যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।
কয়দিন ধরে গরম পড়েছে প্রচণ্ড । দুপুরে হল থেকে বের হতে ইচ্ছা করেনা । তবু বের হতে হয় ।
একটা বাচ্চাকে পড়াই । মাস শেসে যে কয়টা টাকা হাতে পাই ,তা দিয়েই পরের মাস টা কেটে যায় । আজকের দুপুরটা ঝিম ধরা । কোন বাতাস নেই । রাস্তায় বের হলাম ।
রিকশাও নাই, দূরে এক রিকশাওয়ালা ঝিমাচ্ছে । যাবে না বোধহয় । হেটেই যেতে হবে শাহবাগ পর্যন্ত । আস্তে আস্তেই হাটি । দিনগুলো চলে যাচ্ছে নীরবে , নিশ্চুপে , নিভৃতে ।
কাকগুলো ডাকছে শুধু । বিকেল বেলা আসার সময় অনেকগুলো কাক উড়তে দেখি প্রতিদিন এখানে । অনেক উঁচুতে । দিনের সবচেয়ে সুন্দর কাটে আমার বিকালটা । হাঁটতে ভালো লাগে ।
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা পাখির মতো আমিও ফিরি আমার আস্তানায় , পথের শেষে । পহেলা বৈশাখ সামনে , বুঝা যায় । রাস্তার পাশে চুরির মেলা বসেছে । আমি দেখে যাই মানুষগুলোকে , তাদের জীবনকে । নিজেরটা নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগেনা।
জোর করে মাথা থেকে সরিয়ে দেই। বাবা মার কথা মনে পড়ে অনেক ,এতদিন পরে। নিজেকে হঠাৎ বড় অসহায় লাগে । বুক ভরা আশা নিয়ে বসে থাকা মানুষগুলো বুঝে না , কি অবহেলায় কেটে যাচ্ছে আমার দিনগুলো ।
সন্ধ্যার সময় যখন ফিরে আসি , তখন আমার খুব ইচ্ছা করে কোন নদীর ধারে বড় কোন গাছের ছায়ায় বসে থাকতে ।
মৃদু বাতাসে নদীর স্বচ্ছ জলের কাপন দেখতে ইচ্ছে হয় । হাসি মনে মনে । স্বপ্নগুলো কত অবাস্তব । আমার আর নদীর পারে যাওয়া হয় না ।
সন্ধ্যা শেষে রুমে এসে নেট খুলে বসি ।
শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি স্ক্রিনের দিকে । ব্লগের লেখাগুলি পড়তে ভালই লাগে । বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছি । সবার মাঝে নিজেকে কত অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হয় । অস্তিত্ব থেকেও অস্তিত্বহীন অনুভুতি নিজেকে বার বার নাড়া দিয়ে যায় ।
যখন অনেক রাত হয় , খোলা আকাশের নিচে যেতে ইচ্ছে করে । গেটটা খুলে মাঠের বেঞ্চের উপরে বসি । দূরে , বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের উপরে নিয়নের স্নিগ্ধ আলো এসে পড়ে , বড় মায়া লাগে ।
ঘুম আসেনা , একলা জেগে থাকি । সাদামাটা রাতগুলিও স্মৃতিতে পাকাপাকিভাবেই ছাপ ফেলে যায় ।
আমি নিশ্চিত , কোন সুন্দর রাতের কথা ভাবলে এই নিঃসঙ্গ রাতগুলিই চোখে ভাসবে আমার ।
স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবতায় নামি । হলের ক্যান্টিনে মধ্যরাতেও আলো জ্বলে । সবাই যখন ঘুমায় , মধ্যরাতেও ক্যান্টিনের ছোট ছোট ছেলেরা সিংগারা ভাজে , পরের ভোরের জন্য । সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর ওরা যখন ঘুমাতে যায় বেঞ্চিগুলোতে , তার ঘণ্টা খানেক পরই ভোরের আলো ফুটে ।
খুব ইচ্ছে করে , ওদের ডেকে ওদের স্বপ্নগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করতে । সাহস পাই না । যার চোখে স্বপ্ন থাকে , বিষণ্ণতা তারই জন্য অপেক্ষা করে ।
আরেকটা নতুন দিন শুরু হবে । ভোরের আলো , রাতের ছেলেমানুষি চিন্তাগুলো আড়াল করে দিবে গোপনে।
আহ , জীবন কত আনন্দের । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।