আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অণুগল্পঃপূর্ণিমা রাত ও লুসিফার

যা লিখি, হয়ত কিছুই লিখি না। যা লিখব হয়ত অনেককিছুই লিখব। আসল কথা হলো, গল্প ছাড়া কিছুই লিখতে পারি না

একটি অন্যরকম রাতের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে আছি। বাইরের প্রকৃতি অন্যান্য সব রাতের মতো। ভেতরের চেতনা একটু অস্থির।

অস্থির না হলে সেটা হতো অস্বাভাবিক। এই রাতের জন্য অপেক্ষায় আছি দেখে বিয়ে করলাম না- অথচ আমি চিরকাল নারী ভক্ত ছিলাম। চাইলে ব্যবসা করতে পারতাম- ফুলে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি বাড়াতে পারতাম চক্রবৃদ্ধি হারে। খুলতে পারতাম একটি পাঁচতারা হোটেল- যে হোটেলের বারে বসে মাতাল হতে পারতাম ফ্রি’তে। শুধু ধ্যান করেছি আমি।

শয়তান হিসেবে যাদের আমরা চিনি,জানি কিংবা অনুভব করি তাদের দেবতা লুসিফারের সাথে দেখা করার জন্য প্রতি পূর্ণিমা রাতে রক্তস্নান করেছি। আজ আবার পূর্ণিমা। আমি একশ’তম হত্যাকান্ডটি সম্পন্ন করে চুপচাপ বসে আছি। মিনিটে মিনিটে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। লুসিফারের দেখা পাওয়া সহজ কথা নয়।

স্বপ্নপ্রাপ্ত এক গোপন সূত্রের পথ ধরে এতদূর আগাতে পেরেছি। পূর্ণিমারাতে চাঁদ যখন নদীর জলে ছায়া ফেলে,সেই ছায়াকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিতে হবে সদ্য হত্যাকৃত একজন মানুষের হ্রৃদপিন্ড। এরপর রক্তস্নান করে নদীর জলে গোসল করতে হবে। নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। অবশেষে একশ’টি মানুষের রক্তে ভেজার পর এখন আমি লুসিফারের অপেক্ষায় আছি।

বৎস তোমাকে অভিবাদন। চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। কন্ঠস্বর বেশ বয়স্ক শোনালো। এটা কী লুসিফারের কণ্ঠ? ঠিক বিশ্বাস হলো না। আপনি কে? এবার হাসির শব্দ,সেই সাথে খুঁকখুঁক করে কাশি।

সাহস থাকে তো সামনে আসেন। আমি নদী পাড়ে খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জায়গাটা বেশ নির্জন। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। কাউকে দেখছি না।

হঠাৎ কোনো এক গায়েবী জায়গা থেকে একজন বৃদ্ধ লোক আমার সামনে এসে দাড়াল। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। চামড়াগুলো শুকিয়ে গালের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। দাঁড়ি আছে দেখে বিস্মিতবোধ করলাম। কিছুটা ফ্রেঞ্চকাটের স্টাইলে কাটা দাঁড়ি।

চুল-দাঁড়ি পেকে সাদা হয়ে আছে। চেহারাটা আমার খুব পরিচিত। তক্ষনাৎ চিনতে পারলাম না। যার জন্য তোমার এত সাধনা তাকে চিনতে পারছ না? বৃদ্ধের মুখ হাসিহাসি। সাথে সাথে চিনে গেলাম।

আরে এতো গোলাম। পাকিস্তানের বিশ্বস্ত সৈনিক। যাকে সোজা ভাষায় এ দেশের মানুষ রাজাকার হিসেবে চেনে। আমি খারাপ মানুষ। রাজাকাদের নিয়ে আমার এত মাথাব্যাথা নেই কিন্তু কোথা থেকে যেন তীব্র ঘৃণা আমাকে গ্রাস করে নিতে শুরু করল।

আমাকে দেখে তুমি ঘৃণা করছ কেন? তুমিও তো হত্যাকারী। আমরা দু’জনেই সমান। আর তুমি না আমার শিষ্য। আমাকে হতাশ করলে বৎস। আমার কন্ঠ কিছুটা মলিন হয়ে এসেছে।

এই কুত্তার বাচ্চার লুসিফার হয় কেমনে? লুসিফার হবে পাহাড়ের মতো বিশাল,পাথরের মত শক্ত,সাগরের মতো গভীর,থাকবে মৃত্যুর উর্দ্ধে। এই রাজাকারটাকে মনে হচ্ছে কবরে এক পা ঢুকিয়ে বসে আছে। আপনি তবে শয়তানের দেবতা? এই দেশের জন্য-আমি দেবতা। এখন বলো,তুমি আমার কাছে কী চাও? কন্ঠে আগের মতো জোর পাই না। হতাশ হয়ে বসে পড়ি।

আমি চেয়েছিলাম,এ দেশে আমি লুসিফারের এজেন্ট হবো। শয়তানের ছড়ি ঘোরাবো মানুষের উপর। মুহূর্তের ভেতর কুত্তাটি গায়েব হয়ে গেল। জোছনাস্নাত হয়ে আমি আমার লুসিফারের পতন দেখি। যে দেশে গোলামের মতো লোক আছে সে দেশে লুসিফারের আর কোনো এজেন্টের দরকার নেই,সেটা বুঝতে আমাকে একশটি হত্যাকান্ডের পথ পাড়ি দিতে হলো- এই কষ্ট কিংবা ধোঁকার কারণেই হয়তোবা আমি ঈশ্বরের সাথে ডুয়েল খেলার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.