নিজেকে জান এবং প্রকাশ কর!!
ওরা পুলিশের তালিকাভুক্ত রিকশাচোর। রিকশা চুরি করতে করতেই তারা এখন কোটিপতি। ৮-১০ বছর আগেও ঢাকায় রিকশা চালাতো। এখন তারা রিকশাচালক ও মালিকদের নেতা। ঢাকায় তাদের আছে একাধিক বাড়ি, প্লট, দোকানের পজেশন, রেন্ট-এ কারের ব্যবসা ও বিশাল রিকশার গ্যারেজ।
৩ জনের প্রত্যেকের নামেই ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা গ্রেপ্তারও হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। জেল থেকে বেরিয়ে আবার পুরনো রিকশা চুরির পেশায় ফিরে গেছে তারা। অবশ্য পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য তারা গড়ে তুলেছিল রিকশাচোর প্রতিরোধ কমিটি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রিকশাচোর প্রতিরোধ কমিটি অবৈধ ঘোষিত হলে তারা নাম পরিবর্তন করে সংগঠনটির নাম দেয় বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন। এই ফেডারেশনের আওতায় আছে ২ শতাধিক রিকশাচোর। ঢাকায় কোন রিকশা চুরি হলে এই তালিকভুক্ত ৩ চোরের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রিকশা ছাড়িয়ে নিতে হয়। এভাবে বছরে তারা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে তাদের আয়ের আরেকটি বড় উৎস হচ্ছে- রিকশার নম্বরপ্লেট ও পরিচয়পত্র বিক্রি।
অব্যাহত যানজট বাড়ার প্রেক্ষিতে ঢাকায় রিকশার লাইসেন্স বন্ধ রেখেছে সরকার। তারপরও রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। এসব অবৈধ রিকশার নম্বরপ্লেট ও পরিচয়পত্র দিচ্ছে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন। ঢাকায় এখন প্রায় ৬ লাখ অবৈধ রিকশা আছে। প্রতিটি রিকশার নম্বরপ্লেট ও পরিচয়পত্র বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এছাড়া প্রতিমাসে প্রতিটি রিকশা থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এভাবে বছরে তাদের আয় হয় প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। এই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের নেতারা। অথচ কোন রিকশা মালিক বা শ্রমিক স্বেচ্ছায় এই সংগঠনের সদস্য হয় না। সদস্য না হলে মামলার হুমকি এবং রিকশা চুরির ভয়ে অনেকে সংগঠনের সদস্য হয়।
সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কোথাও লেখা নেই সদস্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে। ফলে বিপুল পরিমাণ চাঁদার টাকা আয় ব্যয়ের কোন হিসাব সংগঠনের কাছে নেই। তবে সূত্র জানিয়েছে, আদায়কৃত টাকার সবচেয়ে বেশি ভাগ পায় ফেডারেশনের সভাপতি আলী আহমদ, সহ-সভাপতি মমতাজ মজুমদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদ। তবে এ টাকার ভাগ নিয়ে ক্ষান্ত নয় তারা। আরও বেশি আয়ের জন্য তারা নিয়মিত রিকশা চুরি করে চলেছে।
এজন্য মাঠ পর্যায়ে এদের হয়ে কাজ করছে প্রায় ২শ’ রিকশাচোর। ঢাকার যেখান থেকেই রিকশা চুরি হোক না কেন এই ৩ রিকশাচোরকে টাকা না দিয়ে রিকশা ছাড়ানোর উপায় নেই। ঢাকায় হাজার হাজার রিকশার পেছনে এই সংগঠনের প্লেট লাগানো হয়। প্লেটে ০১৬৪৩১৩২৫৪৪, ০১৮১৮১১৫৩৮১ ও ০১৫৫৬৪০৩০৪৭- এই তিনটি মোবাইল নম্বর দেয়া। প্লেটে প্রধান কার্যালয় হিসাবে লেখা হয় ১৮৫ উত্তর কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী ঢাকা।
রিকশা চুরি হলে এই ৩টি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে হয়। তাহলেই মেলে রিকশা। গতকাল তাদের ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিলাস বহুল অফিস। আধুনিক সব আসবাবপত্রে সজ্জিত অফিসে বসে আছে তালিকাভুক্ত রিকশাচোর আল আহমদ, শহীদ। অফিসের দেয়াল জুড়ে লাগানো বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে তাদের ছবি।
তবে তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তারা সে সরকারি দলে ভিড়ে যায়।
সম্পদ: রিকশাচোরের গডফাদার বিলুপ্ত রিকশাচোর প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বর্তমানে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি আলী আহমদের যাত্রাবাড়ীর ১৪/এইচ শেখদী আবদুল মোল্লা স্কুলের সামনে ৫ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর ২ তলা সুরম্য ভবন। বাড়ির নেমপ্লেটে আলী আহমদের নাম। এই বাড়ির দাম বর্তমানে প্রায় ২ কোটি টাকা।
এছাড়া রাজধানীর কাজলা ভাঙ্গা প্রেসের কাছে তার আরও ১টি বাড়ি ও প্লট রয়েছে। ১৮৫ উত্তর কুতুবখালী ও রায়েরবাগ পুনম সিনেমা হলের উত্তর পাশে তার দু’টি রিকশা রাখার গ্যারেজে। দু’টি গ্যারেজই ব্যবহৃত হয় চোরাই রিকশা রাখার কাজে। যাত্রাবাড়ীর যে জায়গায় এখন আলী আহমদের কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ সেই যাত্রাবাড়ী কলাপট্টির কাছেই রাস্তার পাশে বসে রিকশার মিস্ত্রি হিসাব কাজ করতো আলী আহমদ। ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে সে মাসিক ৩ লাখ টাকার বেশি ভাগ পায়।
ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মমতাজ মজুমদার ঢাকার রিকশাচোরের অন্যতম প্রধান গডফাদার। মাতুইয়াল লবণ ফ্যাক্টরির কাছে তার বিশাল রিকশার গ্যারেজ। সেখানে চোরাই রিকশা রাখা হয়। গ্যারেজ সংলগ্ন একটি বিলাস বহুল অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকে মমতাজ মজুমদার। সূত্র জানিয়েছে, যাত্রাবাড়ী ও গাজীপুরের তার ৫টি প্লট রয়েছে।
১০-১৫টি সিএনজি বেবি ট্যাক্সিরও মালিক সে। ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ নিজেকে ক্ষমতাবান সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসে। ৫ বছর আগের গোবেচারা রিকশাচালক শহীদ এখন রিকশা ও ভ্যান মালিকদের নেতা। নারায়ণগঞ্জের পাগলা দেলপাড়া স্কুলের সামনে তার ৩টি বহুতল বাড়ি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে তার রয়েছে প্রায় ৫০ বিঘা ধানি জমি।
মীর হাজীরবাগ মোবারক চেয়ারম্যানের গলিতে তার চোরাই রিকশা রাখার গ্যারেজ।
বক্তব্য: তালিকাভুক্ত রিকশাচোর আলী আহমদের কাছে রিকশা চুরির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেননি। অভিযোগ মিথ্যা এটাও বলেননি। তিনি বলেন, সংগঠন করতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। এতে কিছু যায় আসে না।
তবে রিকশা চুরির অভিযোগে জেল খাটার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। অপর দুই অভিযুক্তের মধ্যে শহীদও একই কথা বলেন। তিনি নিজেকে রিকশা মালিক শ্রমিকদের নেতা দাবি করে অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, বেশ কিছু বিতর্কিত এবং অবৈধ সংগঠন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মমতাজ মজুমদারের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করেননি।
মানবজমিন থেকে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।