আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিআরের চাল আত্মসাৎ আ.লীগ নেতাদের!



গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিআর) আওতায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ৬৪ লাখ টাকার ২৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত সেই চালের সিংহভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, মোট ২৩০টি প্রতিষ্ঠানের নামে টিআরের চাল বরাদ্দ ছিল। কিন্তু অনেকেই তা পায়নি। তাদের অনেকে উপজেলা পরিষদে অভিযোগ দিয়েছে।

তাদের দাবি, বরাদ্দের কোনো চাল তারা পায়নি, তাদের প্রাপ্য যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এমন শতাধিক অভিযোগ ও আবেদন পাওয়ার কথা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠান নেই, তার পরও প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে চাল তোলা হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে। আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ নিয়ে তা আত্মসাৎ করা খুবই দুঃখজনক। ’ অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কোলা গ্রাম সন্ন্যাসীপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র দাস।

কিন্তু সভাপতি হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মন্দির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেড় মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন ঘোষ। চাল উত্তোলনের ছয় মাস পর বিষয়টি প্রকাশ পেলে মন্দির কমিটি তাদের প্রাপ্য চাল ফেরত চেয়ে আবেদন করে উপজেলা পরিষদে। সেই আবেদনেরও চার মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। প্রকৃত সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেন, মন্দিরটি নদীর ধারে অবস্থিত।

মাটির অভাবে মন্দিরটি ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ সংস্কারের কথা বলে চাল তুলে নেতারা খেয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা আনন্দ মোহন ঘোষ জানান, অল্প দিনের মধ্যে তিনি ওই মন্দিরে কাজ করে দেবেন। সভাপতির মিথ্যা পরিচয় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদবির করে চাল বরাদ্দ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যে কারণে তাঁর পরিচয় দিয়েই উঠিয়েছেন।

একইভাবে ভাটপাড়া-মালাপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুর আলী। আর সাধারণ সম্পাদকের ভুয়া পরিচয় দিয়ে এক মেট্রিক টন চাল তুলে নেন আওয়ামী লীগের ভাটপাড়া গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। এই মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকেও আবেদন জানানো হয়েছে চাল ফেরত পাওয়ার। কিন্তু আজও তারা চাল ফেরত পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় টিআরের বরাদ্দকৃত চাল গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও ক্লাব সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়।

কিন্তু বেশির ভাগ এলাকার প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নিজেদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে ওই চাল তুলে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো কাজও করেননি। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ১ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া-মালাপাড়া জামে মসজিদে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক মেট্রিক টন চাল। তারাও কোনো চাল পায়নি। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুর আলী জানান, তাঁদের গ্রামের সিরাজুল ইসলাম নিজে সাধারণ সম্পাদক সেজে ওই চাল তুলে নিয়েছেন।

একই ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামের মাঝপাড়া রাসেল স্মৃতি সংঘের নামে তোলা হয়েছে দেড় মেট্রিক টন চাল। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান এই চাল তুলেছেন। কিন্তু ওই গ্রামে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আনিছুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস না থাকলেও কর্মকাণ্ড আছে। চাল তোলা প্রসঙ্গে তাঁর কিছু মনে নেই।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ রুবেল জানান, তিনি একসঙ্গে দুটি উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন। যে কারণে সব কাজ সময়মতো করতে পারছেন না। অভিযোগগুলো তাঁর দপ্তরে রক্ষিত আছে। এখনো তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.