮ আগষ্ট ২০১১ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয় ঘটনার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক উল্যাহকে। ঐদিন রাতেই তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপারের কাছে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে হত্যাকান্ডে পুলিশের সহায়তার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ওসি রফিক উল্যা, এসআই আক্রাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমা’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ৮ আগষ্ট রাতে আদালতে দায়েরকৃত মামলা কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়।

১০ আগষ্ট ২০১১ ওসি রফিক উল্যাহকে বরখাস্ত করা হয় এবং মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে ডিবি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে, ওসি রফিক উল্যাহর বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে এবং এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনষ্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমা’র বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।