আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালিগুলাঃ এক উন্মাদ সম্রাটের কাহিনী

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

কালিগুলাঃ এক উন্মাদ সম্রাটের কাহিনী ----------------------------- ডঃ রমিত আজাদ ক্ষমতা যে একটি রক্ত-মাংসের মরণশীল মানুষকে কতটা উন্মাদ করে তুলতে পারে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ রোম সম্রাট কালিগুলা। এই উন্মাদ সম্রাটের পুরো নাম জুলিয়াস সিজার অগাস্টাস গেরমানিকাস ডাক নাম Gaius। জন্ম ৩১ আগস্ট ১২ খ্রিস্টাব্দ। খুব বেশী বছর বাঁচার সৌভাগ্য হয়নাই তার, মাত্র ২৯ বছর বয়সে ৪১ খ্রিস্টাব্দ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর পিতা গেরমানিকাস (Germanicus) ছিলেন রোম সম্রাট তীবেরী (Tiberius )-র ভাগ্নে ও পালিত পুত্র।

গেরমানিকাস ছিলেন একজন সফল জেনারেল ও রোমের জনগণের কাছে একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব। কালিগুলা শব্দের অর্থ 'ছোট সৈনিকের বুট'। পিতার সাথে একটি যুদ্ধে সঙ্গ দিয়ে এই নাম তিনি অর্জন করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে কালিগুলার বয়স যখন মাত্র সাত বছর তখন তার পিতা গেরমানিকাস মারা যায়। সেসময় তিনি সস্ত্রীক বসবাস করছিলেন বর্তমান তুরস্কের এন্টিওক (আন্তাকিয়া) নামক নগরীতে।

কালিগুলার মাতা এসময় ছয় সন্তান নিয়ে রোমে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি তৎকালীন সম্রাট তীবেরীর সাথে ক্রমবর্ধমান তিক্ত শত্রুতায় জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তার পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুবরণ করতে থাকে। সম্ভবত শৈশবের এই ভয়াবহ দিনগুলো কালিগুলার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে। ৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মার্চ সম্রাট তীবেরীর মৃত্যু হয়।

যদিও তীবেরী তখন ৭৮ বয়স্ক বছরের বৃদ্ধ ছিলো, তারপরেও কোন কোন ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, তীবেরীকে হত্যা করা হয়েছিলো। প্রায়োটরিয়ান প্রিফেক্ট ম্যাক্রো বালিশ চাপা দিয়ে তীবেরীকে হত্যা করে। আবার অনেকে মনে করে কালিগুলা নিজেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো। যাহোক এই হত্যাকান্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিলো তীবেরীকে হটিয়ে কালিগুলাকে ক্ষমতার আসনে বসানো। ঘটনার বারো দিন পরে, অর্থাৎ ২৮শে মার্চ কালিগুলা সিনেটের অনুমোদনক্রমে রোমের সম্রাটের দায়িত্বভার গ্রহন করে।

কালিগুলাকে সম্রাটের আসনে পেয়ে রোমের জনগণ উল্লসিত হয়ে ওঠে। কারণ কালিগুলা ছিলো তাদের প্রিয় গেরমানিকাসের পুত্র। কালিগুলার মধ্যে তারা গেরমানিকাসের ছায়া দেখতে চেয়েছিলো। তাই অভিষেক অনুষ্ঠানের সময় জনতা মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনী দিচ্ছিলো, 'আমাদের সন্তান', 'আমাদের তারকা'। ক্ষমতা মানুষকে বদলে দেয় বলে একটা কথা প্রচলিত আছে।

কালিগুলার ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো। জনগণের আশা-আকাঙ্খার কোন পূরণই তিনি করলেন না আবার পিতার নামও ডুবালেন। তিনি তার শাসনের প্রথম ছয় মাস সময় একটি উন্নতচরিত্র এবং সহনীয় শাসক হিসেবে কাজ করলেও তারপর বেরিয়ে এলো তার আসল চেহারা। ঔদ্ধত্য, যৌন বিকৃতি, নিষ্ঠুরতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিলাসিতা, কথায় কথায় মুন্ডুচ্ছেদ, সম্মানী ব্যাক্তিদের অবমাননা ও তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ, কোন অপকর্মটি যে করেনি এই উন্মাদ সম্রাট সেটা খুঁজে বের করাই মুশকিল হবে। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করে যখন কালিগুলা তার ঘনিস্ট ব্যক্তিদেরকেই হত্যা করতে শুরু করে।

যাকেই সে তার ক্ষমতার জন্য থ্রেট মনে করতো তারই মুন্ডুচ্ছেদ করতো। এমনকি সে তার কাজিন গেমেলাসকেও হত্যা করে। কালিগুলার এহেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডে যেমন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জনগণ তেমনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অভিজাতদেরই একাংশ। কিন্তু সেই সময় বাক স্বাধীনতা বলে কিছু ছিলনা বলে অসন্তোষ প্রকাশের কোন সুযোগ সাধারণ মানুষের ছিলনা। তাদের ক্রোধের ঢেউ কেবল বুকের ভিতরে ফুঁসে উঠে বুকের ভিতরেই আছড়ে পরতো।

কিন্তু অভিজাতরা এদিক থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলো। এই অসন্তোষের ফলস্বরূপ সেনাপতিবৃন্দ, সিনেট ও আদালত সদস্যরা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলো সেনা অফিসার ক্যাসিয়াস কায়েরিয়া (Cassius Chaerea)। কায়েরিয়া সহ পরিকল্পনার তিনজন মূল হোতা থাকলেও, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলো ও তার সাথে জড়িত ছিলো। অবশেষে ৪১ সালের ২২শে জানুয়ারী অভ্যুত্থানকারীরা কালিগুলার দিকে এগিয়ে যায় এবং উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করে।

প্রথম ছুরিকাঘাতটি করেছিলো ক্যাসিয়াস কায়েরিয়া। এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি বিকৃত রুচি, নিষ্ঠুর, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী উন্মাদ সম্রাটের। (ইতিহাস থেকে কেউ কেউ শিক্ষা গ্রহন করে, কেউ কেউ শিক্ষা গ্রহন করেনা। যারা শিক্ষা গ্রহন করেনা তাদের পরিণতি পূর্বতনদের মতোই হয়। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.