"আমারে ফিরায়ে লহো অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে"-শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আর মাত্র একটি দিন বাকী। না না এটা কোন লটারীর প্রমোশন নয়। অথবা কোন পরীক্ষার রেজাল্ট পাবলিশ নয়। দিনের শেষে একটি মাত্র রাত। এর পরেই আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর।
যার জন্য আকুল হয়ে আছে রাতুল। আসছে সেই প্রহর যেথায় আকাশ হারিয়ে যাবে নীলিমার মাঝে, শরৎের শুভ্র ফুল আশ্রয় পাবে রমনীর খোপার চুলে, যার জন্য রবীন্দ্রনাথের সবগুলো ছোটগল্প, রাতের আকাশের শুকতারা যার উপমা, ভালোবাসা নামের আবেগী শব্দটা শুধুই যার জন্য সেই সে চারুলতার সাথে একটি দিন বাদেই দেখা হবে। ভাবতেই শিহরীত হয় রাতুলের সমগ্র শরীর। একা একাই কথা বলে উঠে, আবার কল্পনায় চারুলতার হাতে হাত রেখে হেটে চলে চির ধরা পৃথিবীর বুকে।
নিজে নিজেই হেসে উঠে রাতুল।
একেই বুঝি বলে ভালোবাসা, একেই বলে প্রেম যেখানে কতগুলো অনুভূতি , আবেগ , আশা , স্বপ্ন , সর্বোপরি ভালোবাসার জালের একটা বুনন থাকে। রাতের খারার শেষে রুমে এসেছে রাতুল। মোবাইলের হেডফোনটা প্লাগ ইন করে প্রোগ্রামস থেকে এফ এম রেডিও অন করে সে_____
হ্যাল্ল্যো লিসেনার্স!!!
সবাই নিশ্চই ভালো আছো?প্রতিদিনের মত আড্ডা জমিয়ে তুলতে আজ আবার তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছি আমি আর জে অবন্তিকা। সকল রাতজাগা বন্ধুদের সাথে মধ্যরাত পর্যন্ত জমিয়ে আড্ডা হবে আর কথা হবে বন্ধুদের ছোট ছোট ফিলিংস , ভালো লাগা , মন্দলাগা , উইশ করা এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে। বন্ধু, তোমাদের সব অব্যাক্ত কথা চিরকুট আকারে পাঠিয়ে দাও মেসেজ করে।
আর এদিকে এস এম এস করেছে টিনা , টিনা বলছেন যে তার মন ভালো নেই, হুম এমনটা মাঝে মাঝে হয়ে থাকে টিনা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও, দেখ কি সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে, তাকাও সেই চাঁদের দিকে আশাকরি মন ভালো হয়ে যাবে। আরো এস এম এস করেছে জাহিদ, রাজ, নীলা, সুমন, ইলা ও অনেকে। এখন শুনব গান এবং গানের পরে আবার ফিরে আসব তোমাদের কাছে তোমাদের রাতের বন্ধু অবন্তিকা। তবে শুনতে থাকো এস ডি বর্মনের হার্ডকোর রোমান্টিক একটি সং শোন গো দক্ষিন হাওয়া , প্রেম করেছি আমি.............
চোখ বন্ধ করে গানটি শুনতে থাকে রাতুল।
প্রথম প্রেমের এক পবিত্র স্পন্দন স্পর্শ করে যায় হৃদয়ের অন্তস্থল। আঁধারের জোঁনাক পোকার আলো চোখে জেগে উঠে। সবুজের নির্মলতা বাসা বাধে মনে।
এমনি সময়ে ফোন আসে রাতুলের মোবাইলে। ফোন পিক আপ করে রাতুল____
রাতুল: হ্যালো চারু!!! কেমন আছ তুমি???
চারুলতা: কাল যেমন ভালো ছিলাম , আজো তেমনি ভালো আছি।
তোমার খবর কি???
রাতুল: অ্যাম অলওয়েজ রকস। বল কাল কখন কোথায় আসছো?
চারুলতা: তুমি বল?
রাতুল: বিকেলে শর্মা হাউজে দেখা করি?
চারুলতা: ওকে, কিন্তু আমি তোমাকে কিভাবে চিনব?
রাতুল: আমি নিচে থাকবো তোমার অপেক্ষায়, হাতে থাকবে সাতটি লাল গোলাপ। তুমি এসে আমাকে চিনে নেবে।
চারুলতা: হাউ রোমান্টিক!!!ওকে আমি সময় মত চলে আসব।
রাতুল: হুম।
আচ্ছা চারু তোমার কাছে কেমন লাগছে?মানে কাল আমাদের প্রথম দেখা,দীর্ঘ একটি বছর পরে। তোমার অনুভূতি কি জানাবে প্লিজ?
চারুলতা: হা হা, আমার কাছে ভালোই লাগছে, তোমার অনুভূতি কি তাই বল?
রাতুল: আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না যে কেমন ভালোলাগা কাজ করছে আমার মাঝে। আমার মনে হচ্ছে আমার সমস্ত পৃথিবী আসছে কাল আমার সাথে দেখা করতে। আমার যে কি ফিলিংস হচ্ছে তা আমি তোমাকে যে কিভাবে বুঝাই....অফফ কি দারুন তাই না?
চারুলতা: সত্যি???
রাতুল: কেন বিশ্বাস হয় না?
চারুলতা: বিশ্বাস হয়। তুমি এখনও বাচ্চাই রয়ে গেছ,
রাতুল: তোমার পরশে যদি বুঝতে শিখি তাতেই স্বার্থকতা
চারুলতা: আজতো তুমি ভীষন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ।
এমনটাতো ছিলে না?
রাতুল: বাধ্য হয়েছি, শুধুই তোমার জন্য।
এভাবেই কেটে যায় অপেক্ষার সেই রাতটিও। ভোরের আলো ফুটে ওঠে। ঝিরি ঝিরি বাতাসে গাছের পাতার কাঁপুনি। ঝরে পরে কয়েকটি পাতা।
শহরের ব্যাস্ততায় হারিয়ে যায় সকাল।
তৈরি হয়ে নেয় রাতুল। আজ লেট করলে চলবে না। মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দেয় রাতুল। মাও আদর করে চুল টেনে দেয়,
রাতুল: ওফ আম্মু।
দিলা ত চুল নষ্ট করে।
মা: তুই এত খুশি কেন আজ?আর চুলে এগুলা কি মাখছিস?
রাতুল: কেন আমি বুঝি কখনো তোমাকে জড়িয়ে ধরি না?
মা: সত্য করে বল কোথায় যাচ্ছিস?
রাতুল: কাজি অফিসে যাচ্ছি, কোর্ট ম্যারেজ করবো। তুমি যাবা? তাহলে ছেলের পক্ষের স্বাক্ষি তুমি থাকবা।
মা: তোকে কোনদিন কোন মেয়ে বিয়ে করবে নাকি?তাহলে তো দেখা যাবে ঐ মেয়ে তোর চেয়ে বোকা। যা ভাগ এখান থেকে।
রাতুল: নিজের ছেলেকে চিনলা না?তোমার ছেলে পারে না এমন কোন কাজ আছে?
মা: একটা থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলে দেব,বেশরম পোলা কোথাকার। যা যেখানে যাচ্ছিলি, আর রাস্তাঘাটে সাবধানে চলাফেরা করবি কিন্তু।
ঝটপট বেরিয়ে পরে রাতুল। গলির মাথা থেকে রিকশা ডাকে। ভাড়া নিয়ে দরদাম না করে উঠে পরে।
রিকশা চলতে থাকে। চোখ বন্ধ করে রাতুল। রিকশায় বসে চোখ বন্ধ করে গায়ে বাতাস লাগানোর অনুভূতিটাই অন্যরকম। ঝিগাতলা থেকে সাতটি লাল গোলাপ কিনে নেয় রাতুল। নির্দিষ্ট সময়ের আধঘন্টা আগেই পৌছে যায় সে।
এরপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এক ঘন্টা পেরিয়ে যায়। আশেপাশে অনেক মেয়েকে দেখা যায়, কিন্তু কেউ তো এসে পরিচয় দেয় না। কি মুসকিল। পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ও।
ফোন দেয় চারুর নম্বরে কিন্তু বন্ধ।
এভাবে আরো দুই ঘন্টা। রাত তখন আটটা বেজেছে। কিন্তু রাতলের দৃর বিশ্বাস চারুলতা আসবেই। এভাবে আরো এক ঘন্টা পেরিয়ে যায়।
হাহাকার করে রাতুলের মনে। মনকে বুঝায় ও। ভাবে আরো ১০ মিনিট দেরী করি। দশ মিনিট পরে ভাবে আরো দশ মিনিট দেখি।
রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ফুল হাতে দাড়িয়ে থাকার পরে আশা হত হয়ে পরে রাতুল।
ফুলগুলো যত্নসহকারে আইল্যান্ডের উপর রেখে বাসায় রওনা হয় সে। বিষন্ন মনে রাতের খাবারও খেতে ইচ্ছে করলো না। শুয়ে পরলো বিছানায় আর একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো বালিশে।
[চলবে...............]
বি দ্র: এবারও কথা রাখতে পারলাম না। শেষ করতে পারলাম না।
পরের পোষ্টে শেষ পর্ব দেব ইনশাআল্লাহ।
চারুলতা - প্রথম পর্ব
চারুলতা -দ্বিতীয় পর্ব
চারুলতা-তৃতীয় পর্ব
চারুলতা-চতুর্থ পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।