আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্দাপরাধ ট্রাইবুনাল বির্তকিত ?



সূত্র: http://bangla.newsbnn.com/2011/04/25/57519 আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ কেউ এ আদালতে বসতে পারেন কি-না, তা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। এই ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত কি-না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে গঠিত হয় ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত হয় তথাকথিত গণআদালত।

এই গণআদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তদের অনেকেই এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বর্তমান আইনমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক, ট্রাইব্যুনালে সরকারপক্ষের আইনজীবী, রাষ্ট্রের বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল কথিত গণআদালতের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন গণআদালতের বিভিন্ন পর্যায়ে। এখন তাদেরই কেউ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কেউ বিচারক, কেউ ট্রাইব্যুনালের পিপি। গণআদালত গঠন করে বর্তমানে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছিল।

তাদের নিজেদের গঠিত কথিত গণআদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য তারা কিছুদিন আন্দোলনও করেছিলেন। পরে কথিত গণআদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তত্কালীন বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক হলে সবাই চুপ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে অনেকেই তখন কারাগারে আটক কথিত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে একমঞ্চে বসে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একপর্যায়ে তাদের দাবি অনুযায়ী জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

তারা ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনাকালে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি সেই মামলায় আর শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো মামলায় শুনানি গ্রহণে উপস্থিত থাকলে আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর সেই মামলার আপিল শুনানিতে অংশ নিতে পারেন না। এটাই হচ্ছে উচ্চ আদালতে বিচারব্যবস্থার নিয়ম। কিন্তু কথিত গণআদালতের বিচারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত ছিলেন—এমন ব্যক্তিরাই এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন, সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

পার্থক্য শুধু, তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গণআদালত গঠন করা হয়েছিল, এখন সরকারে গিয়ে আবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। বিচার করা হচ্ছে কথিত গণআদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত একই ব্যক্তিদের। এদিকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ প্রমাণের আগেই রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাজনৈতিক নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডেও দিচ্ছেন এই আদালত। যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে যাদের দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে এখনও সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি।

’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম নেতা শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ শিরোনামে লেখা বইয়ে কথিত গণআদালতের বিচারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের তালিকা রয়েছে। এই বইয়ের ১০৩ ও ১০৪ পৃষ্ঠায় গণআদালতের বিচারের জন্য গঠিত ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশনে’র সদস্যদের নাম রয়েছে। গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সমন্বয়কারী ছিলেন বর্তমান আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। গণতদন্ত কমিশনের সেক্রেটারিয়েটের সদস্যদের তালিকায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট জিয়াদ আল মালুম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের নাম রয়েছে। গণআদালতে দায়িত্ব পালনকারীরাই বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার বিষয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

এটি আদৌ সঠিক নয়। কেউ যদি এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করে থাকেন, সেটা হয়তো না জেনেই করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ওই সময়ের গণআদালতের বিন্দুমাত্র সম্পর্কও নেই। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও আন্তর্জাতিক সব রীতি-নীতি অনুসরণ করেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, কেউ যে কোনো পর্যায়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বা বিচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের পর সে বিষয়টি আর না শোনা আমাদের জুডিশিয়াল প্র্যাকটিস। এটা একটা নৈতিক ইস্যু। এছাড়া বিচারব্যবস্থায় এ বিষয়টি যেভাবে নর্মস হিসেবে মান্য করা হচ্ছে, তাতে বিষয়টি ‘ইনকোর্স অব ল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি আইনজীবী হিসেবে কোনো মামলায় দায়িত্ব পালন করলে সরকারের পিপি বা অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেলে সেই মামলার শুনানিতে যান না।

তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনালকেই আমরা স্বীকৃতি দিচ্ছি না। কারণ এটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য গঠিত হয়েছে। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এটি গঠিত হয়নি। সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, গণআদালত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু লোক গঠন করেছিল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালও সরকার গঠন করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও চাই। ১৯৭৩ সালে আইন করা হয়েছিল চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য। পরে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে তাদের ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানে চলে গেছেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকা অবস্থায় আর কোনোদিন যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই ট্রাইব্যুনালকেই আমরা মানি না। এটাকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হিসেবে বলা হলেও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। কম্বোডিয়া, নুরেমবার্গসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হয়েছে। সেই ট্রাইব্যুনালগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আদালত গঠন করে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমরাও চাই। খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী যারা আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন, তারা শুধু আপিল বিভাগেই বিচারের জন্য বসতে পারেন। যারা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন, তারা শুধু হাইকোর্টে বিচারের জন্য বসার এখতিয়ার রাখেন। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে কীভাবে আরেকটি আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এতে সংবিধানের শপথ লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ তারা শপথ নিয়েছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে।

কোনো ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হিসেবে তারা শপথ নেননি। (বিএনএন/এএইচ/এমআর/৯:১৭ঘ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.