যদিও তুমি ধ্রুবতারা তবুও আমি দিশেহারা
গতকাল বন্ধু মামুন বলল ওর নাকি গত তিনদিন ধরেই ভাগ্যা খুব ভালো যাচ্ছে। কারন তিনদিন ধরেই বাসা থেকে আসা-যাওয়ার সময় ওর আশে-পাশে কাকের ইয়ে পড়তে দেখেছে, যেহেতু সেই ইয়ে ওর মাথায় একবারও পড়েনি সেহেতু সে নিজেকে অতিব ভাগ্যবানদের একজন মনে করছে। আমি তখন ভেবে দেখলাম, কাকের ইয়ে থেকে বাচাটাতো আসলেই ভাগ্যবানের লক্ষন। এবং তখন থেকেই পরিচিত সম অথবা অসমবয়েসী যার সাথে দেখা হল, তাকেই কাকের ইয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম। মোটামুটি ১০-১২ জনের জরিপ নিয়ে দেখা গেল তারা কেউই কাকের এই নিষ্ঠুর প্রকৃতির, প্রকৃতির ডাক থেকে রেহাই পায়নাই।
জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে, কোন না কোন ভাবে তাদের শরীরের কোন না কোন অংশে কাকের সেই ইয়ের ছাপ পড়েছে।
আমরা সবাই অবগত যে ইয়ে নিয়ে কাকের এই আচরন অনেক রহস্যময়ি, পৃথিবি মন্ডলের কত শত পন্ডিতবর্গ এত এত রহস্য উন্মোচিত করল কিন্তু কাকের ইয়ে কেন যে সোজা এসে ঠিক-ঠাক ভাবে মানব জাতীর উপরে বর্ষিত হয় এই রহস্যের সমাধান কেউ বের করতে পারলনা (কারো যদি এই বিষয়ে জানা থাকে অসভ্যই আওয়াজ দিবেন)। অনেক সময় দেখা যায় আপনি আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে কবিতা গাইতে গাইতে পথ চলছেন, এমন সময়ে পত্র-পল্লবির ফাঁক-ফোকড় দিয়ে এক ফালি ইয়ে এসে ঠিক আপনার চান্দি বরাবর আঘাত করল। একজন চলন্ত মানুষের ঠিক চান্দি বরাবর এই জিনিষ কিভাবে আঘাত হানে এই জিজ্ঞাসা সম্ভবত আজ সমস্ত জাতির জিজ্ঞাসা হয়ে দাড়িয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় এই কাউয়া জাতির পর্যবেক্ষন শক্তি অতিশয় প্রখর, এবং গণিত জ্ঞানও অতি উচ্চ পর্যায়ের।
বেশির ভাগ সময়েই, আপনি কত কিঃমি বেগে হাটছেন, আপনার থেকে তার উচ্চতা কতটুকু, বাতসের গতিবেগ কেমন, কৌনিক দুরুত্ব ইত্যাদি সমস্ত কিছু হিসেব করে তবেই সে তার ইয়ে বর্ষন করে।
পর্যবেক্ষনে ভুল হলে আপনার চান্দি হয়ত বেচে যাবে, কিন্তু আপনি কি বেচে যাবেন? না, আপনি আরো বেশি ঘের খাবেন। ধরেন, আপনি খুব আকারে মাঞ্জা মেরে আপনার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন, আপনার গায়ে পরিস্কার-পরিছন্ন পোশাক। এমন সময় একটি কাক পাখি, আপনার সেই পরিস্কার শার্টটিকে স্বাস্থ সম্মত টয়লেট ভেবে কাজ সেরে দিল, এদিকে আপনি কিছুই টের পেলেননা। ফলাফল কি হবে? আপনার বান্ধবীটি ভালোবেসে আপনার পিঠে হাত দিয়ে আতকে উঠবে, এবং চিতকার করে কবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতাটি আবৃতি করবে,
ওয়াক থু,
তোমার পিডে দেহি কাউয়ার গু!
একবার খালিশপুর ওন্ড্যারল্যান্ড পার্কের সামনে বসে বন্ধুরা সবাই সন্ধ্যাকালিন আড্ডা দিচ্ছিলাম।
আমাদের হাতে ছিল চাঁয়ের কাপ আর উল্লেখিত যায়গাটিতে ছিল কাক পাখিদের আঁদি নিবাস।
হঠাত করেই বন্ধু রিহাদ মাথায় হাত দিয়ে বলল, এ কি আডা আডা? মাথায় সাদা আডা এবং উপরে কাকের উপস্থিতি বিশ্লেষন করে আমরা বুঝতে পারলাম আসলে ওইটা কোন প্রজাতির আডা। রিহাদ রেগে গিয়ে বলল, হালার প্যাডে কি অসূখ হইলনি, রাইত-বিরাতে হাইগা মাখাইতাছে! ঠিক তার পর পরই আমার কাপে পানির মত কি যেন পড়ার শব্দ পেলাম, কিন্তু আলোতে নিয়ে সাদা কিংবা সেইরকম কিছুই দেখতে পেলামনা। বন্ধু সাদি বলল, পাইলি কিছু? আমি মাথা নেড়ে না বলার পরে ও বলল তাইলে মনে হয় হাগেনাই, মুইতা দিছে।
প্রচন্ডরকমের হাঁসি এবং কাকের হিঁসুর কারনে আমাকে সেই চাঁ ফেলে দিতে হয়েছিল।
কাক পাখিদের আরেকটি রহস্যময় কর্মকান্ড হচ্ছে, এরা মাঝে মাঝে কোন এক গুরুত্বপুর্ন কারনে কাক-সভার আয়োজন করে, এই সমস্ত সভায় নিমিষেই কয়েক’শ কাক এসে জড়ো হয়। আমি এখন পর্যন্ত গুরুত্বপুর্ন কারনগুলো জানিনা, কেউ জানলে তাকে অবশ্যই জানানোর জন্য অনুরোধ রইল। অবশ্য ছোটবেলায় গ্রামের বন্ধুরা বলত, কোন কাক মৃত্যবরণ করলে নাকি সাধারণত এইধরনের সভা ডাকা হয়।
যেহেতু ছোট বেলায় গ্রামে ছিলাম, সেই সুবাদে কিছুটা ডানপিটে ছিলাম। একবার কার কাছথেকে যেন শুনেছিলাম, কাকেদের বাসা নাকি লোহা-লক্কড় দিয়ে বানানো হয়, এবং সেই বাসায় সোনার জিনিষ-পত্র পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে।
শোনার সাথে সাথে এ্যাডভাঞ্চারে নেমে পড়লাম। আমি এবং কয়েক বন্ধু মিলে গাছে গাছে কাকের বাসা খুজতে লাগলাম। বাসা খুজে পেলাম অনেক কিন্তু সোনা-দানা কিছুই পেলামনা। আশা-ভরশা ছেড়ে দিয়ে যখন বাড়ি ফিরে আসতে চাইলাম, ফিরতি পথে একটা মাঝারি উচ্চতার কদম গাছে বিশাল এক কাউয়ার বাসায় নজর পড়ল। বন্ধু শিপনকে বললাম এইডায় তুই উঠ, ও বলল, আমার হাটু ছুইলা গ্যছে, হাটপারই পারিনা আর গাছে…।
বাকিদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমারই উঠতে হবে, সবাইকে বললাম, আচ্ছা কেউ না উঠলে নাই, তয় সোনা পাইলে নিবার আইয়ো এক্কেবারে খাওয়ায় দিমুনে। বলে, তীব্র ক্ষোভ নিয়ে উঠলাম কদম গাছে।
কাকের নীড়ে যেয়ে সবকিছু তছনছ করেও কিছু পেলামনা। গাছ থেকে নেমে আসবো এমন সময় দেখি তিনটা কাক বাসার কাছে এসে বসল। এরপর সবচেয়ে বড় কাকটা আমাকে এ্যাটাক করল, সেকি যেন তেন এ্যাটাক! উড়ে এসেই হয় ঠোকর দেয় না হয় ছো দেয়।
আমি গাছ থেকে যে তাড়াতাড়ি নেমে আসব সে উপায়ও নেই। কোন দেকেই যেতে পারছিনা। উপায়ন্তর না দেখে একটা ছোট ডাল ভেঙ্গে কাকটার দিকে ছুড়ে মারলাম, ডালটা যেয়ে লাগল কোন একটা গাছের মৌ-চাকে। ভন ভন করে ছুটতে লাগল মৌমাছি, এদিকে কাকের আক্রমন ঠেকাতে যেয়ে ডাল ভেঙ্গে পড়ে গেলাম। ভাগ্য ভালো নিচে ছিল ধানি কাঁদা-মাটির জমি।
পড়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম, মৌ-মাছি জনিত ভীতিতে আশে-পাশের ২-১ জন যারা ছিল সবাই ভো-দৌড় দিচ্ছে তখন সব ব্যাথা ভুলে আমিও এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে উঠলাম।
এত সংগ্রাম এবং আত্নত্যাগের পরেও, কৃত অসাধু কর্মের জন্য আমাকে আম্মাজানের হাতে দোররা খেতে হয়েছিল।
যাইহোক, ঐ ঘটনার পর থেকে কাক পাখিদের প্রতি আমার অগাধ সম্ভ্রম জন্ম নেয়। কোন গাছে উঠলে আগে দেইখা নেই সেই গাছে কাকের বাসা আছে কিনা।
আপনারাও কোন শুভ যাত্রা করার সময় দেইখা নিয়েন, মাথার উপ্রে কি আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।