বস প্রচন্ড চটেছেন। সারা অফিস তোলপার করে ফেলছেন। এত রগচটা লোক সচরাচর চোখে পড়ে না্ । মাথায় টাক। শক্ত চোয়াল।
আর বিকট ভয়েস। যে কেউ অবাক হবেন তার অস্বাভাবিক চেচামেচি দর্শনে। রাগী মানুষের মাথায় চুল কম থাকে। মাথা প্রচন্ড গরম হওয়ার কারনেই এমনটি হয়!প্রচন্ড খরতাপে মরুভূমিতে যেমন কোন গাছ জন্মে না জন্মালেও মারা যায় ঠিক তেমনি । অন্তত বসকে দেখলে নির্দ্বিধায় বলা যায় তার মাথা প্রচন্ড গরম হওয়াতে চুল আর চেহারার এই দশা!কারো কাজে ভুল ধরা পড়লে তার আর রক্ষা নেই।
মায়াবতীর প্রেমে পড়ে কাজে সমানতালে ভুল করে যাচ্ছি। আর তার পুরস্কার হিসেবে নিয়মিত ঝাড়ি খাচ্ছি!তবে আজকে বসের চেচামেচির কারণ আমি নই। রাকিব ভাই আর লাইলি আপা। তাদের সম্পর্কের টানপোড়নে আজকের এই অবস্থার অবতারণা্ । লাইলি আপা নিজেকে সুবর্না মনে করেন।
ভদ্র মহীলা আসলেই সুন্দরী। তাকে দেখে মনে হবে তার বয়স ত্রিশ। আসলে আটচল্লিশ। তার মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু তার ধারণা পৃথিবীর তাবৎ পুরুষ মানুষ তার মজনু।
তিনি কালারফুল শাড়ি পরেন। গাঢ় লিপস্টিক ব্যবহার করেন। তাকে অন্য মহীলা কর্মকর্তারা দারুন অপছন্দ করেন। ঈর্ষাও করেন। রাকিব সাহেবের সঙ্গে তার দারুন ভাব।
অফিসের বাকি সবাই এটা ঠিকই বুঝেছেন রাকিব সাহেব তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তাকে এত গুরুত্ব দেন। লাইলি আপা শুধু বুঝেন না। তিনি বুঝেন সুবর্না-সৌদ। সুবর্নার তিন খালা শ্বাশুড়ি । তিন জনই সুবর্নার চেয়ে বয়সে ছোট।
তারা ছোট বেলায় সুবর্নাকে একবার দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন। আর এখন তার ভাগ্নের বউ সে। আরো কত রসালো আলাপ। এই সম্পর্কিত সকল খবর তার নখদর্পনে। দিনে অন্তত বার তিনেক তার সাজুগুজো চলে।
কাস্টমাররা এলে তার ভাবটা এমন হয় যেন তারা তার সঙ্গে প্রেম করার জন্য আসেন। আরেকটু বাড়িয়ে বললে তাকে ডিস্টার্ব করার জন্য আসেন। তবে অফিসের দারোয়ান পিয়নদের মুখে মুখে তার যুবতী বয়সের লীলাকাহন। বস ও তাকে দেখলে বিড়াল হয়ে যান। কারণ বসেরও অনেক বসের সঙ্গে তার দহরম মহরম।
তাছাড়া এত সুন্দরী একজন মানুষের সঙ্গে নরম ব্যবহার না করলে স্বয়ং স্রষ্টাও তার উপর নারাজ হতে পারেন। এহেন কর্ম তিনি করবেনই বা কেন?তবে তার স্বামী নাকি তার সঙ্গে রুঢ় ব্যবহার করেন। তার স্বামীর নিষ্ঠুরতার অজুহাতে প্রায়ই তিনি অফিসে লেট!
যাই হোক রাকিব সাহেব লাইলী আপা ভালোই চলছিলো। রাকিব ভাই ভুল করলেন। তার কাছে তার মেয়েকে বিয়ে করার খায়েস প্রকাশ করার সঙ্গে
সঙ্গে সব এলো মেলো হয়ে গেল।
একে একে ঝড় বইতে শুরু করলো রাকিব সাহেবের উপর দিয়ে । তবে আজ ঝড় নয় টর্নেডো যাচ্ছে।
তাছাড়া রাকিব সাহেবকে বস মোটেই দেখতে পারে না। কারণ একটাই লাইলী আপা রাকিব ভাইকে বসের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। লাইলি আপার মাথা থেকে তার ভুত সরানোর শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
আজ তার সামনে বিরাট সুযোগ। আজকের দিনে রাকিব সাহেব ভিলেন আর বসের সামনে নায়ক হবার ব্যাপক চান্স। লাইলি আপার অভিযোগ রাকিব ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার সম্পর্কে এমন কটুক্তি করেছেন যে তার মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছেন।
তুমোল হট্টগোলের মধ্যে তার হঠাৎ পিনপতন নিরবতা্ ।
রাকিব ভাইকে তলব করেছেন বস।
সঙ্গে ম্যানেজার আপা আর লাইলি আপাও।
বস- আজ এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে যে সমস্ত কথা হবে তা আমাদের বাইরে যাবে না । সবাই কথা দেন। রাকিব সাহেব আপনার নামে অভিযোগ আছে। আমি প্রশ্ন করলে সব স্বীকার যাবেন।
রাকিব- জি স্যার!!
লাইলি-স্যার আমার মেয়ে আর আমার সঙ্গে থাকবে না। ওর বাবার কাছে বলে দিয়েছে হয় ও থাকবে অথবা আমি থাকবো। এখন আমি কোথায় যাব স্যার?
বস- রাকিব সাহেব আপনি উত্তর দেন। আপনি কি কিছু বলেছেন?
রাকিব সাহেব মহা ঝামেলায়। তার মনে প্রচন্ড কষ্ট।
রাগে ফেটে পরতে ইচ্ছে হচ্ছে। তিনি অশালীন কিছুই বলেন নি। এর মধ্যে লাইলি আপা চেচামেচি শুরু করলে রাকিব সাহেব গর্জে ওঠেন। চোপ। একদম চোপ্ ।
বসের সামনে সরি বলে কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। বের হয়ে সোজা ওয়াস রুমে। বস ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেছেন।
রাকিব সাহেব আমার অন্তরঙ্গ মানুষ। তাকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকের রাইফেল স্কোয়ার প্রান্তে বসলাম।
তার মনে অনেক দুঃখ। তার বিয়ে করা হলো না্ এত প্রচেষ্টা নিয়েও ব্যর্থ। মধ্যে থেকে অফিসের অনেককেই তিনি শত্রু বানিয়েছেন। কারন শত্রুর বন্ধু শত্রু । অফিসের সকল কলিগ লাইলি আপাকে অপছন্দ করতেন ।
আর তিনি ছিলেন তার একান্ত আপনজন। তবে লাইলি আপা আর তার সখ্যতা আজ শেষ হলো। এই লেকটা দারুন জমজমাট। টিনএজ কাপল আর তাদের চঞ্চল বিচরণ। চারিদিকে প্রেম প্রেম আমেজ।
আসলে প্রেম ছাড়া জীবনের মানেই বা কি?অর্থহীন অসার। বেচারা রাকিব ভাই। কত বঞ্চনা তার জীবনে খুব মায়া লাগছে তার জন্যে । তার কপালে শুধু বিড়ম্বনা জোটল। দূর থেকে গান ভেসে আসছে।
বন্ধু তোর লাইগারে
বন্ধু তোর লাইগারে
আমার তনু জরজর
মনে লয় ছাড়িয়া যাইতাম থুইয়া বাড়ীঘর
বন্ধু তোর লাইগারে
বটবৃক্ষের তলায় গেলাম
ছায়া পাইবার আশে
ডাল ভাঙ্গিয়া রৌদ্র লাগে
আপন কর্মদোষে। [/si
রাকিব ভাই নিস্তব্ধ আর আমি দারুন একা। মায়াবতীকে দেখার পর বুঝেছি প্রেম মহান। যদিও আগে অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছি প্রেম নিয়ে। এখন মাঝে মাঝে মায়াবতীর মায়াভরা মুখখানি চোখে ভেসে ওঠে ।
আর আমি নিজের অজান্তেই হেসে ওঠি। এই নিয়ে বণ্ধুরা প্রশ্ন ও করেছে । হাসছিস কেন? সাতপাচঁ ব্যাখ্যা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি। আমিও এর রহস্যের কূল কিনারা পাই না। এই মাত্র মায়াবতীর চেহারা আমার চোখে ভেসে ওঠেছে আর আমি
হাসছি।
রাকিব ভাই খুব বিরক্তি নিয়ে দেখছেন। হাসি বন্ধ করলাম। আসলে তার করুন অবস্থা যাচ্ছে আর আমি হাসছি!
চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।