তোমার সাথে আমার মতের অমিল হতে পারে কিন্তু তোমার মতের সম্মানার্থে আমি আমার জীবন দিতে পারি -ভলতেয়ার
বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে আরাধ্য জিনিস হল একজন মামা । একজন মামা পেয়ে গেলে মামার ভাগীনার আর কোন চিন্তা থাকেন না । মামার ক্ষমতা এমন থাকে, যে ভাগিনার আর দ্বিতীয় কোন চিন্তা ধান্ধার প্রয়োজন পড়ে না । তাই মামাই হলেন আজ সবচেয়ে আরাধ্য এবং মামা ভাগিনার জন্য কাজ করেন আলাদীনের প্রদীপের মতো । এখন এই আরধ্য মামার রূপ ,মামার কাজের ধরণ ,মামাকে পেতে হলে কি করা দরকার এই নিয়ে একটু বলি ।
মনে করুন আপনার চাকরির দরকার । এখন আপনা যে কাজটি সর্বাগ্রে করতে হবে তাহলোএকজন মামা খোজাঁ । ধরুণ আপনি একজন মামা পেয়ে গেলেন । প্রথমে মামা আপনাকে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বলবেন । আপনার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে উনি প্রস্তুত আছেন ,এমনকি রক্ত দিতেও ।
কিন্তু মামা একটা বিষয় নিয়ে নিজের অপারগতা প্রকাশ করিবেনই আপনার কাছে । বলবেন আমি তোমার জন্য সব কিছু করতে পারি । কিন্তু...
ভাগীনা বলবে মামা কিন্তু মানে ? আপনি আমার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন আর আপনার জন্য আমি কিছুই করতে পারব না ,তা কেমনে হয় । মামা আপনি থামবেন না শুধু বলুন । মামা শুধরাবেন; না তেমন কিছু না ,আসলে একটু টাকা পয়সার ব্যাপার -স্যাপার ।
বলেই নিজের মহানুভবতার একটু মিথ্যা বুলি আউড়াবেন । বলবেন আমার কাছে থাকলে আমি নিজেই দিয়ে দিতাম । আসলে বলতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে । কিছু মনে কর না ভাগিনা । ভাগনাতো জানে ।
জেনেই এসেছে । ভাগিনা বলবে মামা বলেন কতো লাগবে আমি দেব, শুধু মামা কাজটা দরকার । মামা আপনি না হলে আমার চাকরি পাওয়া যে সম্ভব না । মামা আসলে আপনি ছাড়া আমার আর কোন রাস্তা নেই । মামা বলবেন না না তোমার কোন চিন্তা করার দরকার নেই ,যেহেতু আমি আছি ।
এভাবেই শুরু হয় মামা-ভাগিনার কালো বাজারি খেলা ।
মামার সাথে সম্পর্ক দিয়ে আজ মানুষের শ্রেণি গত পার্থক্য নির্ণয় করা হয় । যার যত বেশি মামা আছে তিনি সর্বাপেক্ষা কৃতিতের অধিকারী,উচুঁ শ্রেণির আধিকারী । মামা বিহীন যারা তাদের আর কোন মূল্যায়নই নেই সমাজে । যেমন হঠাৎ তোমার একটা পাসপোর্টের দরকার পড়লো ।
দেখবে তোমার মামা না থকলে কতো লাঞ্চনার শিকার হতে । দিনের পর দিন যাবে মামা হাত না ধরলে তোমার পাসপোর্টের আর দেখা মিলবে না । এবতাবস্তায় দেখবে পরিচিত একজন মামার হাত ধরে তোমার পরে আবেদন করে কাজ করে ফেলবে । জিজ্ঞাস করিলে বলবে আরে আমার অমুক ভাই বা চাচা এটা করে দিয়েছেন । বলেই নিজের মামার তালিকার গুনগান নিয়ে গান শুরু করবে ।
বলবে আমারতো কিছুই করতে হয়নি, আমার অমুক ভাই আমার সব কিছু করে দিয়েছেন । আসলে আমার সবখানে সব স্তরে লিংকে ভরা ,শুধু ফোন করলেই চলে । কিন্তু একটি বারও বলবে না সেই ভাইয়ের বা মামার সাথে উনার বাম হাতের সম্পর্কের কথা । শুনে না পাওয়া লোকটি নিজেকে ভর্ৎসনা করবে সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ।
এই বিষয়টিকে ভারতের অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ''দুর্নীতির আভিজাত্য ''হিসেবে অভিহিত করেছেন ।
''সম্প্রতি এই কৌলীন্যলাভের ব্যাপারটারই চমৎকার নিদর্শন দেখলাম এক বন্ধুর আচরণে । সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় একটা দারুণ জাঁকালো কাজ বাগিয়েও সে চারিদিকে ছড়িয়েছে যে ওটা সে পেয়েছে মামার জোরে । ওতে নাকি ইজ্জত বাড়ে সহকর্মীদের কাছে,বিশেষত অধস্তনদের কাছে । ''
লেখক আরেকটি বিষয় বলেছেন যার প্রমাণ হাড়ে হাড়ে পাওয়া যায় আমাদের দেশে । ''দুর্নীতি একটা দেশকে যখন ছেয়ে ফেলে ,তার প্রথম অশান্তির ফল দাঁড়ায় এই যে অনিচ্ছুক লোকও তখন দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ।
''(অর্থনীতির যুক্তি তর্ক ও গল্প)
বিষয়টা দাঁড়াল এই যে দুর্নীতি সবাই করে না । অনেক সময় কিছু মস্তানরা ভয় ডর দেখিয়ে ভাল মানুষকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করেন । তখন ভালো মানুষ গুলোকে দুর্নীতি করা ছাড়া আর বিকল্প কোন রাস্তা থাকে না । জান ,মান সম্মান বাঁচাতে তাদেঁর কে করতেই হয় ।
এখন প্রয়োজন এই মামাদের আস্তানার মূলচ্ছেদ করা ।
মামা ছাড়া যে কাজ হয় এই বিশ্বাস মানুষের অন্তর থেকে আজ মুছে গেছে সেটি ফিরিয়ে আনা । না হলে দুর্নীতি কমবে না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।