আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'৫২তে কি শুধু প্রমিত বাংলার লাইগা রক্ত ঝরসিলো?

অবশ অনুভুতির দেয়াল

*** একুশে ফেব্রুয়ারীর আগের রাত্রে লিখসিলাম এইডা। কোন একটা কারনে পোস্ট করা হয় নাই। এই আলোচনা পুরোনো হওয়ার না। *** 'মাগো ওরা কয় আমারে নাকি তোমার ভাষায় কথা কইতে দিবো না। এইডা কি হয়? তুমিই কও মা।

' একজন আজকে বইমেলায় দাঁড়ায়া কইতাসে - "আমরা যেই এলাকারই লোক হই, আমাদের এলাকার ডায়ালেক্ট আমরা ঘরের ভিতরে বলবো আর বাইরে "শুদ্ধ" বাংলায় কথা বলবো। " শুদ্ধ বাংলা মানে কি? প্রমিত বাংলা? '৫২তে মায়ের ভাষার লাইগা রক্ত ঝরসে। শুধু বাংলা ভাষায় কথা কওয়ার লাইগা। চাটগা, নোয়াখালি, বরিশাল, সিলেট - এইসব এলাকার ভাষা নাকি শুদ্ধ ভাষা না। আরে! এইসব এলাকার যে ভাষা তা কি তাগো লাইগা মাতৃভাষা না? জন্মের পর তারা কি তাগো মায়েগো মুখে এইসব ভাষা প্রথম শুনে নাই? মাতৃভাষার লাইগা যখন রক্ত ঝরসিলো তখন কি শুধু প্রমিত বাংলা ভাষার লাইগা রক্ত ঝরসিলো? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার বাইরে পইড়া গ্যালো নাকি আমাগো এই ভাষাগুলি? আমার তো মনে হয় আমাগো ভাগ্য অনেক ভালো।

আমাগো মানে যাগো ঢাকায় জন্ম, বড় হওয়া। ঢাকায় যে স্ট্যান্ডার্ড ডায়ালেক্ট আসে, মানে মান ভাষা, মানে ঢাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা যেই ভাষায় কথা কয় (পুরান ঢাকায় কিছু লোক বাদ দিলে, কারন অগো নিজেগো আলাদা মানে কিনা স্বতন্ত্র ডায়ালেক্ট আসে) তা কিন্তু অনেক উন্নত। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী তাই এইখানে গোটা বাংলাদেশ থাইকা মানুষ আসে। প্রতিদিনই আশতাসে। তাগো এলাকার ভাষা তারা কাইতাসে।

বরিশালের পোলা ঢাকায় আইসা নোয়াখালীর মাইয়ার লগে প্রেম করতাসে। চাটগার মাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হইতাসে নাটোরের আরেক মাইয়া। এইযে এরা এতো সময় একলগে কাটাইতাসে, তাতে তাগো একজনের মুখের বুলি আরেকজনের মুখে চইলা যাইতাসে। এইটাই কিন্তু ভাষার স্বভাব। ভাষা এমনেই বইয়া যায়।

এইভাবেই একটা ভাষা আগাইয়া যায়। মানে আমি যেইটুক বুঝি আরকি। এইজন্যই আমি যখন কই যে 'ধরে দেবেনে' - আমার কিন্তু বরিশাইল্যা হওয়া লাগে না। আমার যদিও এইরকম বলার কোন কারন নাই যেহেতু আমি ঢাকার মানুষ আর আমার বাপ-মা একজন নরসিংদির আরেকজন বিক্রমপুরের। কিন্তু আমি এ্যামনে কই কারন আমার মনে হয় এইভাবে কইলে আমি যা কইতে চাই তা সবচেয়ে ভালো বুঝান যায়।

পুরা পৃথিবীতে যদি এক বাতাস বয় আর তারে কয় 'গ্লোবালাইজেশন' তাইলে এখন ঢাকায় যেইটা হইতাসে তারে বলা উচিৎ 'বাংলাদেশাইজেশন এ্যান্ড ডি-ওয়েস্টবেঙ্গলাইজেশন'। বাংলাদেশের সব ভাষা আইসা এইখানে মিশতাসে। এই ব্যপারটা যাতে আরো ভালো মতন ঘটতে পারে সেই ব্যবস্থাই করা উচিৎ আমাগো। ওই পশ্চিম বঙ্গের ভাষা লইয়া টানাটানি আর মাথা খুড়াখুড়ি কইরা কি হইবো? আমরা তাগো এলাকার বাংলা চ্যানেলে বিচিত্র বাংলা উচ্চারণে সিরিয়াল দেইখা নাকের পানি চোখের পানি এক করি। কিন্তু আমগো দ্যাশের কোন চ্যানেল তাগো ওইখানে দেখা যায় না।

শুদ্ধ বাংলা কওয়া লইয়া শক্তিক্ষয় করার চাইয়া এই বিষয়টা নিয়া ভাবাটা অনেক বেশি জরুরী। আমরা যে বাংলাটা আসলে অগো থাইকা অনেক ভালো জানি সেইটা অগো জানানো দরকার। অরা বাংলা ভাষাটারে লইয়া যেইরকম যা-তা করতাসে সেইটা যে ভুল, আমাগো চ্যানেলগুলা দেখলে বুঝতে পারবো। ইংলিশ মিডিয়ামের পোলাপাইন তো বাংলা বর্ণমালার সবকয়টা অক্ষরই চিনে না। সেইটা যাতে চিনে সেই বিষয়ে শক্তিক্ষয় করা দরকার।

সবাইরে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করা শিখানো তো অনেক পরের বিষয়। কয় খবরের কাগজ, টিভি রেডিওতে নাকি প্রমিত বাংলাই কইতে হইবো। আরে! গণমাধ্যম তো গণমানুষের মাধ্যম। এই মাধ্যমের ভাষা তো তাইলে গণমানুষের ভাষা হওয়া উচিৎ। "সবাইরে প্রমিত বাংলা শিখাইতে হইবো"।

হ। ঠিকই আসে। যেইটা আমাগো কারোরই মাতৃভাষা না। তার লাইগা আমাগো দ্যাশের সব ভাষারে মাইরা ফালাও। রফিক, সালাম, জব্বর মিয়া - জব্বর একখান কাম করসো তুমরা।

আবার যদি জন্ম হয় তাইলে আর এই ভুল কইরো না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.