আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলডিসিকে দারিদ্র্যমুক্ত হতে সহায়তা দিন ---- উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি শেখ হাসিনা



ইসলাম রফিকুল---- (০৯/০৫/২০১১ ,দুপুর ১-০৪ মি: )---- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) দারিদ্র্যমুক্ত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি তাদের সহায়তা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এলডিসি দেশগুলোকেও নিজস্ব প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের লুতফি কিরদার কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টারে এলডিসি গ্রুপের শীর্ষ বৈঠকে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসিদের অবশ্যই তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনায় অবশ্যই এলডিসি ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করার দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের সভাপতি জোসেফ দেইস (সুইজারল্যান্ড) এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। উপস্থিত ছিলেন এলডিসিভুক্ত ৪৮ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে উন্নয়নে সহযোগীদের প্রতি এলডিসিকে দেওয়া তাদের সহায়তার অঙ্গীকারগুলো সময়মত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাদের প্রতি বিশ্বের দক্ষিণ এশিয়ার সুবিধাবঞ্চিত কোটি কোটি মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এলডিসিকে দেওয়া সহায়তার অঙ্গীকার নবায়ন এবং সম্প্রসারণও করতে হবে।

একই সঙ্গে তিনি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য উদীয়মান উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকা ের সামর্থ্য বাড়লে তা উন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান আরও বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 'বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-অষ্টমাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বাস করে' উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ইস্তাম্বুল সম্মেলন এ জনসংখ্যাকে উৎপাদন ও মর্যাদাশীল মানবসম্পদে পরিণত করার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি মানুষের মর্যাদার বিকাশ, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও সবার জন্য সমান সুযোগের এক বিশ্ব গড়ার অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতাসহ ভঙ্গুর অর্থনীতি, সম্পদ সৃষ্টিসহ প্রযুক্তি ও যোগাযোগের অপ্রতুলতা, বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ অংশগ্রহণের অভাব এবং বহির্চাপের ঝুঁকি এলডিসিকে আজ অনিরাপদ করে তুলেছে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলো এমডিজির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে তুলনা করার মতো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এটা জানা আছে যে উন্নয়ন তাদের নিজের দায়িত্ব। তবে আমাদের সহযোগীদেরও এটা স্বীকার করতে হবে যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যায্য আচরণ অনেকাংশে দায়ী। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বৈশ্বিক অন্যায্যতা, পণ্যমূল্য, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি, বিদেশি বিনিয়োগের স্বল্পতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে কেবল বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানবজাতির শান্তি, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে উন্নয়ন অংশীদারদের সুস্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে_ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রাসেলস কর্মপরিকল্পনার অঙ্গীকার পূরণ করা হলে আরও অনেক অগ্রগতি সাধিত হতো। তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, অনেক উন্নয়ন অংশীদার আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, অনেকে এগিয়েই আসেনি। তারা অতিরিক্ত অঙ্গীকারের ব্যর্থতার জন্য সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মন্দার কথা তুলে ধরেছেন। এই মন্দা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দারিদ্র্য নিরসন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও এমডিজি অর্জনের প্রয়াসকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস হচ্ছে উন্নত দেশগুলো।

পক্ষান্তরে এতে অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ওডিএ হ্রাস, বিনিয়োগ, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রয়োজনের কেন্দ্রে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এতে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশও ধ্বংস হবে।

অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশ একই পরিস্থিতির শিকার হবে এবং এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরিত মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য ইউএনএফসিসি প্রটোকলে নতুন ধারা সংযোজনের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া আরও ৭টি অভিন্ন বিষয় ইস্তাম্বুল সম্মেলনের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এগুলো হচ্ছে_ উন্নত দেশগুলোতে স্বল্পোন্নতদের পণ্যের অধিক ও কার্যকর প্রবেশাধিকার, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওডিএর ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করবে। ব্রাসেলসে দেওয়া অঙ্গীকারের প্রতি উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মান প্রদর্শন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি।

অধিক ঋণগ্রস্ত গরিব দেশগুলোসহ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ভিত্তিতে ঋণমুক্তির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। নতুন ও নবায়নযোগ্যসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে স্থিতিশীল, মূল্য সাশ্রয়ী, বহুমুখী, পরিচ্ছন্ন ও পর্যাপ্ত জ্বালানির ব্যবস্থা করা। সাশ্রয়ী মূল্যে যথোপযুক্ত প্রযুক্তির সহজ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা। ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনার আওতায় প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হারের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা। শ্রমিকের অবাধ যাতায়াত এবং শ্রমিকদের অবাধ প্রবেশে একে অপরের জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে যথাসম্ভব বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করা।

অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইস্তাম্বুলে দুটি ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঐতিহাসিক তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘর এবং সুলতানামেত কামিল (নীল) মসজিদ পরিদর্শন করেন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোসংক্রান্ত চতুর্থ জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে তিনি এখন ঐতিহাসিক এ নগরীতে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জাদুঘরে পেঁৗছলে এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইলবার ওরতালি এবং অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা তাদের স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

প্রায় চারশ' বছর এটি অটোমান শাসকদের মূল প্রাসাদ ছিল। পরিচালক প্রধানমন্ত্রীকে জাদুঘর সম্পর্কে অবহিত করেন। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। এখানে ঘড়ি, তলোয়ার ও মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) পদচিহ্নের মতো মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্মারক রয়েছে।

সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের নির্দেশে ১৪৫৯ সালে জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রাসাদটি অটোমান স্থাপত্যের নিদর্শনে পূর্ণ। এছাড়া শাসকদের ধনরত্নসহ এখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বর্ম, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, পাণ্ডুলিপি ও প্রাচীরচিত্র সংরক্ষিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরে নীল মসজিদ নামে পরিচিত সুলতান আহমেদ মসজিদ পরিদর্শন করেন। আধুনিক বিশ্বে এটি অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় স্থান।

সুলতান (প্রথম) আহমদের শাসনামলে ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে এটি নির্মিত হয়। দুটি ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস (অব.) এ কে খোন্দকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মমিন, রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ জুলফিকার রহমান, মুখ্য সচিব এমএ করিম ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।