ওয়াসিকুজ্জামান অনি
তখন সন্ধ্যে ছিলো .........
একে একে জলে উঠছিলো শহর জোড়া বাতিগুলো ।
নদীর ধারে বসে শেষবারের মতো
আমার আঙ্গুল তোমার আঙ্গুলে
জড়াজড়ি করেছিলো ।
বড় বিষন্ন ছিলো সে সন্ধ্যে .........
সেই বিকেল থেকে আমি আর তুমি
বসেছিলেম পাশাপাশি ,
কোন কথা ছিলোনা ।
নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেম
দুজনে দুজনের ক্রন্দসী চোখে ।
পরিচয়ের সেই দশটি বছরে
এই প্রথমবার এবং শেষবারের মত
আমাদের মাঝে কোন কথা হয়নি ,
তারপর আর দেখাও হয়নি।
জানো আমরা দুজনে সেদিন জানতেম
এই শেষ দেখা,
গলার কাছে কষ্টরা এসে দলা পাকিয়ে
কথা বন্ধ করে দিয়েছিলো,
হয়তো তোমারো ঠিক তাই।
তুমি হিন্দুর মেয়ে অরুনিমা,
আমি মুসলমানের ছেলে মাইদুল
বলে তাই সব ভেস্তে গেলো,
ভালোবাসা ধর্মের তোড়ে ভেসে গেলো।
পরদিন সকালে তোমরা সবাই
ভারতবাসি হলে,
আমরা রয়ে গেলাম
পাকিস্তানের বুলি ধরে।
দেশ ভাংলো
সাথে ভেঙ্গে নিলো তোমায় আমায়।
কেমন আছো তুমি জানিনে...
আমি বেচে আছি,
মাথায় তেল দিয়ে
সিথি কেটে রোজ সাইকেল চেপে
ইস্কুলে পড়াতে যাই,
ধর্ম কর্ম করি,
নিজে রান্না করি, খাই দাই ঘুমাই।
এ জীবনে আর কাউকে জড়াইনি অরুনিমা,
যা ছিলো আকর্ষন, যা ছিলো ভালোবাসা,
সেত কবেই তোমার সাথে চলে গেছে।
প্রতিদিন তোমাদের পুরোন বাড়ীটার পাশ দিয়ে গেলে
থমকে দাড়াই,
মনে হয় এক্ষুনি তুমি এসে দাঁড়াবে বুড়ো আমগাছটার নিচে
ছাপা শাড়ী পরে,
যেমন দাড়াতে যখন আমি কলেজ যেতাম,
তারপরেই ভুল ভেঙ্গে যায়,
ওবাড়ীতে আজ কি যেন একটা সরকারী দপ্তর হয়েছে।
সেদিন সন্ধ্যায় এতো বাতাস ছিলো,
নদীর ধারে বাতাসের শব্দে সব কান্না হারিয়ে গিয়েছিলো,
একসময় আকাশে তারারা এসেছিলো,
তুমি হাত ছাড়িয়ে ধিরে ধিরে হেটে হেটে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিলে,
সাথে আমার সব স্বপ্নও মিলিয়ে গিয়েছিলো আকাশে,
জানো অরুনিমা সেদিন রাতে কতক্ষন
নদীর ধারে বসেছিলাম নিজেও জানিনা,
অদ্ভুত হাহাকারে
একা একা অনেক ক্ষন কেদেছিলেম,
বাড়ী গিয়ে তুমিও হয়তো তাই।
আজ এই মধ্যবয়সে
তোমায় নিয়ে ভেবেই দিন কাটে আমার,
তুমি ভালো আছত অরুনিমা?
চোখে কি চশমা নিয়েছো?
তোমার ছেলে মেয়েরা কি বড় হয়েছে?
নাতি পুতিতে তোমার ঘর কি ভরে আছে?
যেখানেই থাকো ভালো থেক অরুনিমা......।
অনি
১৯/৪/২০১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।