আকাশে আমি রাখিনাই মোর উড়িবার ইতিহাস......
ঠাস! শব্দ করে মোবাইলটা ৩ ভাগ হয়ে ৩ দিকে ছড়িয়ে পরলো। হে ধরনী, দ্বিধা হও, ওহ নো! আবার সেই রাগ!। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই! এমন শান্তশিষ্ট মেয়েটার এত রাগ, না জানি কোথা থেকে আসে! মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কান্না করবে নাকি ! আশেপাশে অনেকে অবাক হয়ে তামাশা দেখছে। কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।
হঠাৎ ঠনক নড়লো, মোবাইলের অংশগুলো খুঁজে বের করা দরকার। একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, পাশে আবার নালা। নালায় পড়লো কিনা কে জানে! ও আল্লাহ্, এই মেয়েটার কবে কমনসেন্স হবে! আশেপাশের কৌতূহলী দৃষ্টির তোয়াক্কা না করে মোবাইলের অংশগুলো খুঁজতে লাগলাম। সাথে সে ও যোগ দিলো।
যাক, রাগটা একটু কমেছে বোধহয়। মোবাইল টার দুর্ভাগ্য, আমার রাগটা তার উপর গেলো। আমি পেলাম মোবাইলের কভার, আর সে পেলো সামনের অংশ। কিন্তু ব্যাটারী কই! নালায় গিয়ে পড়েনিতো! পাশ দিয়ে একটু পর পর গাড়ী যাচ্ছে, তার উপর পথচারী মানুষ। পারে ও মেয়েটা!
ঘটনার সুত্রপাত আজ বিকালে।
গ্রেজুয়েশন শেষ করে বসে আছি চাকরীর জন্নে। জীবনের বাস্তবতাটাকে হাড়ে হাড়ে ঠের পাচ্ছি, চাকরী খুঁজতে গিয়ে। বিকালে বের হবো, চাকরীর কিছু দরখাস্ত কুরিয়ার করা দরকার। ভাবছি কাজ শেষ করে, একটু দেখা করে আসবো। মহারাণীর আবার ২ দিন পরে পরীক্ষা।
একটু সময়ের জন্নে দেখা করবে কিনা কে জানে! মেসেজ পাঠালাম। রিপ্লাই আসলো, বের হলে তাড়াতাড়ি বের হও। এ এক জ্বালা, সবই তার ইচ্ছা! ওহো, বলা হইনায়, আরেক কাহিনী। আমার আবার নতুন একটা ওয়ারিদ সিম কিনতে হবে। এটি ও মহারানীর রাগের বলি।
আমার উপর রাগ করে, সিম টা নষ্ট করে ফেলেছে। এই দূরমুল্লের বাজারে! প্রেম করা উইদাউট ইনকাম, সে কী মুখের কথা! তার উপর প্রেমের বয়স কম, কথাবার্তা শেষ হয়না, সে জন্নে ওয়ারিদ সিম নেওয়া। তুলনামুলক কম খরচে কথা বলা। সেই ওয়ারিদ সিমকে প্রাণ দিতে হলো আমার জন্নে। পরেরদিন আবার চিরাচরিত ভুল ভাঙা, “সিমটা নষ্ট করা উচিৎ হইনায়”।
এখন আবার ওয়ারিদের সিম কেনো। ভেবেছিলাম চাকরীর দরখাস্তগুলো কুরিয়ার করে, ওয়ারিদের সিম কিনে একবারে দেখা করতে যাবো। চিরকাল ই দেখলাম, খুব ভেবে চিনতে যে সিদ্ধান্ত নেই, তা আমার বিপক্ষে যাই। এবারো তার ব্যাতিক্রম হলও না। সব কাজ শেষ করতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো।
তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম।
-হ্যালো, আমার কাজ শেষ, আমি এখন আসতেসি।
-আমি অনেক্ষন নিচে দাড়ায় ছিলাম। এখন দেরী হয়ে গেছে। আমি পড়তে বসবো।
আসার দরকার নাই।
-আমি জাস্ট সিমটা দিয়ে চলে যাবো, একটু বের হঊ।
-আমি এখন বের হতে পারবোনা, তুমি এসোনা । ।
-আমি আস্তেসি হলের কাছে, বের হলে হবা না হলে নাই।
ফোনটা রেখে দিয়ে রিকশা নিলাম। কাছাকাছি এসে কল দিলাম। ঠান্ডা গলায় বলল, আসতেসি।
জানতাম কাছে এসে আসতে বললে, কখনোই না করবেনা। ১০ মিনিট পর দূর থেকে আস্তে দেখলাম।
যাক আসলো শেষ পর্যন্ত। কাছে এসে দাড়ানোর সাথে সাথে একটা অপরাধীর মতো হাসি দিলাম। কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে, কথা বলছেনা কোনো। খুব ঠান্ডা গলায় বললো, “তোমাকে না আস্তে মানা করলাম, ২ দিন পরে আমার পরীক্ষা !” এই বলে হাতের মোবাইলটা মারলো ছুঁড়ে রাস্তায়।
ব্যাটারী খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
হঠাৎ করে সেই খুঁজে পেলো রাস্তায়। কতো গাড়ি যাচ্ছিলো এই পথ দিয়ে। ভাগ্য ভালো কিছু হইনায় মোবাইলটার। খুবই মন খারাপ হল। বললাম-”আমি চলে যাই তাহলে”।
কিছু বললনা সে। উল্টা দিকে ঘুরে হাটা দিলাম। কি ভাবছিলাম, আর কি হল! এভাবে যেতে ইচ্ছা করতেছিলনা। একটু দূর হেটে গিয়ে আবার মেইন রোডে দাঁড়ালাম, যেদিক দিয়ে সে হল এ যাবে। আমার সামনে দিয়ে চলে গেল, খেয়াল নাই তার কোন দিকে।
আর ডাকলাম না। ভাল লাগছিলনা কিছু। সামনে হাটা শুরু করলাম। হোটেল একটা পেয়ে চা খেতে ঢুকলাম। চা আসার পর এ প্রতীক্ষিত ফোন টা আসলো।
-হ্যালো, তুমি কই?
- এইতো আছি আশেপাশে।
-আমি খুব অমানুষ হয়ে গেছি না?
-কই নাতো, আমার ই এভাবে আসা উচিৎ হইনাই।
-কেম্নে যে কাজ টা করলাম, আমার খুব খারাপ লাগতেছে।
-না না, ঠিক আসে, তুমি পড়তে বসো, ২ দিন পরে তোমার পরীক্ষা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন টা রেখে দিলাম। এখন একটু ভাল লাগছে। জানি, আগামী কয়েকটা দিন আমার খুব ভালো যাবে। মেয়েটার এই একটা জিনিস খুব ভালো লাগে আমার। আমি যেমন সামান্য ভুল করলেই সরি সরি বলতে থাকি, তার আবার সেটা নাই।
সরি বলবেনা সহজে কিন্তু কাজে দেখাই দিবে। না, ভালোই আছি আমি, এই রাগ আবার এই কেয়ার! একেই বুঝি বলে “নাতিশীতোষ্ণ ভালোবাসা”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।