কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই
সাত পাঁচ চৌদ্দ। আসলে বার বলা উচিৎ। কিন্তু আমি একটু বেশি বেশি বলিতো তাই। যাইহোক, কম-বেশির কথা পরে হবে, আগে আপনাদের এই বিশ্ব-ভূমন্ডলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু আগ-বাড়িয়ে বলে দিই।
আপনি জানেন কি, পরিবেশ আজ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন ? প্রতিনিয়তই বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর ফলে ক্রমশ গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বাড়ছে সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা। আর এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় অঞ্চল নোনা পানির নিচে তলিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নামে-বেনামের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগও বিনা-দাওয়াতের অতিথি হবে ঘন ঘন।
এ নিয়ে পরিবেশবিদদের ভাবনা চিন্তারও অন্ত নেই। তাদের মতে পৃথিবীর মোট আয়তনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ। আর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো কত কিছুই না করছে !
এইতো কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘কানকুন’ সম্মেলনে সারা পৃথিবীর প্রায় ১৯৪টি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিল। একজনের ঘাড়ের বোঝা অন্যজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, বেহুদা তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি - যুক্তি খন্ডিয়ে আবার নতুন যুক্তি এরূপ নানাবিধ আয়োজনের মধ্য দিয়েই অবসান হলো ফলাফল শূন্য একটি সম্মেলনের। সম্মেলনে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা মূলত অন্ধকে হাতি দেখানোর মতোই।
কিন্তু তাতে কি, বাংলাদেশ তো আর ঘরে বসে থাকতে পারে না। আমরা বাঙালিরা কথায় নয় বরং কাজে বিশ্বাসী। দেশের আয়তন যাইহোক না কেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের একটা বড় অবদান রাখতেই হবে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার অনুসরণ করতে পারে পরিবেশ বান্ধব চেঙ্গিস খানকে।
ও আচ্ছা, চেঙ্গিস খানকে পরিবেশ বান্ধব বললাম কেন? এর পেছনে আছে বিশাল এক ইতিহাস।
কালের সাক্ষী হিসেবে বেঁচে থাকা চেঙ্গিস খান একজন ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। তিনি ছিলেন মোঙ্গল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। প্রায় দেড় শত বছর টিকে ছিল তার সম্রাজ্য। ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে তার সেনারা যে হত্যাযজ্ঞ চালায়, এতে ঝরে যায় প্রায় চার কোটিরও বেশি প্রাণ।
এতে অনেক এলাকা হয়ে পড়েছিল প্রায় মানবশূন্য। ঐ এলাকাগুলোর কৃষিজমি ও বসতবাড়িতে গাছপালা জন্মে ক্রমে তা ঘনজঙ্গলে পরিণত হয়। অনেক এলাকা হয়ে যায় গহিন অরণ্য। এসব বনজঙ্গলের গাছপালা বায়ুম-ল থেকে প্রায় ৭০ কোটি টন কার্বন তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারিত করে। গবেষকদের কাছে এই প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য না হলেও চেঙ্গিস খানের নিজের অগোচরে ঘটে যাওয়া এই প্রক্রিয়াই পরিবেশ শীতল রাখার ক্ষেত্রে প্রথম মানব-সৃষ্ট উপায়।
বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গবেষক জুলিয়া পণগ্রাতজ বলেন, হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তাতে মোঙ্গল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ৭০ কোটি টনকার্বন হ্রাস পাওয়া চমকপ্রদ কিছু নয়।
যাইহোক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ সরকার চেঙ্গিস খানের এই দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারে। প্রত্যক্ষভাবে মানুষ না মারলেও পরোক্ষভাবে মারার নানা নিত্য-নতুন পদ্ধতি চালু করতে পারে। কিছু কিছু অবশ্য চালু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এই যেমন ধরুন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি।
সরকারের উচিৎ নানা অজুহাত অনুযোগ দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়িয়ে দেয়া। বর্তমানে চালের দাম হাফ-সেঞ্চুরি পার করেছে; কিছু দিনের মধ্যে সেঞ্চুরি করবে ইনশাআল্লাহ। অন্য যে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়া-কমা নিয়ে কানামাছি খেলছে তাদের স্রোতের প্রতিকূলে বাঁধ দিয়ে হলেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। এতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা যে না খেয়ে মারা যাবে তা মোটামুটি নিশ্চিত। মানুষ মারার অন্যান্য যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে সেগুলোতেও অতি দ্রুত জল সিঞ্চন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সীমান্তে বিনা অপরাধে গুলি করে মানুষ মেরে বিএসএফ যে ভূমিকা রাখছে, তাতে নতুন নামে নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত বিজিবি এর সদস্যরাও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীমান্তে প্রতি ২ সপ্তাহে ১ জন মারা যায়, একে প্রতি ১ সপ্তাহে ২ জনে উন্নীত করলে মন্দ হয় না। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা যতই চিল্লাপাল্লা করুক না কেন, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের তাদের কাজ একাগ্রচিত্তে করে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর মানা+ব+অধি+আকার কর্মীদের প্রতি আমার বক্তব্য থাকবে এনরূপÑ
তাহাদের কাজ তাহারা করিয়াছে, মানুষ মারিছে হায়।
তাই বলিয়া কি চিল্লাচিল্লি করা, আপনাদের মানায়।
অপরদিকে দেশের সকল সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা নাজুক থেকে নাজুকতর করার জন্য প্রয়োজনে বুলডোজার চালানো দরকার। কেননা, সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে এর দায়ভার কাউকেই বহন করতে হয় না।
আমার প্রদত্ত এই বাস্তব ও কার্যকরী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার কোনটি পছন্দ করবে জানি না, তবে সবগুলোই সময়োপযোগী সন্দেহ নেই। আর মানুষ মারা যাওয়া অর্থই মৃত্যুহার জন্মহারকে অতিক্রম করবে। সেই মৃত মানুষের বেওয়ারিশ সম্পত্তি সরকার নিজস্ব উদ্যোগে বৃক্ষ-রোপনের আওতাভুক্ত করতে পারে।
এতে করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশ সবুজের সমারোহে পরিণত হবে। বাংলাদেশ ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য। বায়ুমন্ডলের কার্বনের পরিমাণ কমাতে এর চেয়ে উত্তম উপায় আর কি হতে পারে ? আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হলেই চারদিকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে যাবে। এমনকি এরূপ অভূতপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেতে পারে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো নোবেল জয় করুক এ স্বপ্নই আমরা বুকে লালন করি।
পরিশেষে, এতটুকু বলতে চাই, নোবেল জয়ের জন্য না হলেও বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার যেন দ্রুত এ পদক্ষেপকে বাস্তবায়ন করে। এ বিষয়ে আমাদের সকলেরই যার যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখতে হবে। এতে করে বাংলাদেশের সব মানুষ মারা গেলেও; কিংবা দেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দিলেও আমাদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে। কেননা, বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা কওে ক্ষুদ্রতর কিছু ত্যাগ করার মধ্যেই প্রকৃত মহত্ত্ব।
লেখক : মিলন মো. রাকিব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।