যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
মোটামোটি দীর্ঘকায় বলা যায় লোকটিকে। মাথার চুল উষ্কখুষ্ক,মুখে খোচাঁ খোচাঁ দাড়ি,চোখে উদাস দৃষ্টি, হাতে কয়েকটি ফুল। ধুতরা ফুল।
লোকটির চোখের দিকে তাকিয়েই মনে হল কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।
জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে, আপনার নামটা?
-আমি হিমু। ভাল নাম হিমালয়। তবে মহাপুরুষ হিমু নামেই আমি বেশী পরিচিত।
আমি আশ্চর্য হলাম।
এই কি সেই হিমু!অতিরিক্ত উত্তেজনায় আবার জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সেই হিমু?যার হাতে নীলপদ্ম?
হিমু বলে পরিচয় দেয়া লোকটি অত্যন্ত মোলায়েম ভঙ্গিতে হেসে বলল, জ্বি। আমি সেই হিমু। ভাইজানের কোন সমস্যা?
--জি না। তবে আপনি কেমন আছেন?
হিমু উদাস ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। যার অর্থ মনে হয় “আমি ভাল আছি”।
আর কোন কথা বলল না। মনে হল সে কিছুটা চিন্তিত। হাতের ফুলগুলো নাড়াচাড়া করছে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার হাতে ধুতরা ফুল কেন?
ধুতরা ফুল খাব। আঙ্গুল কাটা জগলুর কাছে শোনেছি জব্বর টেস্ট। হাজার বছর ধরে উপন্যাসে পড়েছিলাম বুড়ো ছমিরন বিবি গুনে গুনে তিনটা ধুতরা ফুল খেয়ে মরে যান।
বিষয় দুইটা মিলতেছে না। তাই নিজে খাইয়াই পরীক্ষা করব ঠিক করছি। বাকী আল্লা ভরশা। হিমু নামের লোকটা চিন্তিত মুখে জবাব দেয়।
মারাত্বক শ্রেনীর কথাবার্তা শোনছিলাম এমন সময় দেখলাম চা ওয়ালা চা দিচ্ছে।
হিমু সাহেব চা হাতে নিয়ে কয়েকটা ফু দিয়ে চুমুক দিয়ে আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। আমি ও চা য়ে কয়েকটা চুমুক দিলাম।
চায়ে চুমুক দিয়ে হিমু বলে পরিচয় দেয়া লোকটা বলল, ধুতরা ফুল নিয়া একটা থিওরী আবিষ্কার করেছি। বড়ই বিচিত্র!
আমি উৎসাহিত হয়ে ধুতরা ফুল থিওরী জানতে চাইলাম। হিমু তখন গম্ভীর হয়ে জবাব দিল, প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই পাচঁটা ধুতরা ফুল থাকে।
সে কাউকে ঘৃনা করলে এই ফুলগুলো তাকে দিয়ে দেয়। প্রথম মাত্রার ঘৃনা করলে একটা পঞ্চম মাত্রার ঘৃনা করলে পাচঁটা।
হিমুর থিওরী শোনে আশ্চর্য হলাম। পুরাই অসাধারন।
একটু পর হিমু বলল, এর থেকে আরেকটা সুত্র ও বের করা যায়।
যার মনে যত ধুতরা ফুল সে তত খারাপ। অর্থাৎ তাকে বেশী মানুষ ঘৃনা করে।
এই অসাধারন থিওরী শোনে উচচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম, হিমু ভাই, পনি তো বিখ্যাত হয়ে যাবেন? ফাটাফাটি থিওরী!
তৎক্ষণাত হিমুর মুখ কাল হয়ে গেল। সে বলল, আমার বাবা ডায়রী তে লিখে গেছেন, “বাবা হিমালয়, জগতে মাঝে মাঝে হয়ত তুমি মহান কিছু আবিষ্কার করিয়া ফেলতে পার। আমি তোমার মধ্যে আবিষ্কারকের ছায়া দেখিতে পাইতেছি।
কিন্তু কখনই আবিষ্কারের মাধ্যমে বিখ্যাত হইবার চেষ্টা করিও না। মনে রাখিবে তুমি সাধক। মহপুরুষ হওয়াই তোমার লক্ষ্য। জগতের যাবতীয় লোভ,খ্যাতি,যশ, মোহের উর্ধ্বে তুমি। তুমি মায়ামুক্ত, অতিমায় একজন।
“
হিমু সুন্দর করে আবৃতি করছিল। আমি স্তব্ধ হয়ে শোনছিলাম। এবার নিশ্চিত বিশ্বাস হল আমার সামনে সত্যিকারের হিমু বসে আছে। কয়দিন ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা অনুভব করছিলাম। যাকে জিজ্ঞেস করি সেই বলে এই দেশ দিয়ে কিছু হবে না।
মহাপুরুষ হিমু কে পেয়ে তাই জিজ্ঞেস করলাম, হিমু ভাই, আপনি তো মহাপুরুষ, আমাদের দেশে কিভাবে শান্তি শৃংখলা উন্নতি আসবে একটু যদি বলতেন?
হিমু গম্ভীর হয়ে(বইয়ের হিমু গম্ভীর না হলেও এই হিমু বেশ গম্ভীর) বলল, সব প্রকৃতির ইচ্ছা। শহীদ জিয়ার ভাঙ্গা স্যুটকেস আর বঙ্গবন্ধুর সাত ই মার্চের ভাষণ থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।
হিমু কে আবার প্রশ্ন করতে হল, আচ্ছা বলেন তো ভাই আমাদের দুই নেত্রী একে অপরকে কয়টা করে ধুতরা ফুল দিয়েছেন?
হিমু মিনিট পাচেক চোখ বন্ধ করে রইল। তারপর চোখ খোলা বলল, একজন দিছেন দুই হাজার তিনশ বারোটা, আরেকজন তিন হাজার এক টা।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম আপনি না বললেন পাচঁটা থাকে?
হিমু হেসে জবাব দিল,উনারা হাইক্লাসের মানুষ।
উনাদের অন্তরে ধুতরা ফুল বেশী। কত শত মানুষ উনাদের প্রতিদিন ধুতরা ফুল দিচ্ছে। উনাদের অন্তর ধুওরা ফুলে পূর্ন।
এ পর্যন্ত বলে হিমু দ্রুত চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগল। তার চা খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে চা খাওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু আর নেই।
চা খাওয়া শেষ হতেই একটা আজব জিনিস লক্ষ্য করলাম। হিমুর অনবরত হেচকি উঠছে।
কি হল ভাই? কি হয়েছে?
হিমু কাতরস্বরে বলল, ,ভাই চায়ে বিষ ছিল। হেমলক পাতার রস। সক্রেটিসকে যেমন মারা হয়েছিল আমাকেও মারা হচ্ছে।
কারণ আমিও আভিজাতদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি।
আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, চলেন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আপনি মরে গেলে হিমুনীতি কে প্রচার করবে!
হিমু আমার দিকে উদাস ভঙিতে তাকিয়ে বলল, ভাই আমি যাই। মহাপুরুষদের হাসপাতালে যেতে নেই। আমি মিসির আলি না য কয়দিন পর পর হাসপাতালে যাব।
কাপতে কাপতে হিমু উঠে দাড়াল। আমার দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ হাসি হেসে অন্ধকারের দিকে হেটে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম। ঘোর ভাঙল চায়ের দোকানদারের কথায়, কি দেখেন মিয়াভাই?
আমি চাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বললাম, কিছু না। এই লোকটিকে চেন?
চাওয়ালা বিরক্তির ভাব করে বলল, হ।
এক সপ্তাহ আগে পাবনা থেইক্যা আসছে। গাঞ্জা খায় আর পথে পথে ঘুরায়।
হেমলক বৃক্ষ
অনেকদিন আগে হুদাই লেখছিলাম এইটা। পোস্ট করার কিছু নাই তাই পোস্টাইলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।