আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেহেনতি জনতার মুক্তির দিন-আরো একটি পহেলা মে প্রয়োজন

একটা আটপৌরে ঘরোয়া সাদামাঠা প্রেমের কবিতা লিখতে চাই

বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে ওঠেছে শ্রমিক-মজুরদের পরিশ্রমে, সততা ও কর্মনিষ্ঠায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও ছিল মেহেনতি জনতার বিশেষ অবদান। শ্রেণী-বৈষম্য মুক্ত যে সমাজ গঠনের লক্ষে বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার শ্রমিক-কৃষক ১৯৭১ এ জীবন দিয়েছিল, আজও জাতি পায়নি সে স্বপ্নের সমাজ। আজও দুমুঠো খাদ্যের দাবিতে, ন্যয্য পাওনা নিশ্চিত করতে পথে নামে শ্রমিকরা। আজ দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বহুকষ্টে দিনানিপাত করছে বাংলার কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ।

নজরুলের ভাষায় ------------- দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল, এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে, বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে। বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল! কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্? রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে, রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে, বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা। তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে, ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে! তাই আরো একটি মে প্রয়োজন। পহেলা মে, ১২৫ তম মহান মে দিবস। বঞ্চনা, নির্যাতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক দিন।

বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের সংহতি ও ঐক্যের দিন। দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের অধিকার আদায়ে এ দিনে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে ছিল ভুখা-নাঙ্গা তথাকথিত সমাজের কাছে অচ্ছুত শ্রমিকরা। ঐতিহাসিক এ দিনটির স্মরণে আজ বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি। সব ধরনের শিল্পকারখানা, দোকান-পাট, অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে । ঘুরবে না রিক্সা, টেম্পো বাস-ট্রাকের চাকা।

আবার নজরুল আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ! হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়, পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়, তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি, তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি; তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান! ১৮৮৬ সালে ১ মেতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেট চত্বরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে অনেক শ্রমিক নিহত হন। অনেকেই হন আহত। বিক্ষোভ আরো বেগবান হয়। বিশ্বজুড়ে চলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।

দেশে দেশে গড়ে মজদুর জনতার ঐক্য। অবশেষে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে চলে আসা মেহনতি মানুষের সংগ্রাম পায় কিছুটা সফলতা। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের ঝরানো রক্তের তাৎপর্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এ দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই থেকেই ১৮৯০ সাল হতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে মে দিবস।

তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে, অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে! সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে! তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’, সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি! আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন, লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!-নজরুল আজো আমার শ্রনমিক ভাইয়ের ন্যায্য মুজুরি মিলে না---ধর্ষিত হয় আমার অসহায় বস্ত্রকন্যা-- স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ শ্রমিক এখনো বিনামজুরিতে পরিশ্রম করছে। পারিশ্রমিক পেতে তাদের রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। আর দিন মজুরের সংখ্যাও কম নয়। সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম আইন (আইএলও) কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু শ্রমিকদের নায্য দাবি ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।

একই ভাবে দেশের শ্রমিক আইনেরও কোনো বাস্তবায়ন নেই। কোনো সরকারই এটা লক্ষ্যে কাজ করে না। কিছু তথ্য শিল্পভিত্তিক খাতওয়ারি শ্রমিকের অংশ হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাত। এ খাতে নিয়োজিত আছে মোট শ্রমশক্তির ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে ম্যানুফেকচারিং খাত।

যেখানে নিয়োজিত আছে মোট শ্রমশক্তির ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে আছে পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাত। যেখানে মোট শ্রমশক্তির ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা খাত। যেখানে নিয়োজিত আছে মোট শ্রমশক্তির ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

এ খাতের পরেই রয়েছে পণ্য ও ব্যক্তিগত সেবাসমূহ। যেখানে নিয়োজিত আছে মোট শ্রমশক্তির ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর পরে রয়েছে নির্মাণ খাত, অর্থ-ব্যবসা ও সেবা সমূহ, খনিজ ও খনন রয়েছে সবচেয়ে নীচে। যদিও এই খাতে পূর্বে বেশি পরিমাণ শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ছিল প্রায় দশমিক ৫১ শতাংশ।

২০০২-০৩ অর্থবছরে কমে যেয়ে দাড়ায় দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০০৫- ০৬ অর্থ বছরে আরো কমে যায়। তখন দাঁড়ায় দশমিক ২৩ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মাট শ্রমশক্তির দশমিক ২০ শতাংশ এ খাতে নিয়োজিত রয়েছে। একই ভাবে কমছে পণ্য ও ব্যক্তিগত সেবাসমূহ খাত।

এ খাতে ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে ছিল ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সেখানে ২০০২-০৩ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এই পরিমাণ বাড়েনি। এ খাতে বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ শ্রমিক। বিবিএস’র শ্রমশক্তি এবং শ্রম জরিপ হতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়সের উর্দ্ধে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তির সংখ্যা ৫ কোটি ১০ লক্ষ। তার মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ ও নারী ১ কোটি ২৫ লক্ষ। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ছিল ৪ কোটি ৭৪ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৬১ লক্ষ ও নারী ১ কোটি ১৩ লক্ষ। একই সময়ে স্বকর্মে নিয়োজিত ছিল ৪১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শ্রমিক।

কিন্তু সর্বশেষ হিসাবে এর পরিমাণ কমে গেছে আরো ২দশমিক ৭৬ শতাংশ। বর্তমানে কমে এ খাতে শ্রমিকের হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ। । একটা সংগ্রাম দরকার সমাজের নিপিড়িত জনগণের মুক্তির জন্য ---আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও, রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও! আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল, মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল! সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে, মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে। সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি’ এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।

একজনে দিলে ব্যথা- সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা। একের অসম্মান নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান! মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান, উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান! ---নজরুল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।