আমি খুবই সাধারণ
ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান (complete code of life)। ইসলামের উত্স কুরআন ও হাদীসকে যতদিন মুসলিমরা আকঁড়ে ধরেছে , ততদিন তাদের মর্যাদা পৃথিবীর বুকে উজ্জল ছিলো। কুরআন ও হাদীসকে ভুলার সাথে সাথে তাদের মর্যাদা ও দাপটও হারিয়ে যেতে বসেছে। আজ তাদের মর্যাদা ভুলন্ঠিত। সেখানে ইহুদী নাসারা,খ্রিস্টানরা এগিয়ে এসেছে।
তাদের দাপটে আজ ইসলাম হারিয়ে যাওয়ার পথে। বর্তমানে কুরআন ও সহীহ হাদীসকে ছেড়ে দেয়ায় তারা আজ অত্যাচারিত, অবহেলিত। অথচ পাশ্চাত্যের এই জ্ঞান বিজ্ঞানের এই রূপের পিছনে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান। কিন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা মুসলিম হিসেব দাবী করলেও মুসলিম বিজ্ঞানীদের পরিচয় জানি না। বীজগণিতের জনক আল-খোয়ারিজমী, রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়্যান,চিকিত্সা বিজ্ঞানের জনক ইবনে সীনা’র নাম আমরা ভুলতে বসেছি।
অথচ জ্ঞান চর্চ্চায় ইসলামের মতো উত্সাহ আর কোন ধর্মই দেয় নি। কুরআনের ৩৬নম্বর সূরা ইয়াসিনের ২নং আয়াতে প্রজ্ঞাময় কুরআনের কম খাওয়া হয়েছে। এছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে কুরআনের কথা নিয়ে চিন্তা করার ও গবেষণা, এমনকি সত্যতার যাচাই করা হয়েছে। ইসলামে বিভিন্ন জায়গা সফর করে আল্লাহর নিদর্শন দেখার ও তা নিয়ে চিন্তা করার নির্দেশ এসেছে।
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ [٩٦:
অর্থ: পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
এছাড়া আল্লাহ তাআলা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দুআ করতে বলেছেন এভাবে,
وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا [٢٠:١١٤]
অর্থ; হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। (সূরা ত্বোয়া হা- আয়াত নং-১১৪)। ]
হাদীসে প্রত্যেক নরনারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ বলা হয়েছে।
হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমি নর নারীর জন্য ফারয।
আর অপাত্রে মানুষকে ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা সোনার হার পরাবার শামিল। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত তাহক্বীক আলবানী হা/২১৮, হাদীসটির সনদ যইফ হলেও শাহেদ হাদীস থাকায় হাদীসটিকে হাসান স্তরের বলা হয়েছে।
এছাড়া হাদীসে এসেছে, আল্লাহ যাকে চান দ্বীনের জ্ঞান দান করেন, এটা আল্লাহর নিয়ামত ।
পবিত্র কুরআনের প্রথম নাযিলকৃত সূরা আলাকের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে।
আজ আমি মুসলিম বিজ্ঞানীদের অন্যতম আল খাওয়ারিজমী নিয়ে কিছু লিখব ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একজন বিজ্ঞানীকে নিয়েই আমার এই লেখা। এ থেকে আমরা বুঝতে পারবো যে, মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে কতটা এগিয়ে ছিলো। খলিফা মামুনের রাজত্বকালো যে সকল বৈজ্ঞানিক বিজ্ঞান চর্চ্চায় উত্কর্ষতা লাভ করেন আল খাওয়াজিমী তাদের নেতৃত্বে ছিলেন। যদিও খলিফা মামুন মুতাজিলা মতবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইসলামের অনেক ক্ষতি সাধন করেন। মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
নাম পরিচয়: নাম আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ। পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারিজমী।
জন্ম: সোভিয়েত রাশিয়ার আরব সাগরে পতিত আমু দরিয়ার নিকটে একটি দ্বীপের নিকটে অবস্থিত খোয়ারিজম নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এটি ছিলো পারস্যের অন্তর্গত খিভা প্রদেশে। আল খাওয়ারিজমী তাঁর বাল্যকাল ও কৈশোর সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
তবে আনুমানিক ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
জীবন ইতিহাস: আল খোয়ারিজমী খলিফা আল মামুনের বায়াতুল হিকমাহ সংলগ্ন গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিকে চাকুরী করতেন। খলিফা মামুনের মৃত্যুর পরও জীবিত ছিলেন এবং পরবর্তী খলিফা আল ওয়াতহিক এর শাসনকালের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পাটীগণিত,বীজগণিত,ভূগোল, জ্যোতিবিজ্ঞান,জ্যামিতিতে প্রভৃত ভূমিকা রাখেন। তবে মূলত বীজগণিতের জন্যই তিনি সবচেয়ে আলোচিত হন।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আত-তাবারী তার নাম দেন মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমী আল কুতরুবুল্লী। আল কুতরুবুল্লী বিশেষণ এটাই নির্দেশ করে যে, তিনি সম্ভবত বাগদাদের নিকটবর্তী ক্ষুদ্র শহর কুতরুবুল হতে এসেছিলেন। আল-তাবারী তাকে মাজুসী’দের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এটা থেকে বুঝা যায় যে, তিনি হয়তোবা প্রাচীন জরথ্রুস্ট মতবাদের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তাঁর আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা বই থেকে জানা যায় যে, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম।
সুতরাং এথকে বুঝা যায় যে, হয়তোবা তাঁর পূর্বপুরুষ বা সম্ভবত তিনিই কৈশোরে জরথ্রুস্ট মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।
বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ: খলিফা মামুনের বিশাল লাইব্রেরীতে আল খাওয়ারিজমী চাকুরী গ্রহণ করেন। এখানেই সম্ভবত তিনি বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। অসীম ধৈর্য সহকারে অধ্যয়ন করে তিনি বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন।
আল-খাওয়ারিজমী’র অবদান: তিনি ছিলেন একজন জগতবিখ্যাত গণিতবিদ।
তার সময়ের গণিতের জ্ঞানকে তিনি এক অভাবনীয় সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে তুলেন। একজন গণিতবিদ হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য জ্যোতির্বিদ। ভূগোল বিষয়ে তার প্রজ্ঞা উত্কর্ষতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো।
তিনি ছিলেন বীজগণিত তথা এলজেবরার জনক। তিনি প্রথম তার একটি বইয়ে এই এলজাবরার নাম উল্লেখ করেন।
বইটির নাম হলো “আল-জাবর ওয়া-আল-মুকাবিলা”। তার বই নিয়ে আর্টিকেলটির শেষ অংশে থাকবে।
তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক বহু গ্রিক ও ভারতীয় গ্রন্থ আরবীতে অনুবাদ করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান নিচে দেওয়া হলো:
পাটিগণিত-এর ক্ষেত্রে অবদান: পাটিগণিত বিষয়ে তিনি একটি বই রচনা করেন যা পরে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকে হিন্দুগণিতবিদগণ দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
এই পদ্ধতিকে খোয়ারিজমীই প্রথম ইসলামী জগতে নিয়ে আসেন। তার রচিত The Book of Addition and Substraction According to the Hindu Calculation (যোগ বিয়োগের ভারতীয় পদ্ধতি) তারই উদাহরণ।
বীজগণিত-এর ক্ষেত্রে অবদান: এ ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশী উত্কর্ষতা লাভ করেন। তার হাতেই গণিতের এই শাখাটি পরবর্তী সময়ে আরও সমৃদ্ধতর হয়। বর্তমান যুগ পর্যন্ত গণিত বিদ্যায় যে উন্নয়ন এবং এর সহায়তায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে উন্নতি ও আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে তার মূলে রয়েছে আল-খোয়ারিজমী’র উদ্ভাবিত গণিত বিষয়ক নীতিমালারই বেশী অবদান।
তার রচিত বই “কিতাব আলজিবর ওয়াল মুকাবিলা’ হতে বীজগণিতের ইংরেজী নাম অ্যালজেবরা (Algebra) উত্পত্তি লাভ করে। Algorithm শব্দটি Alkhwarizmi নামের ল্যাটিন অপভ্রংশ algorismi হতে উত্পত্তি লাভ করেছে।
এলজাবরায় লিনিয়ার বা একঘাত এবং কোয়াড্রেটিক বা দ্বিঘাত সমীকরণ আছে।
আমরা সাধারণত কোন সমীকরণ সমাধান করে যখন x অথবা y-এর একটি করে মান পাই। যেগুলো এক ঘাত সমীকরণ নামে পরিচিত।
আবার দ্বিঘাত সমীকরণে দুটি মান পাওয়া যায়। এই দুই ধরণের সমীকরণের বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখা তুলে ধরেন আল-খাওয়ারিজমী।
যেমন এটি একটি একঘাত সমীকরণ যার একটি মান 1। আবার একটি দ্বিঘাত সমীকরণ যেখানে এর মান দুটি অথবা।
তার এলজাবরা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে গণিত জগতে এর উপযোগীতা অভাবনীয় বেড়ে যায়।
মধ্যযুগের আর কোন গণিতবিদই গণিত জগতে তার সমান্তরাল কর্ম উপস্থাপন করে যেতে পারেননি।
তিনি গণিতের লগারিদম শাখাটিও তিনি উন্নয়ন করেন।
গণিতে শূণ্যের ব্যবহার: যদিও এটি গণিতের অন্তর্ভূক্ত তবুও এর গুরুত্ব বিবেচনা করে এটি আলাদা অনুচ্ছেদে বর্ণনা করছি। গ্রীক ও ভারতীয় হিন্দু গণিতবিদদের মধে গণিতের যে অসূম্পূর্ণতা ছিল, সে অসম্পূর্ণতা পূরণ করেছিলেন আল-খাওয়ারিজমী। তার গণিতের বিষয়-আশায় উপস্থাপনা ছিল অসাধারণ ও অনন্য।
আরবীয়রা ভারতীয়দের নিকট থেকে সংখ্যা লিখন প্রণালী শিক্ষা লাভ করেন। মুসলমান বৈজ্ঞানিকেরা নিজেরা এটিকে সংশোধন করেন। খাওয়ারিজমী শূণ লিখন প্রণালী নিজেরা উদ্ভাবন করেন। খাওয়ারিজমী এ শূণ্য লিখন প্রণালীকে সর্বশেষ রূপদান করেন। ইউরোপীয়রা মুক্তকন্ঠে এ কথা স্বীকার করেন।
এই শূণ্য ব্যবহার করার ফলে গণিত এসে দাড়ালো পরিপূর্ণ প্রেক্ষিতে। তিনি এখানেই থামলেন না। তার মগজে ঝড় বয়ে গেলো। এই শূণ্য ব্যবহার গণিতে নিয়ে আসলো এক অসাধারণ বিপ্লব।
ভগ্নাংশ পদ্ধতি আবিষ্কার: ভারতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার সময়ে তিনি আবিষ্কার করেন ভগ্নাংশের বিস্ময়কর দিক।
তার এই কাজগুলো পরিচিত ছিলো আরব্য-কর্ম হিসেবে। শিগগিরই তা কর্ম-অবদানগুলো পৌছে গেলো ইউরোপে। ইউরোপীয়রা দ্রুত তার বই ও লেখাগুলো অনুবাদ করে নেয়। সেই সাথে তিনি ইউরোপেও বিখ্যাত হয়ে যান। তিনি দশমিক ব্যবস্থাকে এক নতুন দিগন্তে পৌছে দিতে চাইলেন।
এক্ষেত্রে তার অবদান প্রশংসনীয়।
ত্রিকোণমিতিতে অবদান: গণিতের আরেকটি শাখা হলো ত্রিকোণমিতি। সমকোণী ত্রিভুজের তিন কোণ আর বাহু নিয়ে ত্রিকাণমিতির কারবার। আল-খাওয়ারিজমী উদ্ভাবন করেন ত্রিকোণমিতির বিস্তারিত উপাত্ত। তিনিই কনিক সেকশনে”-এর গাণিতিক ধরণের আধুনিকায়ন করেন।
এরপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন ক্যালকুলাসে। তিনি ক্যালকুলাসের উন্নয়ন ঘটি এর আধুনিকায়ন করেন। ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস হচ্ছে এর একটি শাখা। এটি নিয়ে তিনি কাজ করা শুরু করেছিলেন।
জ্যামিতিতে তার অবদান: তিনি প্রথম বীজগণিতের সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করেন।
জ্যামিতির ক্ষেত্রে আয়ত,বর্গ,ত্রিভুজ প্রভৃতি জ্যামিতিক ক্ষেত্রগুলোর যে ধারণা দিয়েছিলেন তা হুবহু আজও একই রকম রয়েছে। তিনিই কনিক সেকশনের গাণিতিক ধরণের আধুনিকায়ন করেন।
জ্যোতির্বিদ্যায় তার অবদান: জ্যোতির্বিদ্যায় তার অবদান উল্লেখযোগ্য এবং দিয়ে গেছেন নতুন ধারণা ও প্রজ্ঞার জগতে। তার আরও কাজের মধ্যে ঘড়ি ও সূর্যঘড়ির ক্ষেত্রে তার অবদান অন্তভূক্ত। আল-খাওয়ারিজমী জ্যোতির্বিজ্ঞানের একখানা জিজ বা তালিকা প্রণয়ন করেন।
তার এই জিজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, এতে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঔপপত্তিক উপক্রমণিকা সংযোগ করেন। এ বিষয়ে এ উপক্রমণিকাই তার প্রগাঢ় পান্ডিত্যের স্বাক্ষর। এ সম্পর্কিত তার দুই খানা গ্রন্থ রয়েছে। প্রথম গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক যন্ত্রপাতির নির্মাণ কৌশল আলোচনা করেছেন।
দ্বিতীয় গ্রন্থে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কিরুপে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ নিতে হয তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো অনুবাদ করা হয ইউরোপীয় ভাষায় । পরবর্তীতে এগুলো চীনা ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়।
অনুবাদ কর্মে তার অবদান: এর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি গ্রীক ও ভারতীয়দের বইগুলো আরবীতে অনুবাদ করেন। তিনি টলেমীর বইগুলো অনুবাদ করেন। এছাড়া তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর একটি বই অনুবাদ করেন ।
ভূগোল শাস্ত্রে অবদান: তিনি টলেমী সুচিত অনেক ভৌগলিক ধারণার সংশোধন করেন। ইউরোপীয়রা এতে বিস্মিত হয়। টলেমির মানচিত্র পর্যন্ত তিনি সংশোধন করেন এবং তিনি তাতে একটি মানচিত্র সংযুক্ত করেন।
আল-খাওয়ারিজমী’র টলেমির দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা গ্রহণ করেন, সেই সাথে তার সাথে মুসলিম দেশগুলোর বিবরণ পেশ করেন। আল-খোয়ারিজমী’র উদ্যোগে দুনিয়ার একটি বাস্তবরূপ তৈরী করা হয়,যা পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কনে নমুন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আল-খাওয়ারিজমী প্রথম পৃথিবীকে সপ্ত ইকলিম বা মন্ডলে ভাগ করেন। এই সূত্র ধরেই আবহওয়ার পরিমন্ডল অনুসারে পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশে ভাগ করেন।
জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর রচিত ভারতীয়দের একটি বই “সিদ্ধান্ত” তিনি আরবীতে অনুবাদ করেন।
তার রচিত বই:
তিনি অনেক বই লিখেছেন এগুলোর অধিকাংশ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আবার অনেকগুলোর অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায় না।
বইয়ের তালিকা:
আল-জাবর ওয়া-আল-মুকাবিলা: এ বইটি তার সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। এটি সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। এই বইটির নাম অনুসারে এলজেবরা বা বীজগণিত নামকরণ করা হয়। এ বইটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় দ্বাদশ শতকে। অনুবাদ কর্মের মধ্য দিয়ে এই নতুন বিজ্ঞান পশ্চিমা জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়।
এর আগে ইউরোপের কাছে বীজগণিত ছিলো একটি অচেনা বিষয়। ইউরোপীয়রা এ বিষয়ে ছিলো পুরোপুরি অজ্ঞ।
এক নজরে বইটি:
বইটি পাঁচখন্ডে বিভক্ত।
প্রথম অংশে তিনি দ্বিঘাত সমীকরণগুলোকে ছয়ভাগে বিভক্ত করে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আলোচনা করেন। দ্বিঘাত সমীকরণে যে দুটো মূল বিষয় খারেজমী সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন।
এবং এটি সমাধান করেন।
দ্বিতীয় অংশে তিনি বীজগণিতের সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করেন।
চতুর্থ খন্ডে তিনি করণী অপসারণ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।
দশম শতাব্দীর ইউসূফ রচিত মাফাতিহুল উলুম গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।
কিতাবুল সুরত আল-আরদ: এটি ভূগোল বিষয়ক বই।
এটি পৃথিবীর আকার সমন্ধীয় একখান বই। তার এ গ্রন্থখানা মূলত ভূগোল সমন্ধীয় আলোচনায় সমৃদ্ধ। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। অনুবাদকর্মের সাথে মানচিত্রগুলোও অন্তর্ভূক্ত্ করা হয়।
কিতাব আল-জাম ওয়াল তাফরিক-বিল-হিসাব আল হিন্দ: এই বইটি ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
কিন্ত এই বইটি আরবীতে আর পাওয়া যায় না।
ইসতিখেরাজ তারিখ আল-ইয়াহুদ: ইহুদী পঞ্জিকা নিয়েও তিনি বই লিখেছেন। এটি সেই বই।
কিতাব আল-তারিখ: এ মুল্যবান বই থেকে বঞ্চিত। এটি আর পাওয়া যায় না।
এটি সাধারণ দিনলিপির উপর লিখিত।
কিতাব আল-রুখমাত: এটি সুর্যঘড়ির উপর লিখিত একটি বই। এটি থেকেও আমরা বঞ্চিত।
মৃত্যু: সম্ভবত এ মহান বৈজ্ঞানিক ৮৪৭ বা ৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মৃত্যুমুখে পন্ডিত হন। খলিফা মামুনের মৃত্যুর পরও তিনি এক যুগের অধিক জীবিত ছিলেন।
বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের জন্য আল-খাওয়ারিজমী চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
পরিশেষ :বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের জন্য আল-খোয়ারিজমী চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ষোড়শ শতক পর্যন্ত তার অনেক বই ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত ছিলো। জ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহই তাকে একজন পুরোপুরি বিজ্ঞানীতে পরিণত করে তুলেছিলো। তাঁর গবেষণা বিজ্ঞানীদের সমসাময়িক অনেক বাধা দুর হয়।
আজও তাঁর অবদান সমুজ্জল।
আসুন আমরাও কুরআন ও সহীহ অনুসরণ করার পাশাপাশি তা নিয়ে গবেষণা ও চিন্তা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমি লেখাটির অধিকাংশই ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগ, সাইট, আমার সংগ্রহে থাকা বই, পত্রিকার কাটিং থেকে লিখেছি। সবগুলোর উদ্ধৃতি দিই নি।
এসব তথ্যে কোন কিছু বাদ পড়লে আমাকে জানাতে পারেন। আমি যোগ করে এটাকে সমৃদ্ধ করবো ইনশাআললাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।