প্রেম কাহিনী
প্রেম সুখের না দুংখের এ নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই বিপরীত লিঙ্গের যে প্রবল আকর্ষণের প্রেম তার সূচনা হয়। কিন্তু এর স্থায়িত্বকাল কার বেলায় কত সময় ব্যাপিয়া তা বলা দূরহ। প্রেমের গড়ন, প্রেমের ভাঙ্গন প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আছে। তাই প্রেমের জলে ডুব দিয়ে এই দু’জনে আছে মজে।
পরেশ গ্রামটাকে মাথায় তুলে নাচাতে পারলে কম করত না। আজ এখানে ফুটবল খেলা, কাল ওখানে ক্রিকেট খেলা, আজ এখানে পিকনিক, কাল ওখানে নাটক এভাবেই তার ব্যস্ত সময়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছে । সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, তাস খেলা এতে আর দ্বিতীয় নাই এই গ্রামে।
পরেশ এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। এরই মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে।
ক্লাসে সে বেশ ভাল ছাত্র। সারাদিন দুষ্টামির ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু পড়া-লেখা করে তাতে তার পরীক্ষার ফলাফল বেশ ভাল হয়। ফলে বাড়ীতে তার উপর শাসানির মাত্রাটাও একটু কম হয়। তাদের পরিবারের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত কেবল তার বাবা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার পর আর পড়তে পারে নাই। সংসারের ঘানি তার উপর অল্প বয়সে চাপাতে অন্যরা শহরে থাকলেও সে গ্রামেই থাকা স্থির করল।
পরেশ ঘরের মেজ ছেলে, তাকে নিয়ে তার বাবার বড় আশা । পড়া-লেখা শিখে ছেলে মস্ত বড় কিছু হবে এ রকম কথা মাঝে মধ্যে পরেশের সামনে উত্থাপন করে। পরেশ ছেলে হিসেবে যত দুষ্টই হোক তার জীবন সম্পর্কে সচেতন। মাধ্যমিক পাস যে ভালভাবে করতে হবে এই বুঝ তার আছে।
পরেশদের বাসা উপজেলা কার্যালয়ের সন্নিকটে।
এই উপজেলায় একটি মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়। তাই পরীক্ষার সময় সকল ইউনিয়নের ছাত্ররাই এখানে আসে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে তারা বাসা ভাড়া করে রাখে। পরেশদের কয়েকটি ঘর আছে ভাড়া দেওয়ার জন্য । প্রতিবার তাদের খালি ঘরগুলো ভাড়া দেয় পরীক্ষার্থীদের নিকট।
এবার তাদের একটি বাসায় অভিবাবকসহ দু’টি মেয়ে এসেছে পরীক্ষা দিতে। একটি মেয়ে দেখতে বেশ সুন্দর। প্রথম দিনই পরেশের নজরে পড়ে যায় মেয়েটি। মেয়েটির নাম পুষ্প।
পরেশ বৈঠকখানায় বসে পড়ে এবং আড় চোখে পুষ্পদের ঘরের দিকে তাকায়।
কিন্তু সহসা পুষ্পের দেখা পায় না। তারা দু’ই বান্ধবীতে ঘরের ভিতরে একই টেবিলে বসে চুপচাপ সারাদিন পড়া-লেখার ব্যস্ত। পরেশ পুষ্পকে দেখার আশায় সারাদিন একটি বই সামনে নিয়ে বসে থাকে ঠিকই কিন্তু এক অক্ষরও মনোযোগ দিয়ে পড়া হয় না। দিনে হয়তবা একবারের বেশী পুস্পকে দেখা যায় না। যা পরেশের পুষ্পকে দেখার আবেগকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
এভাবে আরো দু’দিন কেটে যায়।
আগামীকাল পরীক্ষা শুরু। সকল পরীক্ষার্থীরা কোর্স কমপ্লিট করতে ব্যস্ত। হয়তবা পুস্পদের কোর্স কমপ্লিট হয়ে গেছে তাই বিকাল বেলায় একটু ঘোরতে বের হয়েছে । পরেশ বৈঠকখানায় পড়ছে।
কিন্তু মন যেহেতু পুষ্পের টানে তাই পুষ্প বের হওয়ার সময়ই চোখাচোখি হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি রাখল কিন্তু বইয়ের লেখাতো নয় পুস্পের চেহারার রেশই যেন চোখে লেগে আছে। কিছুক্ষণ পর পরেশ প্যান্ট-শার্ট পড়ে, চুল সুন্দরভাবে আচড়িয়ে পুষ্পের সামনে দিয়ে সাঁই সাঁই করে হেটে গেল।
আজ প্রথম পরীক্ষা। পুষ্প, তানিয়া একটু আগে যাবে তাই সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নিচ্ছে।
পরেশের মার কাছে দোয়া চাইতে গেল পরেশের পাশ কেটে। পরেশ বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।
পুষ্প ও তানিয়া দোয়া নিতে এসেছে দেখে পরেশের মা পরেশকে বলল- “বাবা পরেশ, ওরা দেখি চলে যাচ্ছে, তুমি যাবে না ?”
“যাব মা। আমার অত তাড়া কিসের আমিতো আগেই দেখে এসেছি আমার সিট কোথায় পড়েছে। ”
পুষ্প ও তানিয়া চলে গেল।
পরেশ গোসল, খাওয়া-দাওয়া সেরে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
প্রথম পরীক্ষা বাংলা। বেশ ভালই হলো পরেশের পরীক্ষা। নৈর্র্ব্যত্তিক যা এসেছে তা সবই সে পেরেছে। রচনামূলক পরীক্ষাও বেশ ভালই হয়েছে।
পুষ্প ও তানিয়ার মা এসেছে পরেশের কাছে তাদের নৈর্র্ব্যত্তিক উত্তর সঠিক হয়েছে কিনা তা দাগিয়ে নেওয়ার জন্য। পরেশ সব দেখে বলল- “প্রায়ই হয়েছে। ”
পরের দিন পরীক্ষা নাই। পরীক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার চাপ একটু কম। প্রথম পরীক্ষা দিয়ে সকলেই একটু ক্লান্ত।
পরেশ বাংলা ২য় পত্রের একটি বই নিয়ে বৈঠকখানায় বসে চোখ বুলাচ্ছে। এরই মধ্যে পুষ্প ও তানিয়া হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। হাসির শব্দ পেয়ে পরেশ তাদের দিকে তাকাল। তার একটু পরেই পরেশ প্যান্ট-শার্ট পড়ে বের হলো। যাওয়ার সময় পুষ্প ও তানিয়ার সাথে পরেশের দেখা।
তানিয়া পরেশকে উদ্দেশ্য করে বলল- “আমাদের নৈর্ব্যত্তিক ক’টা হয়েছে দেখেছেন?”
পরেশ এ ধরনের প্রশ্ন প্রত্যাশা করে নাই। তাই কি বলতে কি বলে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল “পঞ্চাশ, ষাটটা হবে হয়ত। ”
“কেন, নৈর্ব্যত্তিক একশ নম্বরের মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে নাকি?”
“না তা নয়, আপনাদের নৈর্ব্যত্তিকের উত্তর ভাল হয়েছে কিনা, তাই বললাম। ”
“তাই বলে পঞ্চাশের মধ্যে পঞ্চাশই পাব নাকি?”
“খুব ভাল হলে নিশ্চয়ই পাবেন। ”
“আপনার নৈর্ব্যত্তিক ক’টা হয়েছে?”
“তা এখন বলা যাবে না।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে সঠিকটা বলা যাবে। ”
“তাহলে আমাদেরটা বলতে পারা কি মিথ্যা নয় ?”
“আমার কাছে জিজ্ঞাসা করা তাহলে কি বোকামী নয় ?”
“পুষ্প এর মাঝে একটি কথাও বলে নাই। কেবল শেষের কথাটায় হেসে দিয়ে দৌড়ে পালালো সখিকে নিয়ে। ”
পরেশ আজ একটু সাহস পেল তাদের সাথে খোলামনে কথা বলার। রাত্রে তাদের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল -“আপনারা বাংলা ২য় পত্রের জন্য কোন কোন রচনাগুলো পড়েছেন।
”
পুষ্পই প্রথম উত্তর দিল- “আমরাতো তেমন ভাল ছাত্রী না তাই রচনার প্রতি তত মনোযোগ নাই। এই, দুই একটি পড়েছি হয়তো। যা এখন মনেও নাই। ”
তানিয়া তার সখীকে থামিয়ে বলল- “আমরা পাঁচ-সাতটা রচনা পড়েছি । সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি সময়ের মূল্য রচনাটি।
”
“এটা খারাপ ছাত্রী, ভাল ছাত্রীর ব্যাপার না। এটা পরীক্ষার ব্যাপার। আর যেহেতু আপনারা সময়ের খুবই মূল্য দেন, সেহেতু আর কথা বলা সাজে না। আমি চললাম। ”
পুষ্প আর তানিয়া জোড়ে হেসে দিল।
পরেশকে আর থামতে দেখা গেল না।
পরেশ মনে মনে বেশ রেগে গেল। এই অপমানের একটি পাল্টা জবাব সে দিবেই। আগামীকাল পরীক্ষা নাই। এই একটি বড় সুযোগ অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার।
পুষ্প, তানিয়া খুব ভোরে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে করতে দক্ষিন পাশের খোলা মাঠটা পর্যন্ত যায়। যাওয়ার পথে উপজেলার তিনতলা একটি রেস্ট হাউজ পড়ে। সেই রেস্ট হাউজের ছাদে উঠা পরেশের জন্য কোন ব্যাপারই না। পরের দিন খুব ভোরে উঠে পরেশ এক জগ পানি নিয়ে তিনতলা ছাদের উপর উঠে গেল। কিছুক্ষণ পরেই দেখল পুষ্প ও তানিয়া দাঁত ব্রাশ করতে করতে এদিকেই আসছে।
যেই রেস্ট হাউজের কাছ দিয়ে যেতে লাগল সেই সময়ই পরেশ তাদের মাথা লক্ষ্য করে উপর থেকে পানি ঢেলে দিল। খুব সকালে এই রকম পানি পড়তে দেখে পুষ্প ও তানিয়া ভয়ে দৌড়ে মাঠের দিকে গেল। উপরের দিকে তাকিয়ে তারা কিছুই আন্দাজ করতে পারলো না। তারা পানিতে ভিজে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করার পর এর কোন হদিস না পেয়ে তারা চলে গেল মাঠের ভিতরে।
পুষ্প ও তানিয়া এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবতারণা করল।
পুষ্প:“এত সকালে মানুষ আসবে কোথা থেকে এ নিশ্চয়ই কোন জ্বিন-পরীর কাজ। যাই বলিস, জায়গাটা কিন্তু ভাল না। আর সকালে এখানে আসা যাবে না। ”
তানিয়া: “আরে এসব কিছু না, আসল ব্যাপারটা হলো কেউ হয়তবা রাত্রের বাসি পানি ফেলেছে তা এসে পড়েছে আমাদের গায়ে।
”
পুষ্প- “তাহলে মানুষের সাড়া পেতাম না?”
তানিয়া- “এত সকালে উঠে মানুষ জোড়ে শব্দ করে নাকি, যে সাড়া পাবি ?”
পুষ্প- “কি জানি, কি করে এ রকম ঘটনা ঘটলো। ”
পরেশ পুষ্পদের কথা বলার মাঝেই বাড়িতে চলে আসে। উঠানে দাড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছে।
পুষ্প, তানিয়া তাড়াতাড়ি হেটে আসতে আসতে পরেশের সামনে এসে হঠাৎ একটু থমকে দাড়াল। পরেশে এমন ভঙ্গিমা করে তাদের দিকে তাকাল যেন এত সকালে তাদের এই অবস্থায় দেখে আশ্চর্য হয়েছে।
তারা ভিজা পোশাকে লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালাল। পরেশ আড়ালে মুচকি হেসে মনের ক্ষোপ জুড়াল।
বিকালে পুষ্প ও তানিয়া হাটতে বের হযেছে। পরেশ তাদেরকে হাটতে বের হতে দেখে নিজেও সেজেগুছে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। পেছনদিক থেকে তানিয়া বলল-
“শুনুন, আপনাদের এখানে কি জ্বিন-পরী আছে ?”
পরেশঃ “আগে ছিল না তবে এখন দু’ একটি অন্য এলাকা থেকে এসে বাড় করেছে।
”
তানিয়াঃ “বলেন কি! এতদিন ছিল না এখন এসেছে কি কারণে?”
পরেশঃ “আগে এ এলাকা মানুষগুলো খারাপ ছিল, তাই আসতো না। এখন এ এলাকার মানুষগুলোর মধ্যে কিছু কিছু মানুষ বেশ ভাল হয়েছে। তাদেরকে নেওয়ার জন্য এসেছে। ”
পুষ্পঃ “শুধু এই এলাকার মানুষই নিবে, অন্য এলাকার মানুষ নিবে না?”
পরেশঃ “যে এলাকার মানুষই হোক তারা সুন্দর মানুষ পেলেই নেয়। ”
পুষ্পঃ “বলেন কি!”
পরেশঃ “তবে আপনাদের ভয় নাই।
কেননা আপনারা সুন্দর না, তাই আপনাদেরকে নিবে না। তাছাড়া আমার জহুরাকে জ্বিনেরা খুব ভয় পায় তাই আমাদের বাড়ির কারো দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না। ”
তানিয়াঃ “তাই যেন হয়। ”
পরেশ কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। পরের দিন বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষাও তার ভাল হলো।
বিকালে পুষ্প একা বের হয়েছে। তানিয়ার ভাল লাগছে না তাই শুয়ে আছে। পুষ্প যে একা বের হয়েছে তা পরেশ টের পেল। পরেশ তাড়াতাড়ি একটি ছোট্র চিরকুটে লিখল -
পুষ্প,
তোমাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। এই সত্য কথাটি জানানোর হয়তবা আর কোন সুযোগ হবে না ভেবে আজই পরীক্ষার শত ব্যস্ততার মাঝেও লিখে জানালাম।
তুমি আমাকে কিভাবে গ্রহণ করবে জানি না, তবে আমাকে সাধারনভাবে গ্রহন করলে আমি তোমার সাথে প্রেম করতে রাজি। বিষয়টি একটু ভেবে দেখবে।
ইতি,
পরেশ।
পরেশ বাসার একটি কাজের মেয়েকে দিয়ে চিরকুটটি তারম কাছে পাঠিয়ে দেয়। চিরকুটটি পড়ে পুষ্প চিন্তিত হয়ে পড়ে।
সেও পরেশকে পছন্দ করে কিন্তু মনের কথা হুট করে জানাতে সংকোচবোধ। এই সুযোগে সে তার মনের কথা জানিয়ে দিবে কিনা এ নিয়ে রাত্রে খুব চিন্তা করল। পরিশেষে এই সিন্ধান্তে আসলো, সেও তার মনের কথা জানিয়ে দিবে। তাই পুষ্পও চিরকুটে লিখে দিল-
পরেশ,
তোমাকে আমার ভাল লাগে, এর বেশী আর লিখতে পারলাম না।
ইতি, পুষ্প।
এ থেকে দু’জনার সাথে প্রেমের অধ্যায়ের শুরু। এ ব্যাপারটা তানিয়ারও জানা হয়ে গেল।
তানিয়া বলল- “বেশ ভালইতো। পরীক্ষা দিতে এসে প্রেমের পরীক্ষাও দিয়ে গেলি। ”
পুষ্পের পরীক্ষা শেষে তাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে পরেশকে বেড়াতে যেতে বলল।
পরেশ কিছুদিন পরেই তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেল। সাথে নিল তার বন্ধু জাহিদকে। পুষ্পদের বাড়িতে যেতে দুপুর হয়ে গেল। দুপুরের খাওয়া- দাওয়া সেরে পরেশ ও তার বন্ধু পুষ্পর সাথে তানিয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। পুষ্প তাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যাওয়ার পথে এক নির্জন জায়গায় পরেশের বন্ধুটিকে বসিয়ে রেখে পরেশ ও পুষ্প একটু দূরে দাড়িয়ে নিজেদের মনের কথা বলছে।
পরেশঃ “অনেক দিন পর আজ তোমার সাথে দেখা। তুমি কেমন আছো?”
পুষ্পঃ “অনেক দিন তোমাকে না দেখে কিভাবে ভাল থাকি বলো ? তবে আজ তোমাকে দেখে খুব ভাল লাগছে। ”
পরেশঃ “তানিয়া ভাল আছে নিশ্চয়ই?”
পুষ্পঃ “হ্যাঁ, ভালই আছে। আচ্ছা পরেশ, আমাদের বাড়ি-ঘর তোমার কেমন লাগলো?”
পরেশঃ “বেশ ভালই।
তোমাদের বাড়ি-ঘর যে রকমই হোক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার দরকার তোমাকে, ব্যস। ”
পুষ্পঃ “আচ্ছা, আমাকে যদি অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়, তা হলে কি করবে ?”
পরেশঃ “কি করব মানে! তোমাকে নিয়ে দূরে কোথায় পালিয়ে যাব। যাবে না তুমি আমার সাথে?”
পুষ্পঃ “যাব ঠিকই কিন্তু তখন তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবে ?”
পরেশঃ “এ কথা কেন ? চুরি করে যখন নিতেই পারবো সে জিনিস হাত ছাড়া করবো কেন?”
পুষ্পঃ “আমার জীবন তোমার জন্য। যাতে ভাল হয় তাই করো।
তবে এমন কোন কাজ করবে না, যাতে আমাদের জীবন নোংড়া হয়ে যায়। ”
পরেশঃ “জীবনের মূল্য দিতে যারা জানে তাদের দলেই যেন থাকতে পারি, এই দোয়া কর । ”
এই কথোপকথনে দু’জনের চোখেই জল আসে।
তারা তানিয়াদের বাড়ি গেল। তানিয়া পরেশকে দেখে বেশ খুশি।
তানিয়াঃ “সখিকে না দেখে বুঝি আর থাকা গেল না?”
পরেশঃ “কি করে থাকি বল, তোমার সখি যে আমার প্রাণের সখি। ”
তানিয়াঃ “দেখে রাখবেন, আমার প্রাণের সখি যেন আবার পরের সখি হয়ে না যায়। ”
পরেশঃ “নিশ্চয়ই, আমার করে রাখবো। ”
পুষ্পঃ “শুধু কথাই বলবি না কিছু খাওয়াবি?”
তানিয়াঃ “কেন, এসব কথা কি নিজেই চুকিয়ে নিয়েছ । ”
পুষ্পঃ “দেখ, কাজ রেখে কেউ কি আর খাওয়ার জন্য এত ব্যস্ত হয়।
ও কাজ আগেই চুকে গেছে। এখন কেবল কবুল বলা। ”
তানিয়াঃ “তলে তলে এতসব। তা ভাই কেবল আমাদের ভাগ্যেই জোটলো না। ” এই কথা বলে তানিয়া বেশ লজ্জা পেল।
পরেশের বন্ধু যে এখানে বসা।
পরেশ ও তার বন্ধু পুষ্পদের বাড়িতে দু’দিন বেড়ালো। বেশ আদর যত্ন পেল।
একদিন পরেশের কাছে খবর এলো পুষ্পের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। শীঘ্রই কেউ বর বেশে তাকে বিয়ে করে তুলে নিয়ে যাবে।
পরেশ একদিন চুপিচুপি কাপড়-চোপড় ঘুচিয়ে পুষ্পকে খবর পাঠাল “অমুক সময় অমুক স্থানে এসো আমি থাকবো। ” পুষ্প ঠিক সময়, ঠিক স্থানে এসে ঠিকই পরেশকে পেল। পরেশ আর পুষ্প সেই যে গেল তাদের আর খুঁজে পাওয়া গেল না। তারপর আর জানি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।