সত্যই সুন্দর এবং সুন্দরই জীবন।
নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদে আজ রোববার রাত থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান উৎসব। মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব পরিষদের কার্যকরী সদস্য তারাপদ আচার্য জানান, স্নানের লগ্ন শুরু হবে আজ রাত একটা আঠারো মিনেট দশ সেকেন্ড এবং তা আগমীকাল সোমবার রাত বারোটা বিশ মিনিট পর্যন্ত লগ্ন থাকবে। তিনি জানান তেরটি স্নান-ঘাটে সমাগত ভক্তবৃন্দগণ স্নান করতে পারবেন। এই তেরটি ঘাট হলো - প্রেমতলা ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট , রাজ ঘাট , বরদেশ্বরী ঘাট, গান্ধী ঘাট, জয়কালী ঘাট, পাঠানকালী ঘাট, শ্রীরামপুর ঘাট, কালীবাড়ী ঘাট, কালীদহ ঘাট, শঙ্কর ঘাট, শিখরী ঘাট ও রক্ষাকালী ঘাট।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে বাংলাদেশের লাঙ্গলবন্দ নামক স্থানে ব্রম্মপুত্র নদে দেশ-বিদেশের বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তপ্রাণের আগমন ঘটে। এই সকল ভক্তবৃন্দের বিশ্বাস এ সময় ব্রম্মপূত্র নদে স্নান করলে খুবই পুন্য হয় এবং এ স্নানে ব্রম্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়। তাদের বিশ্বাস চৈত্রের শুক্লাষ্টমীতে জগতের সকল পবিত্র স্থানের পুণ্য ব্রম্মপুত্রে মিলিত হয়। আর এ নদের জল স্পর্শমাত্রই সকলের পাপ মোচন হয়। যে ব্যক্তি এই পবিত্র জলে স্নান করে সে চিরমোক্ষ লাভ করে।
এই স্নানই ’অষ্টমী স্নান’ নামে অভিহিত।
লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী ¯নান সম্পর্কে একটি দীর্ঘ পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। তা হলো এ রকম ঃ
জমদগ্নি মহামুনির এক পরমাসুন্দরী স্ত্রী ছিলো, যার নাম ছিল রেণুকা। ঘটনাক্রমে মার্তিকাবর্ত রাজ্যের রাজাকে সস্ত্রীক জলবিহার করতে দেখে মুনি-স্ত্রী রেণুকার কামস্পৃহা জাগ্রত হয়। মহামুনি জমদগ্নি স্ত্রীর পর-পুরুষের প্রতি এই আসক্তি দেখে রাগান্বিত হয়ে পুত্রদেরকে তাদের মাতাকে হত্যার আদেশ করলেন।
রেণুকার পাঁচ পুত্রের মধ্যে মাতৃহত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজ করতে কেহ রাজি হলো না। মুনি তার প্রিয় পুত্র পরশুরামকে আদেশ করলে, পরশুরাম কুঠারের এক আঘাতে তার মাকে হত্যা করেন। কিন্তু মাতৃহত্যার পাপের শাস্তি হিসেবে পরশুরামের হাতে কুঠারটি আটকে রইল। মাতৃহত্যার ভয়াবহ পাপের অনুশোচনা নিয়ে তিনি তীর্থ থেকে তীর্থে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
দেবতা ব্রম্মপুত্রের মাহাত্ম্যের কথা পরশুরাম জানতে পারেন।
ব্রম্মপুত্র তখন হিমালয়ের বুকে হ্রদরূপে লুকিয়ে ছিলেন। পরশুরাম সেই হ্রদের জলে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে আটকে থাকা কুঠারখানা খসে পড়ে। ব্রম্মপুত্রের এই অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন পাপহরণকারী জল যাতে সাধারণ মানুয়ের উপকারে আসে, এ উদ্দেশ্যে পরশুরাম সেই জলধারাকে সমতলে নিয়ে আসার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। তখন তিনি কুঠারটি লাঙ্গলের ফলক হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই ফলক দিয়ে নালা সৃষ্টি করে ব্রম্মপুত্রের পবিত্র জলধারাকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসেন।
দীর্ঘ সময় পথ পরিক্রমায় ব্রম্মপুত্রের জলধারাকে বিভিন্ন জনপদ ঘুরিযে অবেশেষে বর্তমান লাঙ্গলবন্দে এসে ক্লান্ত হয়ে থেমে যান এবং লাঙল চষা বন্ধ করেন। লাঙল চষা বন্ধ হওয়াতে এই স্থানের নাম হয়েছে লাঙ্গলবন্দ।
এরপর পরশুরাম পবিত্র ব্রম্মপুত্র নদের অলৌকিক শক্তি ও মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন তীর্থস্থানে ভ্রমণে যান। কিন্ত , যেখানে এসে ব্রম্মপুত্র থেমে গেলো তার কাছাকাছি দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল এক সুন্দরী নদী শীতলক্ষ্যা। ব্রম্মপুত্র সুন্দরী শীতলক্ষ্যার রূপ-যৌবনের কথা জানতে পেরে শীতলক্ষ্যার দিকে ধাবিত হলেন।
ব্রম্মপুত্রের এহেন ভয়ঙ্কর ও বিশাল মূর্তি দেখে সুন্দরী শীতলক্ষ্যা তার সমস্ত সৌন্দর্য আড়াল করে বৃদ্ধার রূপ গ্রহণ করেন এবং নিজেকে বুড়িগঙ্গারূপে উপস্থাপন করেন। ব্রম্মপুত্র বুড়িগঙ্গারূপী শীতলক্ষ্যার সাথে মিলিত হয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
পরশুরাম তীর্থভ্রমণ শেষে ফিরে এসে দেখেন, যে ব্রম্মপুত্রকে তিনি মানুষের উপকারার্থে সমতল ভূমিতে নিয়ে এসেছিলেন, যাকে তিনি জগতের শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম নদরূপে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, সেই নদ শীতলক্ষ্যার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তাই, পরশুরাম দুজনকে অভিশাপ দিলেন। কিন্তু, ব্রম্মপুত্র পরশুরমের যে উপকার করেছিলেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ক্ষমা চাইলেন।
পরশুরাম ব্রম্মপুত্রের পাপ মোচনের প্রতিদিনের অলৌকিক শক্তি হরণ করে নিয়ে শুধুমাত্র বছরের একটি দিনেই তার অলৌকিক শক্তি অক্ষুন্ন রাখেন। চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতেই থাকে সেই অলৌকিক শক্তি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।