আমি একজন দুঃখী মানুষ। এ নয়ে আমার কোন দুঃখ নেই। জন্মেছি পুরুষ হয়ে। এখন মানুষ হয়ে আরও একবার জন্মাতে চাই । আমি শুধু স্বপ্ন দেখেই ক্লান্ত হই না, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেই।
নিজের কাছে আমি খুব সত্ একজন মানুষ।
খাটের গোঙ্গানি মাত্র থেমে গেল। জহির বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো টেবিলের পাশে । সবুজ রঙের ডিম লাইটের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । বিছানায় শুয়ে থাকা রিতা নামের মেয়েটির চোখে তখনো অন্ধকার ।
চারপাশের দুনিয়া তার চোখে ঝাপসা । রাত ২তা বাজে । বিছানায় ছটফটানি শেষে মাত্র শান্তি পেল রিতা । কোন রকমে মাথা ঘুরিয়ে তাকা্লো জহিরের দিকে । সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ফস করে আগুন ধোরালো জহির ।
রিতার চোখে ধিরে ধিরে আলো ফিরে আসে । তার সামনে দাড়িয়ে থাকা জহির কে সে স্পষ্ট দেখতে পায়। জহিরের মুখের ধোঁয়া সে স্পষ্ট দেখতে পায়। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা জহিরের সমস্ত দেহ নগ্ন । টেবিলের উপরে সে বসেছে।
জহিরের সাদা ত্বক সে দেখতে পাচ্ছে। বাবরি চুল গুলো ঘাড়ের উপরে পড়ে আছে । রিতাও নগ্ন,তার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার পায়ের পায়ের নিচে পরে থাকা চাঁদর তার গায়ের উপরে দিতে। কিন্তু তা হবার নয়,জহিরের এগুলা পছন্দ নয়। রিতাকে এভাবেই থাকতে হবে সকাল পর্যন্ত ।
মধ্যরাতে মানুষ গুলো যখন তার বাহিরের সাহেবি চেহারা লুকিয়ে ফেলে অন্ধকার রুমের আলোতে তখন সেই অন্ধকারের মাঝে হাজারো বছরের রীতিনীতি হারিয়ে যায়,মানুষ গুলোর আসল রুপ ফুটে উঠে অন্ধকারের আলোতে। জীবনের চাহিদা মেটাতে খেলতে হয় হাজারো বছরের পুরানো খেলাতে । রিতার ভাগ্যে অবশ্য মানুষ জোটেনি,মানুষের পেট থেকে জন্মালেই যে মানুষ হয় না,অর্থ-বিত্ত দালান কোঠা গাড়ী থাকলেই যে মানুষ নামের ২ পায়া মানুষ হয় না তা এই বাড়িতে এসে রিতা বুঝতে পেরেছে। দেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে নেয়া ডিগ্রি মুখ থুবড়ে পড়েছিল চার দেয়ালের মাঝে খাটের গোঙ্গানিতে । সেই দিনের কথা আজও মনে পড়ে ।
প্রবল জরে আক্রান্ত রিতার সাথে দাপাদাপি করে সিগারেট মুখে ঘুমিয়ে পড়েছিল জহির । জীবনের সপ্ন যে সুধুই সপ্ন,ভালো থাকা,জীবনের সফলতা সবই যে মিথ্যের আড়ালে পড়ে থাকে মানুষের জীবনে তা রিতা ঠিকই বুঝে গিয়েছিলো খাটের গোঙ্গানিতে । খুব পানি পিপাসা পেল রিতার,বিছানা ছেড়ে বোতলে পানি খাবার সময় আলমারির আয়নাই নিজের দেহের অবয়ব দেখতে পেল রিতা,এই সেই দেহ,এই সেই খাবার,ভাবার বেশি সময় পেলনা রিতা,পিছন থেকে জহির জরিয়ে ধরলো তাকে,রিতার চিৎকার চাপা পরল খাটের গোঙ্গানিতে ।
দুপুরে ফোন আসলো রিতার,রেডিসনে যেতে হবে । জহিরের বন্ধু রিতাকে পছন্দ করেছে ।
সময় দিতে হবে তাকে । এভাবেই ২ বছর চলছে,৩ বার গর্ভপাত করতে হয়েছে তাকে । সন্ধায় গাড়ী নিয়ে বের হয়। চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তা দিয়ে চলার সময় গাড়ির লুকিং গ্লাসে সন্ধায় কিছু নিশি কন্যা দেখতে পেল সে,নিশিকন্যাদের সাথে অদ্ভুত এক মিল খুজে পেল নিজের। তাই বিজয় সরণীতে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে এলো চন্দ্রিমায়,গাড়ি রেখে নেমে এলো রাস্তায় ।
তারপর আর রিতাকে পাওয়া যায় নি,যে হারিয়ে যেতে চায়,তাকে প্রকৃতি হারিয়ে যেতে সুযোগ দেয়। তবে আজও জহিরের খাটের গোঙ্গানি শুনা যায়,ভেসে যায় দুরে,বহুদুরে ।
মুখবন্ধ-একটি সত্য ঘটনার উপরে কিছু মিথ্যে সাজিয়ে গল্পটা সাজনো হয়েছে । তাই ক্ষমা পূর্বক দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।