অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত রাজনীতিই মানব সভ্যতা ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। কিন্তু এই রাজনীতিই কখনই সম্পূর্ণ ভাবে মানুষের কথা বলেনি। রাজা-রানিদের কাল তো ছিল প্রকাশ্য স্বৈরতন্ত্রের যুগ। রাজার কথাই ছিল আইন,ফলে রাজাদের রাজনীতি গণমুখী হবার কোন সুযোগ ছিল না। ইতিহাসে কিছু জনহিতৈষী রাজাদের কথা পাওয়া গেলেও তা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জায়গা করে নিয়েছে গণতন্ত্র। কিন্তু ভয়ঙ্কর কথা হল এই গণতন্ত্রই গণ-মানুষের কথা বলে না। গণতন্ত্রের রাজনীতিতে আজও উপেক্ষিত মানুষের ইচ্ছা আর অধিকার।
গণতন্ত্রের রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসাই দলগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য। ক্ষমতায় আসার জন্য তারা ধারণ করে নানা আদর্শ আর তত্ত্ব।
এসব আদর্শ আর তত্ত্ব গুলো কি মানুষের পছন্দের কিনা তা কখনও যাচাই করে দেখে না। আবার কোন কোন দলের সত্যিকার আদর্শ বলে কিছু নেই। এমন আদর্শের কথা বলে যার অনুসরণ নিজেরাই করে না। যেমন কিছু দল ধর্ম নিরপেক্ষতাকে তাদের আদর্শ হিসাবে প্রচার করে। অথচ এই ধর্ম নিরপেক্ষতাকে এ দেশের মানুষ কখনই তাদের আদর্শ হিসাবে মেনে নেই নি।
দেখা যায় নির্বাচনে জেতার জন্য এসব দল ধর্মকে ব্যবহার করে। মূলত দল গুলো নির্বাচনে জিতাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। জনগণের ইচ্ছার কোন দাম নেই। ভোটে জিতার জন্য কথার ফুলঝুরি দিয়ে মানুষের মনকে ভুলায়। এখন রাজনীতি মানেই ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি।
জনগণ যত বেশি ঘুমিয়ে থাকবে গণতন্ত্র-পন্থীদের তত বেশি লাভ। তাই দেখা যায় আমাদের মত তৃতীয়বিশ্বের দেশ গুলোতে সরকার কখনই জনগণকে সব জানতে দেয় না কিংবা শিক্ষিত হতে দেয় না। কারণ শিক্ষিত হলেই জনগণ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। সাথে সাথে রাজনীতিকে এমন একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে ফেলে দেয় যাতে কোন ভাল নেতৃত্ব গড়ে না উঠে।
আমরা চাই গণমুখী রাজনীতি।
জনগণের আশা আর ইচ্ছা নির্ভর রাজনীতি। চাপিয়ে দেয়া রাজনীতি নয় বরং জনগণের পছন্দের আদর্শই হবে রাজনীতির আদর্শ।
এমন রাজনীতি যা মানুষের কথা বলবে, জাতি ও দেশের মঙ্গলের লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল স্বাধীনতার আগে এরকম রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক দল থাকলেও স্বাধীনতার পর সব যেন হাওয়া হয়ে গেল। কতগুলো বাতিল আদর্শকে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হল কিংবা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হল।
তারপর এক সময় প্রতিষ্ঠা পেল গণতন্ত্র। কিন্তু তা শুধু শাসক পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে থাকল। বাংলার মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হল না।
গণতান্ত্রিক দল গুলোর মধ্যে নেই গণতন্ত্রের চর্চা। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি, বংশানুক্রমিক নেতৃত্ব, দুর্নীতিবাজ আর সন্ত্রাসীদের অভয় আশ্রম হয়ে উঠেছে দল গুলো।
এরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতিকে করেছে কলুষিত।
আমাদের দেশ আজ বেকারত্ব, দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি আর সন্ত্রাসের কবলে। ন্যায় বিচার আজ সুদূর পরাহত।
জনগণের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। শিক্ষাব্যবস্থায় চরম অচলাবস্থা।
সরকার গুলো এসব সমস্যা সমাধানে কি করেছে? দলগুলো নির্বাচনে জেতার জন্য মাঝে মাঝে লোক দেখান কিছু করে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে সরকারগুলো ধারাবাহিক কিছু কি করেছে কখনও? এক সরকার এসে আগের সরকারের উপর সব দোষ চাপায়, কিন্তু তারা কি করল তা কি খতিয়ে দেখে? যা করে তার চেয়ে বেশি বকে। আর বিরোধীদল সরকারের সব কাজেই বিরোধিতা করে। জনগণের সমস্যা সমাধানে কোন ঐক্যে এরা পৌছাতে পেরেছে কি কখনও? না পারেনি।
মূলত গণবিমূখী এসব দলের আদর্শ একটাই তা হল, ক্ষমতায় যাও আর তা ব্যবহার কর।
রাজনীতি তাদের কাছে অর্থ উপার্জনের এক শটকার্ট রাস্তা। মানুষের কোন আস্থা নেই এসব গণবিমূখী দলগুলোর উপর। শুধু বিকল্পের অভাব।
বিকল্প গণমূখী রাজনৈতিক আদর্শ আর গণমূখী রাজনৈতিক দল এখন এদেশের জন্য অত্যাবশকীয়। এমন দল যার আদর্শ নির্ভর করবে এদেশের মানুষের মতের উপর, যা হবে গণমানুষের দল, যারা রাজনীতির নামে কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসবে না।
আসুন বিকল্প গণমূখী রাজনৈতিক আদর্শ আর গণমূখী রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হই।
“আমাদের দাবী- ন্যায অধিকার, ন্যায় বিচার, উন্নায়ন”।
Facebook Page
আমার আগের লেখা গুলোঃ
২. বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি – সময়ের দাবি।
১.গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি চাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।