আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব। দেখতে দেখতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার একবছর পেরিয়ে গেল। বাড়ি ছেড়ে কাল আবার রওয়ানা দিতে হবে ইঞ্জিনিয়ার হবার বৃথা চেষ্টা করার উদ্দেশ্যে।
শুনলাম ইতোমধ্যেই জুনিয়র এসে গেছে ক্যাম্পাসে। যারা এখনও ক্যাম্পাসে যায়নি তারা বাড়িতে বসেই সুবিধামত জুনিয়রদের মুরগি বানিয়ে গ্রিল খাওয়ার আসন্ন লোভ সামলে যাচ্ছে। যারা ক্যাম্পাসে আছে তারা তো মজা নিয়েই যাচ্ছে! র্যাগ এর কথা বলছি। এই একমাত্র জিনিস যা নাকি উন্নতবক্ষা-যৌনাবেদনময়ী ললনা ছাড়াই কোন ছেলের জিহ্বার লালা বের করে দিতে পারে। কিছু কথা বলার আগে নিজের একটা গল্প বলি;
গতবছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি।
আব্বা তার একমাত্র ছেলেকে রাখতে গেছে ইঞ্জিনিয়ার হবার কারখানায়। চোখেমুখে তার ছেলেকে নিয়ে গর্বের উজ্জলতা ঝিলিক মারছে। কিন্তু তার ছেলেটির চোখেমুখে ভয়। একঘন্টা পর বড়ভাইরা তাকে তার রুমে ডেকেছে। যাই হোক, অনেক সাহস করে গেল।
যা ঘটল ছেলেটি অন্য কিছু মনে করতে পারল না শুধু চিড়িয়াখানায় বানরের খাচার কথা মনে পরে গেল। তবে এবার সে খাচার ভেতরে ছিল, আর কিছু অগ্রজ ইঞ্জিনিয়ার তাকে নিয়ে নানা খেলায় মত্ত। এর মধ্যেই ছেলেটির বাবার বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেল। ফোনের ওপারে তার বাবার কন্ঠ "কিরে! এখনি চলে যাব। কোথায় একটু পাশে বসে থাকবি!আসতে আসতেই ভুলে গেলি!নাকি দেখা না করেই চলে যাব!?" ছেলেটি কিছু বলতে পারল না শুধু বলল "বড়ভাইরা ডাকছিল তো।
আমি যাচ্ছি। " সেদিন বিদায়ের সময় বাবা-ছেলে দুজনই কেদেছিল। বাবা কেদেছিল একমাত্র ছেলেটিকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল বলে আর ছেলেটি কাদছিল বাবার উপর অভিমান করে। এমন অপমান সহ্য করে তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলল না ছেলেটি।
"সাবধানে যেও আব্বু" বলে তাকে আবারও যেতে হলো অন্য কোন বড়ভাইয়ের রুমে আবারও খাচার ভিতরের প্রাণীটির মত মজা দিতে। এমন আরো ছয়-সাত বার তাকে মজা দিতে হয়েছে বানর সেজে।
সাধারণত তিন টাইপের বড়ভাইদের র্যাগ খেয়েছিলাম।
#যারা পলিটিক্স করে তারা তাদের ‘পাওয়ার’ দেখানোর জন্য যাকে খুশি ডেকে তাদের ‘পাওয়ার’ দেখিয়ে দেয়। জুনিয়রগুলোর সালাম আদায় করাই মূল লক্ষ্য থাকে প্রধানত।
যত বেশি যালাম তারা পাবেন, যত বেশি জুনিয়র তাদের ভাই ডাকবেন ততই তাদের পাওয়ার। জুনিয়ররাও যাতে তাদের ‘পাওয়ার’ দেখে তাদের পলিটিক্যাল দলে যোগ দেয় এমন একটা উদ্দেশ্যও থাকে।
#এরা সাধারণত ব্যাচমেট এবং জুনিয়রদের সামনে পার্ট নেয়ার জন্য র্যাগ দেয়। তবে কিছুদিন গেলেই এরা জুনিয়রদের কাছে এরা তাদের সম্মান হারিয়ে ফেলে। অতি আতেল আর বোকচোদ টাইপের পুলাপাইন যারা র্যাগ দেয়া তাদের সিনিয়রিটির দায়িত্ব বলে মনে করে তারাই প্রধাণত এ ধরণের ঝটিকা র্যাগ দিয়ে থাকে।
#তিননাম্বার এই দলটা সবচেয়ে বেশি র্যাগ দেয় ক্যাম্পাসে। এরা শুধুই মজা নেয়ার জন্য র্যাগ দেয় আর ভাবে জুনিয়রটিও তাদের জঘণ্য কর্মকাণ্ডে খুব মজা পাচ্ছে। এদেরক্ষেত্রে একটা গল্প আবার হয়ত বলতে হবে যে , "কিছু বালক যতই ব্যাং টিকে ঢিল ছুড়ে মজা পাচ্ছিল এদিকে ব্যাং টির জীবন ততই হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছিল। " সবচেয়ে বড় কথা এরা কুতসিত টাইপের র্যা গ দেয়া বন্ধ করলে ক্যাম্পাসে র্যাগ বিষয়টা যেটা অশ্লীলতা আর জঘণ্য কিছু রুচিহীন কর্মে ভরপুর সেটা অনেকটা কমে যাবে।
কাউকে র্যাগ দিতে নিষেধ করার জন্য লিখছি না।
কাউকে জ্ঞান দেয়ার ইচ্ছাও নাই। আবালদের জ্ঞান দেওয়া মানে বৃথাশ্রম।
তবে একটা কথা অনেকে বলে যে র্যাগ দিলে নাকি সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক ভালো হয়! তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনাদের শ্রদ্ধেয় সিনিয়র ভাই যাদের কাছে এই অধমটি র্যাগ নামে কুতসিত কিছু সময় কাটিয়েছিল তারা আজ আমাকে দেখলেই চোখ নামিয়ে নেয় কেন! কই চার বছর সিনিয়র ভাইটির সাথে প্রথমদিন সিগারেট খেতে কিংবা ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইটির সাথে প্রেমজীবনে কথা শেয়ার করতে আমাকে র্যাগ খেতে হয়নি। আর যদি তোমার সাথে র্যাগ নামক ওইরকম আবালমার্কা সময় দিয়ে তোমার সাথে পরিচয় হইতে হয় তাইলে না চুদলাম তোমার পরিচয়! বড়ভাইয়ের আমার অভাব হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।