[ এই লেখাটি আমার লেখা না। যিনি এই লেখার লেখক , তার নাম দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। অন্যের লেখা আমার ব্লগে কেন? আমার নিজের ব্লগ আমার কাছে সন্তানতুল্য। এর প্রতিটি ইঞ্চি আমার নিজস্ব। তবু, তিন বছরের ব্লগিং জীবনে এই প্রথমবারের মতো নিয়মের ব্যতিক্রম করছি, অন্য কারও লেখা নিজের ব্লগে ঢুকিয়ে দিয়েছি ।
এর কারণ পামেল ভাই। আমাদের সহকর্মী, আমাদের বড় ভাই। পামেল ভাই একজন সাংবাদিক। বাইরে থেকে এই পেশাটাকে দারুন মনে হলেও, একজন সাংবাদিক আসলে কতখানি অসহায়, এটা আমার চেয়ে আর ভালো কে জানে?
আসুন, আমরা সবাই মিলে পামেল ভাইয়ের পাশে দাড়াই। ]
দু এক জন বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া প্রেসবক্সে কেউ গোল-টোলের সময়ের হিসেব রাখতেন না।
গোল, ফাউল বা কর্নার হলেই তাই সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠতেন, ‘পামেল ভাই, টাইম কেতো?’ পামেল ভাই গম্ভীর মুখে স্টপওয়াচটা দেখে সময় বলে দিতেন।
বাংলাদেশের তাবৎ ক্রীড়া সাংবাদিককূলকে বছরের বছর এই সময় বলে যাওয়া মানুষটি নাকি এখন সময়ের সংকটে! চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন, আমাদের পামেল ভাইয়ের হাতে নাকি বেশি সময় নেই। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ক্রীড়া-সাংবাদিকতার জগতে ছোট-বড় সবার প্রিয়, পামেল ভাই।
আমি এসব কথায় বিশ্বাস করি না। পামেল ভাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্রিকেট খেলতেন।
পামেল ভাই সারাটা ক্যারিয়ার জুড়ে খেলাধুলা নিয়ে থেকেছেন। এই জীবনের খেলায় এতো সহজে হারার মানুষ পামেল ভাই নন। এই বিশ্বাস থেকেই শুরু করলাম লেখাটা।
পামেল ভাইয়ের ‘ভালো নাম’ আল মুসাব্বির সাদী; আমরা ডাকতাম পামেল ভাই বলে। এই ডাকটাও ভুল ছিল; আসলে তার ডাক নাম ছিল পমেল।
কিন্তু এইসব ভুলভাল নিয়ে পামেল ভাই কোনোদিন রাগ করতেন না।
রাগ করবেন কি করে? পামেল ভাইয়ের জগত তো আর আমাদের এই জগত নয়! পামেল ভাই ফুটবল দেখতেন, ফুটবল লিখতেন, ফুটবল আরাধনা করতেন। পামেলভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ওই ফুটবল লেখা থেকেই।
তখন পামেল ভাই ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক। ইংরেজী পত্রিকায় ভারী ভারী লেখা লেখেন; আমরা অবাক হয়ে পড়ি।
আমি যখন প্রথম আলোতে কাজ শুরু করলাম, তখন পামেল ভাইয়ের একটা ধারাবাহিক ছাপা হত প্রথম আলোর ‘স্টেডিয়াম’ পাতায়; ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে।
পামেল ভাইয়ের যে লেখাটা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল, সেটা ছিল বার্সেলোনার খামার বাড়ি নিয়ে। বার্সার এই কনসেপ্ট নিয়ে চমৎকার একটা লেখা লিখেছিলেন স্টেডিয়ামে।
ততোদিনে পামেল ভাইয়ের সঙ্গে অসমবয়সী একটা প্রায়-বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ফুটবল প্রেসবক্সে চেষ্টা করি তার পাশের চেয়ারটায় বসতে।
অবশ্য রায়হান ভাই কিছুতেই চেয়ারটা ছাড়তেন না! আমরা একসারি পেছনে বসে পামেল ভাই, রায়হান ভাই; কোনো কোনো দিন দিলু ভাইয়ের (দিলু খন্দকার) স্মৃতিচারণ শুনতাম।
আমার কী পরম সৌভাগ্য! পামেল ভাই এক এক দিন বলতেন, ‘গাড়ীয আটকা থেকে আর ভালো লাগে না। চলেন দেবু আপনার মটর সাইকেলের পেছনে করে অফিসে যাই। ’ অমন একদিন আসতে গিয়ে দু জনে মরতে বসেছিলাম মিন্টো রোডে।
পামেল ভাইয়ের সঙ্গে এই যোগাযোগটা একটু কমে গিয়েছিল।
আমি মাঝে স্পোর্টস ছেড়ে দিলাম, ফেরারও পরও ফুটবলে খুব যেতাম না। পামেল ভাই ততোদিনে ডেইলি স্টার ছেড়ে ফুটবল ফেডারেশনে যোগ দিয়েছেন; সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।
শুনি পামেল ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই মিলে অনেক নতুন নতুন কাজ করছেন। কি সেগুলো, কাছ থেকে ঠিক দেখা হয়ে উঠত না। তারপর একদিন গেলাম।
এই প্রথম আলো ছাড়ার দু দিন আগে; পত্রিকা বদলের কথাই বলতে গিয়েছিলাম।
পামেল ভাইয়ের রুমে বসে কথা হচ্ছে। পামেল ভাই, হঠাৎ বললেন, ‘জানেন দেবু, একটা বিরাট মিস হয়ে গেল’
‘কি, পামেল ভাই?’
‘আমি সেদিন মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এলাম। কাতারে চার ঘন্টা ট্রানজিট ছিল। জানেন, সেই সময় কাতারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ চলছিল।
একটু চেষ্টা করলেই খেলাটা দেখা যেত। ’
পামেল ভাই ব্রাজিলের বিরাট ভক্ত ছিলেন। এই নিয়ে আমার একটু মন খারাপও ছিল, এতো পছন্দ করি মানুষটাকে, আর তিনি কিনা ব্রাজিল! আমাকে দেখলে পরের দিকে ফিস ফিস করে বলতেন, ‘শোনেন, ব্রাজিলের ফুটবলের ভক্ত আমি, ব্রাজিল দেশটার নই। ব্রাজিলের ওই সুন্দর ফুটবল যে খেলবে, তাকে ভালো বলবো। এখন মেসি খেলে, তাকে ভালো বলি।
মন খারাপ করবেন না। ’
এমন সুন্দর ফুটবলের পাগল ভক্ত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মিস করে আফসোস করবেন, এই তো স্বাভাবিক। আমিও সুর মেলালাম, তাই তো!
নিজেই স্বান্তনা দিয়ে বললেন, ‘আফসোস করি না। এই ম্যাচ দেখতে না পারলেও ব্রাজিল বিশ্বকাপ দেখব। ’
আমি বলেছিলাম, ‘তা তো পারবেনই।
ফিফাই আপনাদের ব্যবস্থা করবে। ’
পামেল ভাই শিউরে উঠে বলেছিলেন, ‘আরে নাহ পাগল। আমি ব্রাজিল বিশ্বকাপে যাবো সাংবাদিক হিসেবে। ’
‘মানে! আবার সাংবাদিকতায় ফিরবেন?’
‘অবশ্যই ফিরবো। যে পত্রিকা নিতে চাইবে, আমি শুধু শর্ত দেব, ব্রাজিল বিশ্বকাপ কাভার করতে দিতে হবে।
জীবনের এটাই একমাত্র চাওয়া। ’
আহ.....।
সেই পামেল ভাই নাকি এখন সময়ের সংকটে আছেন! ক্যান্সারটা তৈরি হয়েছিল পাকস্থলীতে। নানা জায়গায় এখন ছড়িয়ে পড়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকা; চিকিৎসা চলছে।
পামেল ভাইয়ের পরিবারের সামর্থ একেবারে কম ছিল না।
কিন্তু সর্বগ্রাসী এই রোগের কাছে হার মানতে বসেছে স্বচ্ছল পরিবারটিও। তাহলে পামেল ভাইয়ের ব্রাজিল বিশ্বকাপ দেখা হবে না!!!!
নাহ, চোখের জল আর ফেলবো না। ডাক্তাররা যে যাই বলুক, আমি বিশ্বাস করি, পামেল ভাই আমারসাংবাদিকতায় ফিরবেন। পামেল ভাই ব্রাজিলে যাবেন।
এই বিশ্বাস শুধু আমার একার নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রীড়া সাংবাদিক এই বিশ্বাস নিয়ে পামেল ভাইয়ের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন আকাশ ছোয়া হলেও সাধ যে সীমিত ভাই। তাই আমাদের এই ভাইয়ের জন্য, এক বন্ধুর জন্য সবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম।
আপনিও আমাদের পামেল ভাইয়ের পাশে এসে দাড়ান, প্লিজ।
পামেল ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য গঠিত চিকিৎসা-সহায়তা তহবিল:
সাউথ ইস্ট ব্যাংক, করপোরেট শাখায়, যেটির সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর
০০৩১-১২১-০০০৮১৩৫২।
মানুষের সম্মিলিত প্রার্থনার চেয়ে বড় শক্তি নাকি আর নেই। আমাদের ভাইটার জন্য প্রার্থনা অন্তত করবেন।
মুল লেখা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।