জং ধরা যান্ত্রিক জীবন..সময়ের যাতাকলে মরে গেছে মন..। :(
১.
তখন কলেজে পড়ি। কলেজে হোস্টেল নাই। পরিচিত এক মামার বাসায় থাকি। বাসা আর কলেজে নিয়েই ছিল তখন আমার কুয়োর ব্যাঙের জীবন।
সেই জীবনে মফস্বল থেকে আসা আমার বন্ধু সংখ্যাও তাই স্বাভাবিকভাবে খুব একটা ছিল না। সেই অল্প সংখ্যক বন্ধুদের একজন ছিল রুপম।
তো একদিন রুপম এসে হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে বলল, দোস্ত এটা রাখ।
জিজ্ঞেস করলাম, কি এটা?
বলল, আইভির বাসার ফোন নম্বর।
- আইভি? সে আবার কে?
- আমার বন্ধু রাফিনের কাজিন।
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। হেভী সুইট মেয়ে।
- আমি কি করব?
- তুই কি করবি মানে? ফোন নম্বর দিসি, ফোন করবি। কথা বলবি।
- ঠিকাছে।
দেখি।
- দেখি টেকি না। অবশ্যই করবি।
২.
বাসায় এসে আমার আর ফোন করতে মনে থাকে না। পরের দিন রুপমের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করে, ফোন করেছিস?
- না।
- কেন?
- মনে ছিল না।
- ধুর শালা!
আরো কিছু শব্দ ব্যবহার করে। এখানে আরে সেগুলো লিখলাম না।
শেষ পিরিয়ডের পর ক্লাস থেকে বেরুনোর সময় রুপম এসে মনে করিয়ে দেয় আজকে যেন ফোন করতে ভুলে না যাই। আমিও আর যাতে ভুলে না যাই সেজন্য মনে মনে জপতে থাকি..আইভি, আইভি।
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দু'য়েক বার মুখ ফস্কে বেরিয়েও আসে আইভি..আইভি..। কিছু পোলাপান দেখলাম ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
সেদিন খাওয়া দাওয়া শেষে ফোন করতে গিয়ে দেখি মামা ফোনে কার সাথে কথা বলছেন। মামার কথা শেষ হতে না হতেই মামি এসে ফোনের দখল নিয়ে নেন। অন্যান্য দিন এমন হয় না।
আজকে শালার কপালটাই খারাপ। মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
৩.
পরের দিন আবার রুপম জিজ্ঞেস করে, কি রে কথা হইছে?
- না ।
- কেন? আবার ভুলে গেছিলি?
- না। ফোন বিজি ছিল।
সে বিরক্ত হয়ে বলে
- তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। মদনা কোনহানকার।
হঠাৎ মনে হল, আমার কথা বলার ব্যাপারে রুপমের এত আগ্রহ কেন?
আমি তাই সরাসরি বললাম, তোর এত আগ্রহ কেন? বেশী আগ্রহ হলে তুই-ই কথা বল না।
রুপম তখন বলে, অ্যারে ব্যাটা! আমাদের সবার তো আছে। তোর নাই।
তাই ভাবলাম যদি তোর একটা সিস্টেম করতে পারি।
৪.
বাসায় এসে সুযোগ খুঁজতে থাকি। একসময় পেয়েও যাই। বুকে সাহস নিয়ে ফোন করি। এক মেয়ে ফোন ধরে।
জিজ্ঞেস করি..
- আইভি কি আছে?
- আপনি কে বলছেন?
- আমি আইভির ফ্রেন্ড।
- ও আচ্ছা!
- আইভি কে দেয়া যাবে?
- অবশ্যই। একটু লাইনে থাকেন।
আমি অপেক্ষা করতে থাকি। প্রতিটা সেকেন্ড মনে হয় যেন এক একটা ঘন্টার চেয়েও দীর্ঘ।
বুকের ভিতর দ্রুম দ্রুম আওয়াজ শুনতে পাই।
একসময়..জানি না ঠিক কতসময় হবে..তবে মনে হয়েছিল সুদীর্ঘ বছর পরে সেই মেয়েটির কন্ঠ আবার শুনতে পাই। সে বলে, আইভির সাথে কথা বলেন।
তারপর..............
তারপর যা, তা আর বলার মত না। এক মহিলা খুব সম্ভবত কাজের বুয়া হবে....চৌদ্দগোষ্টি তুলে এমন সব গালি গালাজ শুরু করে যা আমি আমার জীবনেও আগে কখনো শুনা তো দুরের কথা কল্পনাও করি নাই।
বুলেটের গতিতে দুনিয়ার যত গালি ছিল সব তিনি আমার প্রতি নিক্ষেপ করতে থাকেন। গালি শুনে মনে হয়েছিল...তিনি এই লাইনে অনেকদিনের অভিজ্ঞ। আর আমারও বুঝতে বাকী রইল না রুপমের এত আগ্রহের কারণ কি ছিলো।
৫.
গালি খেয়ে ভাবলাম শালার ব্যাটা রুপমকে কে ধরে আচ্ছা করে প্যাদানি দিই। কিন্তু পরে চিন্তা করলাম প্যাদানি দিলে ঘঠনা জানাজানি হয়ে যাবে।
তখন সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে। আমি তাই চুপচাপ সবকিছু হজম করলাম।
কয়েকদিন পরে রুপম আবার জিজ্ঞেস করে, কি রে দোস্ত! ফোন করেছিলি?
আমি বলি, না দোস্ত! তোর দেয়া কাগজ হারিয়ে ফেলেছি।
তারও কয়েকদিন পরে আমাদের ক্লাসের আরেক বন্ধু কথা প্রসঙ্গে বলে, রুপম যদি কখনো কোন নাম্বার দিয়ে ফোন করতে বলে তাহলে ভুলেও ঐ কাজ করবি না।
'কিছু জানি না'- এমন একটা ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেন রে? কি হয়েছে?
- অ্যারে! আর বলিস না।
শালার পো, কই থেকে আজাইরা এক মেয়ের নাম্বার নিয়ে এসেছে। ফোন করলে এক মহিলা আজে বাজে গালা গালি করে।
আমি হেসে বলি, তুই জানলি কেমনে? ফোন করেছিলি?
- ধুৎ! ঐ সব আজাইরা কাজে আমি নাই। আমারে একজন কইছিলো। আমি তর লগে শেয়ার করলাম আর কি।
আমি মুখে বলি, থ্যাংকু দোস্ত। আর মনে মনে বলি, শালা তর মত আমিও ধরা খাইছি। কিন্তু কেউ রে কইতে পারতেছি না। নিজে নিজেই হজম করতেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।