আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মশা মারার যন্ত্রবিশেষ; আছে নাকি আপনার ঘরে?



বাজারে মশা মারার সব যন্ত্রই মোটামুটি অকৃতকার্য হয়েছে। বাজারে এখন মশার যম হিসেবে এসেছে একটা ব্যাট। মশা মারার যম এটা অবশ্য ব্যাটের কথা না। ব্যাট বিক্রেতার কথা। এটা কিনতে গেলে অবশ্য মশা বিক্রেতা বেশি কথা বলে না।

কারণ এগুলো এখন পর্যন্ত যা মুখ দিয়ে বের করে সে দামেই বিক্রি করতে চায়। মানে এক দাম। কারণ মশার মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচারে অতিষ্ঠ যে কেউ এখন বেড়ালের গাছে ওঠার মতো বিপদে আছেন। যার কারণে এক দাম কেন, দামের প্রথম অক্ষর বললেও কিনে নিয়ে যেতে বাধ্য সবাই। কিচ্ছু করার নাই।

মশা এখন কয়েলের ধোঁয়াকে ধূমপান এবং লিকুইড স্প্রে'কে পানীয় জ্ঞান করে তাদের কর্মকাণ্ডে নামে। ফলে তাদের কাছে জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন। ভাবনা যা সব হল রক্তওয়ালার। অর্থাৎ মানুষের। যারা নিজের রক্ত পানি করে আয় রোজগার করছে এবং সেই রোজগারে ভালো-মন্দ খেয়ে দ্বিতীয় দফায় আবার রক্ত বানিয়েছে।

সব মিলিয়ে মশা ইদানীংকালে অপ্রতিরোধ্য। তবে রাস্তায় বিক্রি করা ব্যাট দেখে ব্যাপক আশায় বুক বেঁধেছিলাম। যে কারণে মশারির রশি আমি বাঁধিতে না যাই...। মহান সে ব্যাট টাশ, টাশ শব্দে মশা মেরে একাকার। এর ব্যাপক ব্যবহার দেখেও আমি অবাক।

বাসায় তো বটেই। রাস্তাঘাটে অনেককে আমি এটা ব্যবহার করতে দেখলাম প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে। আমাদের এলাকার এক দোকানদার এটা নিয়ে এসে বেশ হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছেন চারপাশে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নিজের দোকানের মশা তো মারবেনই, তার দোকানের চারপাশে ঘোরাফেরা করেন ব্যাট নিয়ে মশা মারার আশায়। এমনকি পাশের দোকানদারদের অন-রিকোয়েস্টে তাদের মশাও মেরে দিয়ে আসেন।

মোটামুটি সিটি কর্পোরেশনের দায় নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছেন। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের একতলাতেও একদিন এই ব্যাট ব্যবহারের আভাস পেলাম। বেশ কয়েকদিন ঘরের ভেতর মশা মারার সে শব্দ শুনেছি। একদিন দেখলাম ঘরের জানালার সামনে থেকে মারার শব্দ আসছে। তাকাতেই অবাক হলাম, ঘরের ভেতর থেকে হাত বের করে জানলার বাইরের মশা মারছেন।

কোন সন্দেহ নাই এটা ব্যাটের কারণেই ঘটেছে। ব্যাট ব্যবহার করাটা খুবই আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে পড়ে গেছে এখন। ভালোই লাগে। তাই নানান জায়গায় মশা মারতে এই ব্যাট দাগার ব্যবহার দেখতে দেখতে আমিও একটা সময় এই ব্যাট কিনে আনি। দরকষাকষিতে সেই একই ফর্মেটে বিক্রেতার অবস্থান।

ভাই কত? একদাম। একদাম তো বুঝলাম, একটু কমাও। কম নাই। নিলে নেন। না নিলে নাই।

একটু চালিয়ে দেখাও। দেখি কেমন মশা মারে? এখন দিনের বেলা মশা নাই। মেরে দেখানো যাবে না। একটু খুঁজে টেস্ট করে দেখাও না। এ তো দূরে নিয়ে যাবো গিয়ে যদি দেখি মশা না মরে।

বিক্রেতা মহাবিরক্ত চেহারা নিয়ে একবার আমার দিকে, একবার তার আশপাশে চারদিকে তাকাচ্ছে। মশা খুঁজছে। কারণ মশা মারতে পারলে তারও ভালো লাগবে এটা নিশ্চিত। যাই হোক, শেষ অবধি মশা আর পাওয়া গেল না। অজ্ঞাত এক পোকা ক্রসফায়ারে পড়ে শশব্দে প্রাণ হারালো।

বিক্রেতার চেহারায় দ্বিগুণ অহংবোধ চলে এলো। আমি আবারও বলতে চাইলাম, দামটা কমানো যায় না? সে আমার দিকে না তাকিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করল। আমি তার এই ভাব দেখে ভাবছিলাম চলে যাবো। কিন্তু তার গানের গুনগুনটা কিছুটা মশার গুনগুনের মতোই। আমার তাই বাসার কথা মনে পড়ে গেল।

যে বাসায় মশা আছে। যাদের দমাতে একটা ব্যাট প্রয়োজন। আমি পরাজিত ভঙ্গিতে মানিব্যাগ থেকে শব্দহীনভাবে টাকা বের করে নিয়ে নিলাম শশব্দে মশা মারার ব্যাটখানা। তবে মশার ব্যাট কিনে এনে যে বিপত্তিটা টের পেলাম, তা হল ব্যাট বের করলেই মশা নিঁখোজ। মহাযন্ত্রণা।

এমনি যে মশা কামড়ে অস্থির করে ফেলে তাদেরই আবার ব্যাট বের করলে খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হতে হয়। ঘটনা কী? প্রথমে ভাবছিল, এটা সেই সব কারণেরই অন্তর্ভুক্ত। যেমনটা বাসায় নতুন কলিং বেল লাগালে হয়। মন যখন চায় কেউ আসুক। কলিং বেল বাজুক।

নতুন বেলের শব্দটা কেমন একটু শোনা যাক। তা আর হয় না। কেউ আসে না। যেমন হয়, নতুন মোবাইলে নতুন রিংটোন সেট করলে। কল আর আসে না।

অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হয় রিংটোন শোনা বাধা পড়ে সূদৃর আকাঙ্খায়। পরে মনে হল, বুদ্ধিমান এই প্রাণী মশা মনে হয় কয়েল, স্প্রে'র পর এবার ব্যাট জয় করার পথে। কারণ, একটা ব্যাটমিন্টনের ব্যাট নিয়ে মিনিট দুয়েক ঘরে তল্লাশি চালিয়ে দেখলাম সেই ব্যাট দেখেও মশা নাই। ব্যাট হলেই তারা হাওয়া। বুঝলাম না ঘটনা।

মশারা কী সব জায়গাতেই এমন। নাকি আমার বাসারগুলো বুদ্ধিমান মশাদের দলের লোক। বিঃদ্রঃ : এই জিনিসটার নাম জানা হয় নাই। সময়ের অভাবে ডিকশনারীও দেখা হয় নাই। তবে যে জিনিসের নাম ডিকশনারীতে থাকেনা।

তার আবার একটা নাম থাকে। সেক্ষেত্রে লেখা থাকে, ওমুক জিনিস বিশেষ। তাই এখানেও এই যন্ত্রের নামের বদলে সেটা ইউজ করা হলো। সরি। আছে নাকি আপনার ঘরে এটা?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।