সৌমিত জয়দ্বীপ চন্দ
চিঠি লেখার একটা অভ্যাস ছিল। ডায়েরীও লিখতাম নিয়মিত। এখন আর সেসব দিন নেই। নেই বলতে আসলেই নেই। ডিজিটাল জমানা চলছে।
অবচেতন মনে কবে যেন স্বীকার করে নিয়েছি সে শিকার। বুঝতেও পারি নি, অনবরত সম্পর্কের বিচ্যুতি ঘটছে আমাদের। দ্রুততার সাথে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে বটে, তবে সেটা শুধুমাত্র ফরমায়েসী যোগাযোগ। একটা সময় চিঠি ছিল। চিঠিতে ব্যক্তি মানুষকে দেখা যেত না, তার স্বরও শোনা যেত না।
এখন স্বর শোনা যায়। দেখা যায় না সেই চিঠিযুগের মতোই। চিঠিযুগ বলে যেটাকে আখ্যা দিচ্ছি, সেটার গতমান হয়ে যাওয়াকে অনেকেই মেনে নাও নিতে পারেন। এবং অনেকেই আমার বিশ্বাস মানবেন। মেনে নেওয়াদের সংখ্যাটা বেশি হবে এটাও বিশ্বাস থেকেই বলছি।
তার মানে আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারি যে, চিঠিযুগ আদতেই গত হয়েছে। তাতে লাভ কী হয়েছে? ক্ষতিই বা কী হয়েছে? লাভ হয়েছে শুধুমাত্র এই যে দ্রুততার সাথে তথ্যাদি আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আমরা তৃপ্ত। মনে হয় তৃপ্ত। দীর্ঘসূত্রিতার মতো জায়গা থেকে আমরা সরে আসতে পেরেছি।
এও বা কম কি! কিন্তু ক্ষতি যে কম হয় নি তাওতো উচ্চারণ করতে পারি। হৃদ্যতা কমেছে। চিঠির মধ্যে যে আবেগ সে আবেগ যন্ত্র চালিত 'আকাশ' মাধ্যমে স্বর বা বার্তায় প্রকাশ পায় না। এসএমএস -গুলো হয় সব হিসেব করে লেখা। যেন নির্দিষ্ট ক্যারেক্টারের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আক্কেল সেলামি দিতে না হয়।
ওতে কি আর আবেগ প্রকাশ পায়! বলা কথা কি ধারণ করে রাখা যায়? চিঠি যেতো। ২০০৪ সালের দিকে সর্বশেষ লেখা বা পাওয়া কিছু চিঠি এখনও আমার সংগ্রহে আছে। মাঝে মাঝে পড়ি। আবেগের সাথে পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে। এখন হাজার কথা বলি, গুরুত্ব মেনে বলি, গুরুত্বপূর্ণগুলো মনে রাখি।
বাকিগুলো আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করি! প্রয়োজন কী ওসব মনে রাখার। তাই আমাদের সম্পর্কের বৃত্তে এখন অবিশ্বাস জমা হচ্ছে। মানুষ এখন অন্যকে বিশ্বাস করে না। করলেও খুব কম। যন্ত্রে বলা কথার আলোকে কাউকে বিশ্বাসই বা করা যায় কীভাবে? ওসবে তাই হয় না।
হৃদ্যতা আসে না। যা আসে তা হল দূরত্বের মাঝে কাছে টানার ব্যর্থ প্রয়াস। যান্ত্রিকতার ধর্মে, পুঁজি বাজারের ধর্মে মানুষকে দূরে রেখেই কাছাকাছি রাখার বিধান লিপিবদ্ধ। মানুষে মানুষে বিশ্বাস, সম্পর্ক ও হৃদ্যতার তারা কী বুঝবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।