অলস মস্তিস্ক বহু বান্দরামীর উর্বর ভূমি
আমি স্কুলে ক্লাস ৯ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ভদ্র ছেলেই ছিলাম। শুধু আমি নাহ কমার্সের বি সেকশন টাই ভদ্র সেকশন হিসাবে পরিচিত ছিলো । ভদ্র মানে টিফিনে পালানো কিংবা স্কুল পালানের মত মেজর ক্রাইম এ এই সেকশন তেমন জড়িত ছিলো নাহ। তবে ২-৩ ক্লাস পালানো বাকি যাইতো নাহ।
কিন্ত ক্লাস ৯ এর মাঝামাঝি পুরা ১৮০ ডিগ্রি ঘুইরা টিফিন পালানো শুরু হইলো।
টিফিন পালানি মানে ভয়াবহ অবস্তা । ক্লাসে টিফিনের আগে ৫০ থাকলে টিফিনের পরে থাকতো ২১-২৩ জন। আমাদের ঠেকানের জন্য গেটে টিফিনেও দাড়োয়ান রাখা হইলো, ৮ ফিটের বাউন্ডারি ওয়াল ১২ ফিট হইলো , টিফিন পালানোর জরিমানা ৩ টাকা থিকা ১০ টাকায় উঠলো ,টিফিনের পরে প্রতি ক্লাসে রোলকল শুরু হইলো । যাইহোক এই সব কোনকিছুই পোলাপানকে টিফিন পালানো থেকে খুব একটা বিরত রাখতে পারলো নাহ। কারন মধ্যদুপুরে স্বাধীন ভাবে ঘুরাফেরা , বিভিন্ন কোচিং এর পাখি দেখার সুযোগ যে একবার পাইছে তারে ঐ জিনিস থেকে দুরে রাখা কঠিন।
যাইহোক আমরা বিভিন্ন উপায়ে পালানোর ট্রিকস বের করা শুরু করছিলাম
যাইহোক আমাদের পালানোর ট্রিকস গুলার একটা ছিলো দড়ি দিয়া টানা। ঐ সিস্টেমে বাউন্ডারির ঐপাশে কমপক্ষে ৩-৪ জন রে পৌছাইয়া একটা দড়ি ছুড়ে দেয়া লাগতো তখন এই পাশ থিকা বাকি পোলাপান ব্যাগ গুলা ঐ দড়িতে বেধে দিতো। ব্যাস এরপরে টিফিন খাবার অজুহাতে বাইরে গিয়া ঘন্টা ৩ এর স্বাধীন জীবন। মীর জাফরদের কারনে এই ট্রিকস বেশিদিন টিকলো নাহ । ফলাফল একদিন পোলাপান পালাইতে গিয়া পিছনদিক লাল কইরা আসলো (কপাল ভালো তার আগের দিন আমি পালাইছিলাম দেইখা ঐদিন আমি পালাইতে যাই নাই ) আর বাউন্ডারিতে ২ ফিট কাটাতার এ্যাড হইলো ।
কয়েকদিন পরে সম্পুর্ন নতুন বুদ্ধি বাহির করলাম আমি । দেখলাম ক্লাস ৮ এর পোলাপানের জন্য যে আলাদা বৃত্তি কোচিং হয় ওদের ক্লাস শেষ হয় আমাদের টিফিনের ১০ -১২ মিনিট আগে। ওরা নামতে নামতে আমাদের টিফিন শুরু হয়ে যায়। তখন ওরা গেটে কোচিংএর আলাদা কার্ড দেখায়ে ব্যাগসহ বাহির হয়। আমরা যেটা শুরু করলাম তা হল ক্লাস ৮ এর ২-৩ টার ব্যগে আমাদের ব্যাগ (এক কথায় চিটা ব্যাগ কারণ ঐগুলায় বই খাতা খুব কমই থাকতো) গুলা ভরে পাচার করতে শুরু করলাম।
ওরা আমাদের ব্যাগ গুলারে নিজেদের ব্যাগে নিতো আর নিজেদের বইখাতা নিতো হাতে পরে বাহিরে জায়গা মতো গিয়া আমরা যথারীতি স্বাধীন। এই ট্রিকস মোটামুটি অনেকদিন গোপনই ছিলো। কাহিনি হইলো মীরজাফর আবারো একটিভ এবং ধরা এই বার আর পার পাইলাম নাহ লাল হইয়াই ক্লাসে ফেরা লাগল কাহিনি হইলো আমরা তো মাইর খাইলাম সাথে ক্লাস ৮ এর গোবেচারা ভালো স্টুডেন্ট গুলাও আমাগো লিগা খাইলো
২ বার ধরা খাবার পরে শুরু হইলো মীরজাফর খোজ অভিযান। কয়েকদিন পরে বুঝলাম এমনে হবে নাহ । ফন্দি ফিকির কইরা একদিন ক্লাসের কয়েকটারে বলা হলো আজকে টিফিন পালামু ..... ঐ জায়গায় রেডি থাকিস।
টাইম মতো দেখা গেলো ওরা হাজির সাথে কোন গ্যান্জাম নাই। সো ভুজং ভাজুং দিয়া ফেরত পাঠানো হইলো। পরের দিন আরেক গ্রুপরে বলা হইলো ওরাও আসলো কোন গ্যান্জাম ছাড়া। সো ভুজং ভাজুং দিয়া ফেরত পাঠানো হইলো। তারপরে আরেকগ্রুপরে বলা হইলো রেজাল্ট সেইম।
তাইলে মীরজাফরটা কে ???
পরে একদিন হুট করে আগের ৩ গ্রুপ রে জানানো হইলো যে তারা জানি পরের দিন ক্লাসে না আসে। আসবে শুধু ২-৩ জন । ঐদিন ক্লাসে কাহিনি শুইনা এসিসট্যান্ট হেড রাজ্জাক স্যার ক্লাসে আসলো এবং ক্যাপটেন মইন রে জিগাইলো সবাই পালাইছে কি ?? এইবার তো তুমি কিছু বললা নাহ ব্যাস আমরা আমাদের মীর জাফররের পেয়ে গেলাম।
মীরজাফরির শাস্তি মইনরে অবশ্যই দেয়া হইছিলো। শাস্তি স্বরুপ বার্ষিক পরীক্ষার শেষ পরীক্ষার দিন মইন এর প্যান্ট খুলে নেয়া হয়েছিলো এবং সে বাধ্য হয়ে টয়লেটে আশ্রয় নিয়েছিলো ।
পরে এক দপ্তরির লুন্গি পরে বেচারা বাসায় গেছিলো। কিন্তু ভুলেও কারও নামে কমপ্লেন করে নাই কারণ ঐ কাম করলে ওরে পুরা দিগম্বর কইরা দেয়ার হুমকি দেয়া হইছিলো ।
মইনের প্যান্ট খুলাতেও কাহিনি ছিলো .....প্রথমে চিন্তা করা হইছিলো মইনরে হালকা চড় থাপ্পড় দিয়া ছাইড়া দেয়া হবে।
আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার সিট প্লান পড়ছিলো ৫ তালা থিকা ৪তালা পর্যন্ত । মানে ৪০১ থেকে ৪০৬ পর্যন্ত মেয়েদের সিট এরপরে ৪০৭ থিকা বাকিটা ছেলেরা।
আর উঠানামার সিড়ি ছিলো ২টা একটা সামনের দিকে (০০১ এর দিকে) আরেকটা পিছনের দিকে (০০৭ নাম্বার রুমের দিকে)। পিছনের সিড়িটা ছিলো কিছুটা আনকমপ্লিট মানে ফিনিশিং বাদ ছিলো। যেহেতু লং রানে স্কুল বন্ধ হইতে যাচ্ছিল তাই ঐ দিন ৫-৪ তালার ফিনিশিং দেয়া হইছিলো। সো ঐ গেট ছিলো বন্ধ। মানে তখন ৪০৭ থেকে নিচে মানার রাস্তা ছিলো একটাই সামনের সিড়ি আর তাতে যাইতে ক্রস করতে হইতো টোটাল করিডর যেখানে মেয়েরা মজুদ ছিলো মানে মেয়েদের সিট পড়ছিলো আরকি
যাই হোক প্রথম দিকে সিড়ির ব্যাপার গুলা কোন ভাবেই আমাদের মাথায় ছিলো নাহ ।
আমরা আমাদের চড় থাপ্পড় দেয়ার তালেই ওরে ধরলাম। এবং কিছু করার আগেই মইন সাহেব আমাদের হুমকি দিলো ওরে কিছু করলে ও স্ট্রেইট এসিট্যান্ট হেডুর কাছে যাইবো। এতে আমাগো মেজাজ আরও চড়লো ।
এমন সময় আমাদের কোন এক একটার মাথায় উপরের আইডিয়া আসলে ও আমাদের দুরে ডাইকা কয় শালারে হেডুর কাছে যাইতে দিলে তো তারপরে পুরা আইডিয়া ক্যাচআপ হইলো।
তারপরে আমি আর আকিব মইনরে চাইপা ধরলাম আর সুমনে ওর প্যান্টালুন খুইলা নিলো ,বাকি গুলা খাড়ায়ে খাড়ায়ে খ্যাক খ্যাকই তেছিলো ছিলো।
প্যান্ট খুইলা তো একদফা চরম হাসাহাসি কারন মইন এর হলুদ আন্ডু
ব্যাস কাম শেষ আমরা ওরে ফালায়ে চইলা আসার আকিব ওরে শাসানি দিয়া বললো
" যা সাহস থাকলে করিডর দিয়া হেডুর কাছে যা তবে পরের বার ইনশাল্লাহ কোন কিছুই কিন্তু তোর গায়ে থাকবো নাহ " )
মইন বেচারা এমন বিপদ আশা তো করে নাই । তবে একদিক দিয়ে ওর কপাল ভালো ছিলো যে আমাদের পরীক্ষার টাইম ছিলো ২ থিকা ৪.৩০ পর্যন্ত সো পরে কোন ব্যাচের পরীক্ষাও ছিলো নাহ। যাইখোক বেচারা ৪ তালার টয়লেটে আশ্রয় নিয়াছিলো মোটামুটি ৫টা পর্যন্ত। পরে আলি ভাই (স্কুলের দপ্তরী) টয়লেট গুলায় তালা লাগাইতে আসলে কাহিনি বুঝে মইনরে তার একটা লুন্গি দিয়া উদ্ধার করে।
আর বাকি কাহিনি দেখতে আমরা স্কুলের কাছাকাছিই বইসা ছিলাম পরে ৫.৩০ এর দিকে যখন মইন নামলো লুন্গি পইড়া ।
তা দেইখা আমরা তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি ।
ক্লাস ১০ এ উইঠা ট্রিকস আরো বাড়ছে ওডি অন্য কোন দিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।