সুন্দরঃ তুমি গোছগাছ হও আমি উদাসীনতা গোছাই
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' । ২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ।
সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন। ১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম।
তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
আফগানিস্তানের এক গন্ড গ্রাম। যেখানে সভ্যতার আঁচটুকু লাগেনি সেইরকম গ্রামে এই গল্পের সূত্রপাত। যুদ্ধ...দাঙ্গা...অভ্যন্তরীণ কলহে দীর্ণ একটা দেশের এক অসহায় অঞ্চলের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের কথা।
সামীরার ক্যামেরা দেখলো পরিতক্ত্য বাঙ্কারের মধ্যে থাকে অগণিত বাচ্চা। যাদের মা বাবা কেউ নেই...যারা সবাই বিগত যুদ্ধে মারা গেছেন। যে সব বাচ্চারা রোজ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। তাদের সামনে এক অবস্থাপন্ন বৃদ্ধ আফগান এসে একটা প্রস্তাব রাখেন। একটা সুস্থ সবল ছেলে চাই।
কাজ আছে। কাজ করতে পারলে দৈনিক এক ডলার। সবাই পরীক্ষার জন্য হাজির হয়। একটা ছেলেকে তার মধ্যে থেকে পছন্দ করেন বৃদ্ধ। যে তাঁর ছেলেকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাবে স্কুলে...বাজারে...খেলার মাঠে।
সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে সে। কিন্তু যে ছেলেটাকে বাছা হয় সেও তো শারিরীক নানা অক্ষমতার শিকার। যে পিঠে নিলো আর যে পিঠে উঠলো তারা যেন একই মেরুর বাসিন্দা হয়ে দুজন কত দূরের। একজনের কেউ নেই আর এক জনের বাবা আছে...বোন আছে...অর্থ আছে কিন্তু তার পা দুটো নেই...মা নেই...এইসব হারিয়েছে সে যুদ্ধে।
তারা দুজনে কখোনো বন্ধু আবার কখোনো মনিব-ভৃত্য।
কিন্তু এই সম্পর্ক খুব একটা বেশি দিন মধুর থাকে না। মনিবের নানা রকম খেয়ালী উদ্ভট খেলায় শরিক হতে হয় দুপায়ের ঘোড়াটকে। মনিব শুধু নয় তার বন্ধুদেরও চড়াতে হয় পিঠে। সবাই তো সত্যিকারের ঘোড়ার পিঠে চড়ে...কিন্তু মানুষ ঘোড়া। চড়েছে কেউ? সে এবার ভাড়া খাটায় তার ঘোড়াকে।
আর সেই ছেলেটা ...লাগাম মুখে দিয়ে সে আস্তে আস্তে যন্ত্রণায়...ঘেন্নায়...কষ্টে... কুঁকড়ে যেতে থাকে।
তার এই কষ্টের নীরব দর্শক থাকে এক ছোট্ট মেয়ে। যে গ্রামের রাস্তায় ভিক্ষে করে। যার কথা আমরা একটুও জানতে পারি না, যে কোনো কথা বলে না। শুধু হাত বাড়িয়ে থাকে ভিক্ষার।
আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা কান্না।
শেষ পর্যন্ত ছেলেটার চাকরী থাকে না। কোনো একদিন প্রবল এক শীতের সকালে পরিতক্ত্য বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সে দেখে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।
তারা যাচ্ছে শীতের দেশ ছেড়ে উষ্ণতার দেশে।
কিন্তু এই ছেলেটা কোথায় যাবে? কোন দেশে? তার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।