আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই আমাগো ঈদ

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ।

ঈদের দিন সক্কালবেলায় কুন জাগাটা সবচে’ ভালা কন দিনি? হুঁ, বায়তুল মুকাররম। ক্যান কমু? চাইর-পাঁচটা জামাত হয়।

সকাল আটটা থেইকা শুরু, নয়টা, দশটা, এগারোটা - জামাত হইতে আছে তো হইতেই আছে। হুজুরে সব বয়ানে একই কথা কয়, হে হে। শুন মুমিন মুসলমান, মোরা সবাই একসমান, এইসব। পেরতেকবার মুনাজাত অয় অনেক লাম্বা। যারা পশ্চিম দিক আছাড়ও পড়ে না, হেরাও চউক্ষের পানি ফেলায়, আচানক।

তয় হেইডা আমরার দ্যাহার বিষয় না। আমরার কাম হইল গেটের বাইরে আর সব পুলাপানের মতন দাঁড়াইয়া থাহা। নামায পইড়া মাইনষেরা হায় রে কুলাকুলি করবার লাগে! যারে চিনে হ্যার লগে তো করেই, যারে চিনে না হ্যার লগেও মুলাকাত। আর ঈদের দিনে সবারই “দরাজদিল”। পেরতেক জামাতে একশো ট্যাকার মতন ইনকাম হয়।

একেকজন বাইর হয়, হ্যারে ঘিরা ধরি, বখশিশ না দিয়া যাইব কই? নামায শ্যাষ হইলে আমি, আবুইল্যা, খোকন, রাজু – সবাই “চডপডি” খাইতে যামু। হুই যে মামু, গাড়ি লইয়া বহে, হ্যার “চডপডির” জবাব নাই। অ্যামনে দিনে পনেরো ট্যাকা পেলেট, কিন্তুক ঈদের সময় বিশ ট্যাকা। তয় ঈদের দিন আর তাড়াইয়া দিতে পারবো না, আমাগো পকেটে ঐদিন ট্যাকা আছে। আবুইল্যা কইছে অয় তিন পেলেট খাইব।

প্যাট খারাবের মতলব আর কি। বাজান এইবার আমারে একডা নয়া “সাট” দিছে। আমি “কেস” চাইছিলাম, কয় ট্যাকা নাইক্কা। আমার বুইনেরে একডা রাঙা ফ্রক কিন্না দিছে ঠিকই। বাজানে অরে আমার চেয়ে বেশী আদর করে।

“ছুডু” তো, হেয়ার লাইগা। আমারে কইছে “কেস” পরেরবার কিন্না দিব। চডপডি খাইয়া যামু ডিমের লটারিতে। নাম হুনেন নাই? অইহানে বহে ডিমের লটারি। একডা ডিম কিনতে অয়, তারপর চাক্কা ঘুরাইতে অয়।

“লাইগা গ্যালে” এক হালি ডিম পাওয়া যায়। “হেব্বি” মজার। আমি একবার দুইডা ডিম পাইছিলাম। এইবার দ্যাহা যাউক। অ্যারার পর শহরে ঘুরবার বাইর হমু।

অ্যামনে তো “ডাহা” শহরের দিকে চাওন যায় না। ঈদের দিন গাড়িঘোড়া একটু কম থাহে তো, ঘুইরা আরাম। সারাদিন এইহানে অইহানে ঘুরুম, রাজার লাহান। চন্দ্রিমায় যামু, ধানমুন্ডি যামু, লেকের পাড়ে হাওয়া খামু। পুলারা বান্ধবী লইয়া ঘুরতে আহে।

শরম কম, রঙ্গতামাশা দেইহা “মজা লমু”। সইন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরুম। একডা কথা কইয়া দেই, কাউরে কইয়েন না কিন্তুক। সন্ধ্যার পর এক “চিপায়” গিয়া বন্ধুরা সব বিড়ি খামু। আমার না, আবুইল্যার বুদ্ধি।

আমরা দ্যাখতে ছুডু, কিন্তুক আমরার বয়স আছে। আর বিড়ি না খাইলে “পুরুষ” অওয়া যায়, কন? আরেকবার টান দিতে গিয়া বাজানের কাছে ধরা খাইছিলাম, “চ্যারা” দিয়া ক্যাঁচা দিছিল। এইবার লুকাইয়া খামু, ধরা খাওয়ার কুন উপায়ই নাই, হে হে। বাজানে বিড়ি খায়, খাইয়া সারারাইত হক্কর হক্কর কইরা কাশে, কিন্তুক আমারে খাইতে দ্যাখলেই সানডে মানডে কোলোজ কইরা দিবার চায়। আবডালে না খাইয়া উপায় নাই।

রাইতে বাসায় পুলাউ খামু। “টিবি” দেহুম। আমাগোর টিবি নাই, সুলেমান চাচার দুকানে আছে। ডিশও আছে। রাইত দশটায় তিশার একটা নাটক আছে, ঐডা দেহুম।

আমার “ফেবারিট” নায়িকা। তারপরে আর কী, ঘুম। বড়লোকের ঈদ আট-দশদিনের, আমরা গরীব তো, আমাগো ঈদ এক দিনেরই। পরদিন থেইকা আবার হেই সক্কালে বস্তা নিয়া বাইর হইতে হইব, ময়লা ঘাঁটতে হইব। আইচ্ছা ভাইজান, আমাগো ছবি তুলবেন না? কইলেন “টুকাইগো ঈদ” নামে কী একটা ল্যাখবেন পত্রিকায়? অনেকগুলো পিচ্চি সার বেঁধে দাঁড়ায়।

খোকন, রাজু, আবুল, রতন – সবাই। সবার মুখে আকর্ণবিস্তৃত হাসি। সাংবাদিক ফজলুল পাশা ছবি তুলে নিলেন। ঈদ উপলক্ষে ভিন্নধর্মী ফিচার হবে একটা – ঈদ সংখ্যায় যাবে। নাম “টোকাইদের ঈদ”।

(২৫ জুলাই, ২০১৩)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।