কি লিখি!!!
আমার জুতাভাগ্য খুবই খারাপ। কোন জুতাই তিন মাসের বেশি টেকে না। তিন মাসের মধ্যেই জুতার ছাল -বাকল, স্টোন সব উঠে অস্থির। এইজন্য প্রায়ই জুতা কিনতে হয়। কিন্তু সবাই কেবল আমার জুতা কেনাটাই দেখে ,জুতার যে শোচনীয় অবস্থা সেটা কারো চোখে পড়ে না।
জুতার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হাইহিল। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র তিন টা হাই হিল কিনতে পেরেছি । যাই হোক, যেটা বলছিলাম হাইহিল আমার অনেক প্রিয়। আমি যখন অনেক ছোট মানে বয়স যখন পাঁচ-ছয় তখন থেকেই হাইহিল আমার হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। অদ্ভুত সুন্দর লাগতো জিনিসটাকে ।
বাসায় যখন খালারা আসতেন তখন সাথে সাথে আমার চোখ যেতো তাদের পায়ে । পায়ে হাইহিল থাকলে তো কোন কথাই নাই। ওই হাইহিল পড়ে সারা বাসায় গুট গুট করে হাঁটতাম। এইজন্য কত যে আম্মুর ঝাড়ি খেয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নাই। একটা ঘটনা এখনও মনে আছে।
আম্মু একবার খুব সুন্দর একটা হাইহিল কিনেছিল। আমি করতাম কি আম্মু অফিস চলে যাওয়ার পর সেই হাইহিল পরে বাসায় হাঁটতাম। এইরকম প্রায় প্রতিদিনই করতাম। আর মনে মনে ভাবতাম , কখন যে আমার পা দুইটা বড় হবে আর জুতা টা ঠিক মতো পায়ে হবে। কারন তখন আমার ছোট ছোট পা দুইটার তুলনায় জুতার সাইজ অনেক বড় ছিল।
কিন্তু আমার পা দুইটা বড় হওয়ার আগেই হাইহিল টা নষ্ট হয়ে যায়।
আর যখন জুতা কিনতে যেতাম তখন জুতার দোকানে ঢুকেই হা করে হাইহিল এর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমি অনেক কিনতে চাইলে ও আমাকে কখনও কিনে দেয়া হতো না। শুধু আম্মু কিনত। এখন ও মনে আছে যে আব্বু শুধু উপদেশ দিতো," মা, তুমি এখনও অনেক ছোট।
এইগুলা পরে হাঁটতে পারবে না, দৌড়াতে পারবে না,পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে........ইত্যাদি ইত্যাদি । তারপর আমাকে বাটার দোকানে নিয়ে যাওয়া হতো। অনেক মন খারাপ করে জুতা পছন্দ করতাম। দোকান থেকে বের হয়ে আব্বু-আম্মু দুই জনই আমার মন ভালো করার জন্য বাটার অনেক গুণগান গাইত।
এইভাবে চলতে লাগলো।
কিন্তু সেভেন- এইটে উঠে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো শুরু করলাম। প্রতিবাদে কাজ হয়েছিল। হাইহিল কিনতে না পারলেও বাটা জুতা কেনা বন্ধ করতে পেরেছিলাম।
ও হ্যাঁ , এইটে পড়ার সময় আমাকে একটি সেমি হাইহিল কিনে দেয়া হয়েছিল। সেটা ছিল মেজো মামার বিয়ে উপলক্ষে।
হোয়াইট কালারের এবং খুবই আকর্ষণীয় ছিল। আমার নিজের পছন্দ ছিল সেটা। সেই জুতা পেয়ে আমি অনেকদিন আনন্দে লাফালাফি করেছিলাম সেটা মনে আছে। আর আব্বু অনেক মন খারাপ করেছিলো। :
বললামই তো ওইটা ছিল সেমি হাইহিল।
আমি প্রথম হাইহিল কিনি প্রায় আট মাস আগে। কপার কালার এর। দেখতে অনেক জোশ। কিন্তু হাঁটতে খুবই বেদনাদায়ক। সেটা কিনেছিলাম ফুপাত বোনের বিয়ে উপলক্ষে।
সেটা একদিন ই পরা হয়েছে এবং পা-টা কেটে অস্থির অবস্থা।
এইতো চার- পাঁচ মাস আগের ঘটনা। রিকি পন্টিংকে বললাম "স্যান্ডেল কিনব,তুমি যাবে আমার সাথে?" ও অনেক অবাক হয়ে বলল ," আমি তো এখন একটু ব্যস্ত, কিভাবে যাবো? কিন্তু তুমি তো কয়েকদিন আগেই একটা স্যান্ডেল কিনেছ!!!! আবার কিনবে??!!!!" আমি বললাম," আরে ওইটা পরলে পা কেটে যায়,হাঁটতে কষ্ট হয়, এইজন্য আরেকটা কিনবো। কালো রঙ এর। তুমি দেখো এইবার কি জিনিস কিনি!!" রিকি পন্টিং বলল , " আচ্ছা, ঠিক আছে।
ভালো দেখে কিনবা কিন্তু । "
তিন মাস আগের ঘটনা। নতুন হাইহিল( যেটা কয়েকদিন আগেই কিনলাম) পরে ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু সেদিন হাঁটতে হাঁটতে আমার হাইহিল এর হিল বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। আর তো হাঁটতে পারি না।
তখন রিকি পন্টিং বলল," তুমি আজকেও হাইহিল পরে এসেছ? বাসায় আর জুতা নাই। হাইহিল পরে হাঁটতে পারো না তারপরও এইটা তোমাকে পরতে হবে!!!" আমি বললাম," না ,এইবারের হাইহিল টা অনেক ভালো হয়েছে। পা তো কাটে নাই। শুধু হিল বাঁকা হয়ে গিয়েছে। ঠিক করানো যাবে।
আর আমার আর পায়ে দেয়ার মতো জুতা নাই বাসায়। তাই বাধ্য হয়ে এইটা পরে এসেছি। " ও বলল," কেন সব সময় যেগুলা পায়ে দাও সেগুলা কোথায়?!!!" আমি বললাম, ওইগুলা তো বেশি দিন টেকে না,সব গুলার ছাল-বাকল সব উঠে গিয়েছে। নতুন স্যান্ডেল কিনতে হবে!!!"
এই হল আমার যত হাইহিল এর কাহিনী। হাইহিল রেগুলার পরা হয় না।
তাই বেশি দিন টেকে । কিন্তু হাঁটতে সমস্যা হয় এবং পা কেটে যায়। অন্যদিকে, রেগুলার যেগুলা পরতে হয় সেগুলা তিন মাসের বেশি টেকে না।
যাই হোক , ভালো মতো হাঁটতে পারি আর না পারি আমার শুধু হাইহিল দেখতে আর কিনতেই মন চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।