আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিন লাদেনের বুকে প্রথম গুলি করে এক কমান্ডো, অন্য জন মাথায়



রফিকুল ইসলাম :: ওসামা বিন লাদেনের কম্পাউন্ডে অভিযান চালিয়েছিলেন এমন সব মার্কিন কমান্ডো তাদের হেলমেটে বসানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্যামেরার সাহায্যে অভিযানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেছিলেন। এ অভিযানে তিনি নিহত হন। বৃহস্পতিবার সিবিএস নিউজ একথা বলা হয়। খবর এএফপির। সিবিএস জানায়, মার্কিন সির টিমের ২৫ সদস্য ২ মে পাকিস্তানের গ্যারিসন শহর এ্যাবোটাবাদে অবস্থিত ঐ কম্পাউন্ডে অভিযান চালিয়েছিলেন এবং মিনি ক্যামেরা বহন করছিলেন।

৪০ মিনিটের ঐ অভিযানের ছবি দেখেছেন এমন মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, অভিযানকালে কম্পাউন্ডের প্রথম ভবনে বাইরেই কেবল একবার বন্দুক লড়াই হয়। সেই ঘটনায় লাদেনের বার্তা-বাহকরা গুলি ছোড়েন এবং তাদেরই গুলি করে হত্যা করা হয়। সিবিএস একথা জানায়। তারপর কমান্ডোরা তৃতীয় তলার সিঁড়ির কাছে লাদেনকে প্রথম বারের মতো দেখতে যান। তাঁরা গুলি করলে তা লৰ্যভ্রষ্ট হয়।

আল কায়েদা প্রধান তখন পিছনে সরে এসে এক শোবার ঘরে ঢুকে পড়েন। যে কমান্ডো প্রথমে ঘরটিতে ঢোকেন, তিনি লাদেনের সঙ্গে থাকা তাঁর মেয়েদের এক পাশে সরিয়ে দেন। আর দ্বিতীয় কমান্ডো লাদেনের এক স্ত্রীর সামনে পড়েন। কমান্ডো স্ত্রীকে সামনে থেকে সরিয়ে দেন ধাক্কা দিয়ে এবং লাদেনের বুকে এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। তৃতীয় কমান্ডো তারপর লাদেনের মাথায় গুলি করেন।

সিবিএস একথা জানায়। বৃহস্পতিবার জানা যায়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের এসব ছবি এতই বীভৎস যে, এগুলো প্রকাশ করা যায় না বলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মন্তব্য করেন। লাদেনের লেখাগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য মার্কিন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। ওয়াশিংটন পোস্টে বলা হয়, লাদেন বার্তা বাহকের মাধ্যমে আল কায়েদার অল্পসংখ্যক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের মধ্যে ছিলেন নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলে গণ্য আয়মান আল জাওয়াহিরি এবং সংগঠনের আরেক নেতা লিবীয় বংশোদ্ভূত আতিয়া আবদাল রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক কর্মকর্তা ঐ পত্রিকাকে বলেন, লাদেন আফগানিসত্মান ও পাকিসত্মানে হামলা চালানোর ব্যাপারে কম গুরম্নত্ব দিয়েছিলেন বলে মনে হয়। তিনি এমন সব বেশি পছন্দ করতেন, যাতে 'আমেরিকাকে' দুর্বল বলে মনে হয়। প্রোপাবলিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, লাদেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামকি প্রধানদের শীর্ষ টার্গেট বলে বর্ণনা করেন এবং আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার ব্যাপারে কম গুরম্নত্ব দেন। আল কায়েদা প্রধানের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রকাশ আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদের গোপন আসত্মানায় কোন ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। কিন্তু তারপরও লাদেন বিপুলসংখ্যক ই-মেইল আদান-প্রদান করেছেন।

মার্কিন সরকারের অত্যাধুনিক আড়িপাতার ব্যবস্থাকে এড়াতে লাদেন কষ্টসহিষ্ণু বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। খবর ওয়েবসাইট। মার্কিন তদনত্ম দলের গুরম্নত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি এবং সন্ত্রাস বিরোধী অপর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে লাদেনের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি চিত্র তুলে ধরেন। সংবাদ সংস্থাকে তাঁরা বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা সাইবার স্পেসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও লাদেনের কোন ই-মেইল বার্তা পাননি। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

লাদেন পশ্চিমা বিশ্বকে ধোঁকা দিতে সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার না করে বিকল্প পথে নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বার্তা সংস্থাকে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা বিশেস্নষণ সম্পর্কে তথ্য দেন। তাঁরা বলেন, শৃঙ্খলা ও আস্থার ভিত্তিতেই লাদেন তাঁর যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি ই-মেইল যোগাযোগের একটি বিশাল ভা-ার রেখে গেছেন। লাদেনকে হত্যার পর এই ই-মেইল ভা-ার যুক্তরাষ্ট্রের হসত্মগত হয়।

কয়েক হাজার বার্তা ও ই-মেইল ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের হসত্মগত হয়েছে। লাদেনের আসত্মানায় কোন ইন্টারনেট বা ফোনলাইন ছিল না। তিনি ইন্টারনেটবিহীন কম্পিউটার বার্তা লিখতেন। পরে তা পেনড্রাইভে সংরৰণ করতেন। এরপর এটি আস্থাভাজন এক বাহককে দিতেন।

এই বাহক দূরে কোন সাইবার ক্যাফে থেকে বার্তাগুলো পাঠাতেন এবং ফিরতি বার্তা পেন ড্রাইভে করে নিয়ে আসতেন। অপর পৰ থেকে পাঠান এই বার্তা লাদেনের কম্পিউটারে প্রবেশ করান হতো। এরপর লাদেন তা পড়তেন। এই পদ্ধতি যদিও ধীরগতির ও কষ্টকর। লাদেন দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবাক হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সন্দেহ করত লাদেন বার্তা বাহকের মাধ্যমেই যোগাযাগ রৰা করতেন। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁরা মোটেই অবগত ছিলেন না। লাদেনকে হত্যার পর মার্কিন বাহিনী ওই বাড়ি থেকে প্রায় এক শ' পেনড্রাইভ নিয়ে আসে। সেগুলো বিশেস্নষণ করে মার্কিন গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন লাদেন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে যোগাযোগ রৰা করতেন। আল কায়েদা কমর্ীরা ঘন ঘন তাদের ই-মেইল ঠিকানা পরিবর্তন করে থাকে সে কারণে লাদেনের মৃতু্যর পর তাদের কতসংখ্যক সদস্য সক্রিয় রয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

তবে দীর্ঘ ই-মেইল ঠিকানা ও ফোন নম্বরের তালিকা ধরে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের ডেকে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এমন কোন ইঙ্গিত পাননি আমেরিকার গোয়েন্দারা। কিন্তু সন্ত্রাসীরা পদ্ধতিগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রভাইডারদের ব্যবহার করেছে অথবা ফ্রি ই-মেইল সেবা গ্রহণ করেছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।