আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৬০ রানের পরাজয়ে সঙ্গী কিছু আক্ষেপ

বাংলার জনগন

যেসব ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে, সেগুলোর কথা আলাদা। না হলে, বাংলাদেশের প্রতিটি ইনিংসই এক একটি আক্ষেপের নাম। এ প্রসঙ্গে অবশ্য বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানের ইনিংস দুটি আসবে না। ওই দুটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখলে বাংলাদেশের ইনিংস শেষে একটি কথাই বারবার উচ্চারিত হয়, ‘ইস...“ওমুক” যদি আর একটু ভালো খেলত। ’ আজ মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শেষে এমন কথাই ঘুরে ফিরে এল, ‘ইস...ইমরুল, রকিবুল, নাফীস যদি একটু ভালো খেলতেন’, আহা...তামিম যদি ওই মুহূর্তে অমন শট না খেলতেন’, সাকিব যদি তাঁর ইনিংসটিকে আর একটু টেনে নিয়ে যেতে পারতেন।

দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার ২৭০ রানের জবাবে ৫ উইকেটে ২১০ করে ৬০ রানে হার। নানা ধরনের আক্ষেপ কি মনের মধ্যে ভিড় করছে না? বাংলাদেশের ক্রিকেটের কান্না যে ব্যাটিং—সেটা নতুন করে না বললেও চলে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দল এই যুগের ওয়ানডেতে ২৫০ রানের বেশি করবেই, এ কথা ধরে নিয়েও আজও টপ অর্ডারের তিনজন ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতাই কি বেশি করে সামনে চলে আসছে না? ইমরুল কায়েস ইনিংসের প্রথম থেকেই অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে বিব্রত ছিলেন। অভিজ্ঞ ব্রেট লি বারবার বল ওই একই করিডরে ফেলতে ফেলতেই ইমরুল উইকেটের পেছনে হাডিনের ক্যাচে পরিণত হলেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেন বলে-কয়ে আউট করা যায়।

শাহরিয়ার নাফীস উইকেটে এসেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিলেন। রকিবুলকে মনে হলো বৃহস্পতিবারের ফতুল্লার প্রস্তুতি ম্যাচের ছায়া। ব্যাটসম্যানদের অধারাবাহিকতার এত উদাহরণ বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দলে আছে? ৪৯ রানেই ৩ উইকেট চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সেরা দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের মধ্যে গড়লেন ৬৭ রানের ইনিংস। তামিম ধীরে-সুস্থে হলেও নিজের উইকেট বাঁচিয়ে খেলছিলেন। স্থিতধী ইনিংস খেলে ফিফটিও করে ফেলেছিলেন।

কিন্তু এর পরই যেন পুরোনো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ডোহার্টিকে একই ওভারে একটি ছয় মারলেন। সেই ওভারেই স্কোর বোর্ডে উঠেছিল ৮টি রান। হঠাত্ই এই অসি বাঁ-হাতি স্পিনারকে হাওয়ায় ভাসিয়ে খেলতে গেলেন তামিম। আর তাতেই ডিপ এক্সট্রা কভারে স্মিথের হাতে ধরা।

এমনভাবে আর কত দিন আউট হবেন তামিম? সাকিব আল হাসান আজ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে দায়িত্ব নিয়ে খেললেন। ৫১ রানের একটি দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে, সেটাকে আর দূরে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না। ৩০-৪০-৫০ রানকে সেঞ্চুরি বা তার কাছাকাছি ইনিংসে পরিণত করতে না পারার চিরন্তনী ব্যর্থতা আর কত দিন কুড়ে কুড়ে খাবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের? ইনিংসের একেবারে শেষদিকে দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেন মুশফিকুর। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার একটা জবাব দেওয়ার দরকার ছিল, মুশফিকুর সেটাই করলেন ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে। মাহমুদউল্লাহ ২৮ রান করে দলের স্কোরকে টেনে নিয়ে গেলেন ২০০-এর ওপরে।

হাতে অর্ধেক উইকেট রেখেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬০ রানের পরাজয়। আবারও টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতা কি মূর্ত হয়ে উঠছে না? সকালে টস জিতে সাকিব মাইকেল ক্লার্ককে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। ১০০-এর নিচেই অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক দেখিয়ে দিলেন বিপদের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেখে কীভাবে একটি ইনিংস দাঁড় করাতে হয়, বাংলাদেশের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট নাসির আহমেদ ক্লার্কের ইনিংসটিকে সেভ করে রেখে দিতে পারেন। অন্তত, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কল্যাণেই।

রিকি পন্টিং আর শেন ওয়াটসন মারকাট ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। পন্টিংকে মনে হচ্ছিল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার শোকটা তিনি শক্তিতে পরিণত করেছেন। শফিউল, মুশফিক আর সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে দুর্দান্ত রানআউটে পন্টিংকে ফেরাতে না পারলে কপালে কী ছিল, তা জানার জন্য জ্যোতির্বিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ওয়াটসনকেও ৩৭ রানে এলবির ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন রাজ্জাক। ক্যামেরন হোয়াইটকে ২০ রানে ফিরিয়ে দিয়ে সবাইকে আশান্বিত করেছিলেন সোহরাওয়ার্দী।

ইমরুল কায়েস দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে হোয়াইটকে ফেরাতে রেখেছেন অগ্রগণ্য অবদান। এর পরও ক্লার্ক ভেঙে পড়লেন না, হাসি, স্মিথ ও জনসনকে সঙ্গে নিয়ে খেলে গেলেন অবিচল। দারুণ এক শতরান করে দিনশেষে তিনিই নায়ক। অধিনায়কত্বের পূর্ণ কর্তৃত্ব হাতে পাওয়ার পর এমন ইনিংস! উদযাপনটা আজ রাতে বেশ জম্পেশই হবে মাইকেল ক্লার্কের। মাইক হাসির ৩৩ রানের ইনিংসটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

ওই ইনিংসটিকেও ধন্যবাদ দিতে পারেন মাইকেল ক্লার্ক। মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক দিন পর ফিরলেন, দুটি উইকেটও নিয়েছেন। কিন্তু আসল মাশরাফিকে ফিরে পেতে যে আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে, তা আজ প্রমাণিতই। তবে তাঁর নিজের পারফরম্যান্স তাঁকে কিছুটা তৃপ্তি দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাকি বোলারদের মধ্যে সাকিব আর সোহরাওয়ার্দীই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

সাকিব উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ৩৪ রান দিয়ে বাকিদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই উইকেটেও অসি ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখা সম্ভব। সোহরাওয়ার্দী গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন। রাজ্জাক একটি উইকেট নিলেও ছিলেন বেশ খরুচে। আর দিনটা শুরু থেকে একেবারেই যে শফিউলের ছিল না, তা তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। দিন শেষে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারেন।

আগের ম্যাচেই ৭৮ রানে অলআউট হওয়া দল তো আর আজ লজ্জা দেয়নি! এই বা কম কী! তবে তৃপ্তি থাকলেও এই দর্শকেরা যে আরও একবার পরাজিত দলেরই সমর্থক! সংক্ষিপ্ত স্কোর অস্ট্রেলিয়া ২৭০/৭ (৫০ ওভার) মাইকেল ক্লার্ক ১০১, ওয়াটসন ৩৭, পন্টিং ৩৪, হাসি ৩৩ জনসন ২৬ সোহরাওয়ার্দী ৩/৪৪, সাকিব ০/৩৪, মাশরাফি ২/৬৫. রাজ্জাক ১/৫৪ বাংলাদেশ ২১০/৫ (৫০ ওভার) তামিম ৬২, সাকিব ৫১, মুশফিকুর ৪৪*, মাহমুদউল্লাহ ২৮* লি ১/৩৬, জনসন ১/২৩, ডোহার্টি ১/৩৬, স্মিথ ১/৪১ (অস্ট্রেলিয়া ৬০ রানে জয়ী)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।