আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মমীকৃত রাখাল বালক

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই

তার নিষিদ্ধ নাম জিঞ্জার, মানে আদা-বর্ণ-মানুষ। চুলের রঙ দেখে এই নামে ডাকা শুরু করেছিল উদ্ধারকারীরা । ওই নামটাই রয়ে গেল। মিশরের গেবেলিনের বালুকাময় নদীতে খুঁজে পাওয়া গেল তাকে। শুকনো কিন্তু অক্ষত দেহ, মাথা হাত পা আঙুল রয়ে গেছে একই রকম।

কিন্তু ঠিক মমী বলা যায় না। কারণ মমীদের শরীর মোড়ানো থাকে, যত্ন করে তাদের জন্য রেখে দেয়া হয় উপঢৌকন, কখন তাদের সেবাসুশ্রুষার জন্য মমীকৃত দাসদাসী। তাকে দেখতে দেখায় সাধারণ মানুষের মতো বয়সে বালক, যদিও কেউ বলছে বয়স কুড়ির মতো। তার সমাধীতে সম্রাটদের মতো মণিমাণিক্য আর স্বর্ণ নেই। ধাতুর ব্যবহার শুরু হয় নি।

মৃত ছেলেটির খাবার আর পানীয়ের পাত্র ছড়ানো। পাত্রের গায়ে আঁকিবুকি। সে সময় অবশ্য গেবেলিনের মানুষ ভাষা আয়ত্বে আনে নি । মাটির পাত্রে এলোমেলো ছবি আকার হদিস মেলে, দুচারটে অক্ষরও। কিন্তু লেখা লেখি তেমন নেই।

ওসব ছাড়া সবাই মন্দ ছিল না। কয়েক হাজার বছর পরে হায়রোগ্লিফিক্স খুব চললো কিন্তু সেটা ভগবান আর রাজাদের গুণগানেই কাজে লেগেছিল। নিজেদের স্বার্থে সূযোগ পেলেই অন্যদের খাটিয়ে নিতে চায় মানুষ। ধর্ম বানায়, তাকে মানায় নিজেরা হয় স্বঘোষিত ইশ্বর( বা তার সন্তান)। মিশরের ইতিহাসে তিরিশটি রাজবংশের কথা বলা হয়েছে ।

সেই জিঞ্জারদের সময় তারও আগে নাকাদা সভ্যতায়। মিশরে তখন সবুজ বনাঞ্চল ছিল। ধীরে ধীরে গ্রাম গড়ে উঠলো তাতে। তরুণেরা হাতির দাত দিয়ে অস্ত্র তৈরী করে শিকার করে বেড়াতো। পোড়া মাটির কাজ আর তাতে রঙ করা অবশ্য শিখেছিল কেউ।

তবে রাজাদের উৎপাত ছিল না, ছিল না খাজনা আদায়ের হিড়িক। ভরপেট খাদ্য ছিল না বলে পুরোহিতগিরি দুর্বিসহ হয় নি। সূর্য-নক্ষত্র-বৃষ্টি উঠতো নামতো - এসবে যাদু দেখেছে, কুমির পূজো করেছে এদের সম্প্রদায়। বালকটি চলছিল নদীর পারে, যেখানে বীজ ছড়ালে বৃক্ষ হয়, গাছের ফলে উদর পূর্তি হয়। আর ঘুমাতো যেখানে ইচ্ছে যতক্ষণ তাকে নরমাংশভোজী পশু আক্রমন না করে।

সময়ের হিসেবে শতবছর অনেক । পৃথিবী একবার সূর্যের চারদিকে ঘুরলে কত সুখ দু:খের কাহিনী বলাবলি হয়। সেখানে ফারাওদের দু হাজার বছর আগের কথা, আর ক্লিউপেট্রাদের জন্যও সুদীর্ঘ অতীত । কিন্তু সেই রসায়নের আবিষ্কারের আগে কী করেই বা ঠিক ঠাক সংরক্ষিত হল এই দেহ? ফারাওদের মমীতে মশলা-আরক দিয়ে দেহ সংরক্ষিত হত। কিন্তু শ্রেফ বালুর ভিতর পুরো শরীরঢুকিয়ে পঁচনরোধের এই অভিনব কৌশল তা কী করে তারা জানল? এখন পাওয়া গেছে বালু এমনভাবে শুষে নেয় দেহের রস যে তাতে তার আর পঁচন ধরে না।

মানুষ মারা গেলে জীবানুরা ছুটে আসে আনবিক শকুনের মতো। জীবাণূরা তখনও খেতে এসেছিল নিশ্চিত । এক নয় দুই নয় ছয় হাজার বছর গেছে, জলহীন জিঞ্জারের দেহটা হজম সম্ভব হয় নি ব্যাকটেরিয়ার দাঁতে। বৃটিশ মিউজিয়ামে রাখা মমীটিকে মনে হবে টাইমমেশিনে তুলে এনেছে কাউকে । যদিও দেহটার প্রাণ নেই।

বেঁচে থাকলে সে অবাক হত, কত প্রশ্ন করেছে মানুষ। "আমি কে" সাইনবোর্ডের গবেষণাকেন্দ্র বসেছে বিদ্যাপীঠসমূহে - ঐতিহাসিক উত্তরটা জেনে নিতে এখন যন্ত্রগণক আর মানুষের সমঝোতা। তারা বলছে মহাশূণ্যের পাঁজরে বিশ্বপিতার আহ্লাদি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তার দেহ অণুপরমাণু হয়ে ছড়িয়েছে চারদিক। এখন ক্রমাগত তারা দুরে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে - এসব কিম্ভুত উত্তরের জটে ক্রমেই পেটমোটা হচ্ছে পুস্তকসমূহ ।

তারপরও কিছু মিল মরে যায় নি। বিস্ময়কর প্রযুক্তির চেরাগের ধোয়াকে আড়াল করে আদিমতম মৃত্যু এসে দাঁড়ায় একই ঢং এ। একদিন স্বজনেরা জিঞ্জারকে কাঁধে করে ফেলে রেখে গেছে নদীর সুড়ঙ্গে । বালুস্নাত শোকার্ত মন্দিরে শুয়ে সে কাটিয়েছে অনেক লক্ষ সৌর রাত। তারপর গত একশত বছর কোলাহলময় একটা যাদুঘরে শুয়ে আছে সে সুসভ্য পর্যটকের ভীড়ে।

--- ড্রাফট ১.২ /জিঞ্জার প্রিডাইন্যাস্টিক সময়কার(খৃ:পূ: ৩৪০০) মিশরের ৬টি মৃতদেহের একটি। সূত্র: http://www.egyptorigins.org/ginger.htm

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.