আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক খ্যাপাটে কবি বা একজন ইবনের মৃত্যু এবং অন্যান্য...



"রাকিবুল হক ইবনকে নিয়ে লেখার কেউ নেই। নবীন-প্রবীণ কয়েকজনই আমাদের প্রত্যাখান করেছেন। সব্বাই আবার সরাসরি না বলেননি। না বলার এটাই রীতি। যাই হোক, আসুন আমরা কবি ও ব্যক্তি ইবনকে যে যেমন জানি, তেমনটাই জানাই অন্যদের।

এখান থেকেই একটি যৌথ লেখার জন্ম হতে পারে, যার মধ্য দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল প্রয়াত এ কবিকে ভালোবাসা জানানো সম্ভব। "-একটু আগে ফেসবুকের মূল পাতায় ইত্তেফাক সাময়িকীর এমন একটি আহবান দেখে বেশ ভালো লাগলো। হয়ত এই ভালো লাগা থেকে তৈরী হওয়া দায় বোধ থেকে এ লেখাটি শুরু করছি। আশাকরি যৌথ লেখাটি সাজাতে রাজীব ভাই (রাজীব নূর)-কে একটু হলেও সাহায্য করতে পারবো। গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় এই ফেসবুকে টোকনদা মানে টোকন ঠাকুরের দেয়া ইবনের একটি ছবি আর তার ক্যাপশন দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

ক্যাপশনটি ছিলো এমন "আজ সকালে অভিজিৎ দাস ফোন করে জানাল, ইবন মারা গেছে। তরূণ কবি রাকিবুল হক ইবন রোড অ্যাকসিডেন্ট মারা গেল। ইবনকে খুব ভালোবাসতাম, এখনো বাসি। দুঃখ, ওকে আর কাছে পাব না কোনোদিন। জানাতেও পারব না, ওরে পাগল- তোর ভেতরের আগুন আমি পড়তে পারতাম।

তুই একটু সময় চাইতিস, দিতে পারলাম না! ক্ষমা করবি, তোর 'গুরু-জী' কে?" ইবনের সাথে প্রায় ৩/৪ কিংবা ৫/৬ মাস আগে আমার শেষ কথা হয়। সে দিনের ঠিক একদিন আগে সে ছবির হাট এসে তার একটি বইয়ের বিনিময়ে কিছু টাকা চেয়েছিল। কিন্তৃ সেদিন আমিও ছিলেম কর্পদশূন্য। পরে অবশ্য চারুকলার সাদিক ভাই ( সাদিক আহমেদ ) তার বইটি কিনেছিল। এরপর সে যে চলে গেল; ওটাই ছিলো আমাদের শেষ দেখা।

তখন অবশ্য সে আমাকে পরদিন তার শান্তিবাগ মাটির মসজিদ সংলপ্ন বাসায় যাওয়ার জন্য খুব করে বলেছিলো। পরদিন সে ফোনও করেছিলো। কিন্তু আমার আর যাওয়া হয়নি; আমাদের আর দেখাও হয়নি। এই ফাঁকিবাজকে তাই এভাবেই ফাঁকি দিল কবি। ইবনের মৃত্যু সংবাদটা সবাইকে জানাতে টোকনদার ওই ছবির লিংকটা নিজের দেয়ালেও প্রকাশ করেছিলাম।

সেখানে এসেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। নির্মলেন্দু গুন বলেছেন, "Feling bad. He was a promising young poet. He wanted to stay close to me. I almost rented a room in Kamrangir chor, but finally he did not turn up. He was running short of regular money. When he got money from his mother from Canada, he fail...ed to make good use of it. A very sentimental boy he was. Suffered lot from lot of physical illness ( cancer) . He wanted to go to Canada to live with her mother but failed to get Canadian visa, so lived alone in darkness. I did not see him very recently, but he was in my mind. At last he died. It was a very sad end of a boy who suffered so much. I read some of his poems and felt he was wiser than his age. I know his mother will now feel guilty for her son. Sorry Ebon, I could not help you survive. Excuse me, my boy. You will be remebered for your poetry for many days to come." তুষার গায়েন লিখেছেন- "২০০২ সালের দিকে, যতদুর মনে পড়ে, ইবনের সাথে আমার পরিচয় হয়। পরিচিত হবার আগেই ওর দুটো কবিতার বই আমার হাতে আসে । প্রথম বইয়ের (অবিশ্বস্ত পৃথিবী আমার) ফ্লাপে ওর ছবি দেখে আমি চমকে যাই ! গোঁফের রেখাও ওঠেনি এমন এক কিশোরের ছবি, যার চোখ দুটো জ্বলজ্বল ...করছে এক সৃষ্টিশীল বিদ্যুতের তীব্রতা নিয়ে। সে অভিমানী পৃথিবীর উপর কারণ কাল অকালেই হরণ করতে চাইছে ওর আয়ু, অন্যায়ভাবে পৃথিবী বঞ্চিত করতে চাইছে ওর সৃষ্টি ও সম্ভোগের অধিকার থেকে ! ওর দ্বিতীয় বইয়ের ফ্লাপে (যথাযোগ্য বিষাদ... ) চোখের সেই উজ্জ্বলতা আর নেই, বিষাদ ভর করেছে দূরারোগ্য অসুখের ছায়া নিয়ে।

দুটো বইয়েই ওর কাব্য প্রতিভার ধার ও স্বকীয়তা টের পাই। অচিরেই পরিচয় হয়, বন্ধুত্ব হয়, কবিতা ও অসুখ নিয়ে আলোচনা হয়; আমি হাঁটি ওর সাথে অনেকদিন, জানতে পারি ওর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন, অসুখের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ওর মায়ের আমেরিকা গমনের কথা। চিকিৎসার ব্যাপারে আমি কোনো সাহায্য করতে পারি কি না জানতে চায় রাকিব। আমার বড় বোন কৃষ্ণা গায়েন তখন এডিনবরা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। আমি তাঁকে এব্যাপারে বলি।

দিদি ওকে সাহায্য করার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং সে অনুযায়ী রাকিব যাতে ইংল্যাণ্ডের ভিসার জন্য দাঁড়াতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠায় । কিন্তু রাকিব কেন জানি শেষ পর্যন্ত আর ইংল্যাণ্ডের ভিসার জন্য আবেদন করে না, বরং সিঙ্গাপুরে যায় চিকিৎসার জন্য; ফিরে আসে যথারীতি। ২০০৫ সালে কানাডায় চলে আসার আগ পর্যন্ত আমার সাথে কম বেশী যোগাযোগ রাখত। বাসায় এসেছে কয়েকবার, আমিও একবার গিয়েছিলাম। শেষবার দেখা হয় আমাদের এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়; আমরা কথা বলি কবিতা নিয়ে, অসুখ নিয়ে, আমরা পান করি কালো কফি - কবিতার আত্মায় চুমুক দিতে দিতে।

তারপর আবার দেখা নেই, ফোন করি, উত্তর নেই, কোথায় কোন মৃত্যুর ছায়া ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়, কে জানে ! আজ ৫ বছরের বেশী হ'ল, আবার ইবনের খবর পেলাম। কিন্তু তখন তো ও আর লোকে নেই, লোকান্তরে। হায়, অভিমানী-বেহিসাবী-প্রখর কিশোর, তোমার কবিতার জগত খুঁজে নিও তবে ওই লোকান্তরে, যেখানে অসুখ নেই ! মুজিব মেহদী বলেছেন, "ইস! মনটা হঠাৎই খুব খারাপ হয়ে গেল। " আর কাবেরী গায়েন বলেছেন- ‎"হায়, অভিমানী-বেহিসাবী-প্রখর কিশোর, তোমার কবিতার জগত খুঁজে নিও তবে ওই লোকান্তরে, যেখানে অসুখ নেই !" টোকনদার ওই ছবিটিতে প্রায় শ'খানেক মন্তব্য পড়েছে। সেখানেও দু:খ প্রকাশ বা স্মৃতিচারণা করেছেন অনেকে।

সেখানে শশ্মান ঠাকুর লিখেছেন, "বইমেলায় ইবনের শেষ ফোন....তোমার সাথে কবিতার একটা সম্পাদনার কাজ করতে চাই....আর কোনদিন দেখা হবে না। " হাসানাল আব্দুল্লাহ লিখেছেন "সংবাদটা খুবই কষ্টের। ওকে আমিও নানা করাণে পছন্দ করতাম। কিন্তু ওর পরিবার ওর ক্যানসারের কথা বলে যে অর্থ ও বিত্তের মালিক হয়েছে তাকে আমি কখনো সমর্থন করতে পারিনি, যদিও বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগে অনেকের মতো আমিও যথেষ্ট সাহায্য করেছি। ...তথাপি আজ ইবন গত হয়েছে, এটা কষ্টের যে একজন প্রতিভাবান তরুণ কবি এভাবে অকালে ঝরে গেলো।

গত বছর সামারে সর্বশেষ ইবন আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলো। " সৌমেন ধর লিখেছেন-"এই ক্ষণজন্মা কবির সাথে আমার কখনো কথা হয়নি। তবে ওর ক্যান্সার নিয়ে যখন লেখালেখি হয় তখন আমি ভোরের কাগজে। সেই থেকে তার কবিতা পড়েছি। তাকে জেনেছি।

কথা বলার ইচ্ছে ছিল। অনেক অপূর্ণ ইচ্ছার মতো এটিও চিরকালের অপূর্ণ রইলো। হায়, জীবন এতো ছোট কেন...। আজ সারাদিন এবং আরো ক'টা দিন মনটা খারাপ থাকবে। " ছিবটিতে ৯ মার্চ মানে ইবনের মৃত্যর দু'দিন পরে করা মন্ত্যবে দীপু হাসান লিখেছেন- "আমি আমার জীবনে দুটা জিনিস খুব এড়াইয়া চলতাম ।

একটা হচ্ছে বিবাহ অনুষ্ঠান আরেকটা হচ্ছে মৃত্য পরবর্তী প্রক্রিয়া । বিবাহ অনুষ্ঠানে আমি যাইনি বহুদিন তাতে আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আমাকে অসামাজিক বলে (আমার কিছু যায় আসে না)। আর দশ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার... সময়টা ছোট ছিলাম বলে মৃত্য পরকর্তী প্রক্রিয়াটি আমাকে দেখতে দেওয়া হয়নি (তারপর থেকে তা আমি এড়িয়েই চলতাম)। ইবন-এর লাশের সাথে গেলাম, গোসল হওয়ার পর চেহারাটা অসম্ভব সুন্দর হয়ে গেলো । সারামুখটিতে শান্তি বিরাজ করছিল, তবে সত্যিই সব কষ্টের অবসানই হলো তোমার ? আহ শান্তি ! ভালো থেকো ! তোমার কবিতাই তোমাকে বাচিয়ে রাখবে, বেচে থাকবে তুমি আমাদের মাঝে ।

সত্যিই আপনজন হারানোর ব্যথা অনুভব করছি ইবন । স্কুল ফাকি দিয়ে যে পথ ধরে বহুদুর হেটে যেতাম, সে পথে আমি একা !" ইবনের মৃত্যর সংবাদটি পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। এমন দুটি সংবাদও এখানে তুলে দিচ্ছি। সড়ক দুর্ঘটনায় তরুণ কবি রাকিবুল হক ইবনের মৃত্যু (কালের কন্ঠ) সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মারা গেছেন তরুণ কবি রাকিবুল হক ইবন (২৪) (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। ধানমণ্ডির একটি হাসপাতালে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

গতকাল বিকেলে তাঁর মরদেহ নানার বাড়ি মাদারীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন কবি ইবন (জনকন্ঠ) কিশোর বয়সে নিজের কাব্য প্রতিভা দিয়ে সকলকে বিস্মিত করা কবি রাকিবুল হক ইবন আর নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কবি তিন দিন মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে সোমবার পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে সকাল ৮টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিলস্নাহি...রাজিউন)।

তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর। রাকিবুল হক ইবনের অকাল মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। শেষবারের মতো কবিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। কবির পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলিসত্মানে ট্রাকের ধাক্কায় মারাত্মক আহত হন ইবন। সে রাতেই তাঁকে ধানম-ির ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের আইসিইউতে টানা চারদিন থাকার পর মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। বিকেলে তাঁর মরদেহ নানাবাড়ি মাদারিপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে রাতে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কবি রাকিবুল হক ইবন ১৯৮৪ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অবিশ্বসত্ম পৃথিবী আমার' প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে।

বইটি সে সময় অভাবনীয় সাড়া ফেলে। কিশোর বয়সী কবির মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিভা দেখে বইয়ের ভূমিকা লেখেন দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী লেখক আহমদ ছফা। এ কাব্যগ্রন্থে কবি লেখেন_ 'চারদিকের পরিবেশ/ পরিস্থিতির কথা চিনত্মা করে আমি/ এই সিদ্ধানত্মে উপনীত হয়েছি যে, বস্তুত/ মৃতু্যর চেয়ে বিশ্বসত্ম আর কিছুই নেই/অবিশ্বসত্ম পৃথিবী আমার। ' তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'যথাযোগ্য বিষাদ যথাযোগ্য আগুন'। এ বইটিও স্পষ্টত জানান দেয়, অফুরনত্ম সম্ভাবনার কবি আসছেন।

দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান বই দুটি পড়ে এত অভিভূত হন যে, নিজের বন্ধু করে নেন ইবনকে। সব সময় তাঁর পাশে রেখে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেন। একইভাবে বয়সের পার্থক্য দূরে ঠেলে তাঁকে পরম আত্মীয়ের মতো কাছে টেনে নেন দেশের খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি-কর্মীরা। ২০০৯ সালে বগুড়ার থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগ থার্ডম্যাগে প্রকাশিত একটি লেখাও দিলাম। প্রতেক দশকেই কিছু কিছু আগুন থাকে।

ম্যাচবাক্ন্ররর সহিত কাঠির ঘর্ষণ পাওয়া মাত্রই দপ্ করে জ্বলে উঠে। প্রকৃতির অমোঘ বিধানে আবার দ্রুত নিবেও যায়। কিন্তু অস্তায়নের পূবে কবি কর্তৃক জীবন সস্পর্কিত যেসব ম্যাসেজ শৈল্পিক ধ্যানে ক্রমাগত নিজস্বতা, নতুন চিন্তাধারার প্রাণনায় অন্তর্মগ্ন থেকে অংশতঃ আলোকবর্তিকা রূপে যা কিছু স্ফটিক রশ্মি বঙ্গ সাহিত্যের কাব্যভাণ্ডারে অর্পন করে তা স্বর্ণ সৌধপুঞ্জ শ্বাশত স্তম্ভতুল্য। তারা গতানুগতিক প্রয়াসসিদ্ব গড্ডলঐতিহ্যকে বায়ে রেখে দক্ষিনেঃ সেখানে বিশ্ববোধের সাথে নন্দন চেতনার স্ফূর্ত-স্ফূরণ। সেখানে রত্নসম্ভারের প্রাচুর্য তুলনারহিত; গভীর সমুদ্রের তলদেশে ডুব দেবার ক্ষমতা এবং বিস্তীর্ণ রত্নরাজির ভেতর থেকে, ডুবুরীর সততায় মূল্যবান ধাতব ঐশ্বর্য ধারন করবার দক্ষতা অতুলনীয়।

বস্তুত কবিতার বর্ম ও সজ্জা সাজাতে ইমেজ শূন্য নয়, নয় পাংশুবর্ণ: মিয়্রমান একঘেয়েমির পরিবর্তে অগণন বিষয় বিষয়ী'র, গভীর চিন্তাশ্রয়ী নিভৃত কাব্যচর্চ্চাকারী হয়ে ওঠে। আদ্যপান্ত কবির গড়িমা গায়ে অপ্বেক্ষাকৃত অগণন কবির ভিড়ে হৈ-হুল্লোড় ব্যতিরিকে নিভৃত, নিরীক্ষাধর্মী সূচি কর্ম পালনে ( আশির শোয়েব শাদাব, বিষ্ণু বিশ্বাস, ও নব্বইয়ের শামীম কবীর_আরো দু'একজনের তালিকা দেওয়া যাবে) ব্রত থাকেন। শূন্যে এসে তেমনি এক মেধানির্ভর কবি রাকিবুল হক ইবন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সময় সন্ধিক্ষণে আত্মস্ত করে সে_ মহৎ অগ্রযাত্রায় সারথী হলেন। কবি রাকিবুল হক ইবনের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ্ ‌ উপমানব-এর তার কাব্যের সঙ্গে আমার পরিচয়। এর আগে__ অবিশ্বস্ত পৃথিবী আমার - ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ ও অন্যটি __ যথাযোগ্য আগুন, যথাযোগ্য বিষাদ - ফেব্রুয়ারী ২০০০ আমার দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে এখনো।

তবে _উপমানব কাব্যগ্রন্থ পাঠে আত্মবীক্ষনের দৃশ্যগুন বিমূর্তায়নের মতো ধাতব শিল্প-কাঠিন্যে অঙ্কিত হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এখানে মানুষ প্রাণীটির প্রায়শ বিমূর্তায়নে খঁজে পাওয়া যায়। তবে সে অবয়ব কুয়াশায় ঢাকা পড়ে থাকে। কবি ইবন বোধগম্যতার জগতের বাইরের একটি অবোধ্য জগৎকে ভিন্ন কাঠামোর ভেতর দিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। তার নির্মানগুলো কখনো কখনো নন-সাবজেক্টিভ হয়ে উঠে।

তিনি বৈচিত্রময় কিছু আবহ নিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন। আবার একই আবহের ভিন্ন ভিন্ন রূপদান করে থাকেন। ইবন দাহতাড়িত হয়ে নিজের খেয়াল খুশিমতো যন্ত্রণা চাপের_মূত্রত্যাগ__করেন। যে কারনে পাঠকে বোঝানোর দায়িত্বটি এড়িয়ে যান। তবে পাঠককে নিজের মতো করে বুঝে নেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকেন।

......................................................................................................................................................কবি রাকিবুল হক ইবন ভ্রমন করেছেন বিভিন্ন দেশে ও প্রদেশে। যেমন, ভারতের অসংখ্য প্রদেশ, মালশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের বহু হোটেলে, ক্যাফে ও অনামা বিচে আর প্রায় জনমানবহীন অরণ্যে ও সমুদ্রঘেরা দ্বীপে। সেইহেতু এই কবির কিছুটা অরণ্যজীবন-কিছু সমুদ্রজীবন ও ক্ষণিক প্রবাস জীবনেরও ছায়া প্রতিফলিত হয় কাব্যে। তিনি নিজস্ব কালচারের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখেন। ইবনের কবি-স্বভাব এবং লিখনরীতি উভয় দিক থেকেই নগর ভাবনায় নিমজ্জিত এবং মৃতু্ চেতনায় ব্যথিত ভাবুক।

আর সভ্যতার _রণ-রক্ত-সফলতা__তার সেই বিষাদাপ্লুত বেদনার বোধকে উসকে দিয়েছে অনেক পরিমানে। কবির ভাড়তি টান রয়েছে সমুদ্র ও অরণ্যের প্রতি। কেন এত টান ? সমুদ্র এবং অরণ্যের মাঝেই যে পরম শূন্যতার বিস্ফোরণ তার রহস্য উন্মোচনে নাকি সে-সৌন্দর্য্য রহস্য উদ্ঘাটন না করতে পারার জ্বালায় ? তবে যে মুগ্ধতা থেকেই তার মন জিজ্ঞাসু হয়ে উঠুক না কেন তার প্রকাশ রীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দু'টোই সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। ইবন প্রথাগত, দূবর্ল ছড়াগন্ধী কবিতার অনাধুনিক বৃত্ত ভেঙ্গে যে _নতুন ধাঁচের স্টাইল বেছে নিয়েছেন। তার সে-থিম, আঙ্গিক কাঠামো নির্মান তার পরোক্ষে প্রেরণা যোগাচ্ছে পশ্চিম বঙ্গীয় রীতি।

ইবনের কাব্যে সে-সব নগরের সাক্ষাত ঘটে যে-সব নগরের আবহাওয়া অশনাক্তযোগ্য। কবি সেই বাস্তব জগতে থেকেও সৃষ্টিশীল কল্পনায় লেখনীর মাধ্যমে সে-শহরকে উন্মোচন করেন তা অনেকটাই অবাস্তব, এলিয়ট কথিত__আনরিয়েল সিটি। ...............................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে রাষ্ট্র যে-তমসাক্রান্ত অন্ধকারে নিমজ্জিত তা থেকে রেহাই পেতে __রক্ত দিয়ে মুছে যেতে হবে/ সমগ্র অধ্যাদেশ ও দলিল__(রাষ্ট্রপতি-দুই) তার কবিতায় আঞ্চলিক পটভূমিকার সাথে বহির্বিশ্বের সংশ্রব আছে, আছে দ্রোহ্-প্রতিবাদ, রক্তে আগুন আছে, আছে দার্শনিকতাও। সেই আগুন রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে কমিউনিকেট করে। তার __উপমানব__গ্রন্থে নারীর উপস্থিতি খুবই কম, নেই যে তা নয় তবে যা আছে সেগুলোর ভালবাসা বাসী খুব উচ্চকিত করে তোলে-না।

এ থেকে উপলব্ধি করা যায় যে নারীকে ঘিরে কোনো ধরনের ভাবালুতায় আবর্তিত হতে চান নি। বরং তারুণ্যের যে দ্রোহ যন্ত্রণা ভেতরে ভেতরে স্পন্দমান হয়, মানুষের দুঃখ-যাতনা যেভাবে সাকার হয়ে ওঠে। সে....দুঃখ, যন্ত্রণা, দ্রোহ, বিষাদকে নিয়েই বিবর্তিত হতে চেয়েছে। এ অঙ্কনের চিত্র সামষ্টিকভাবে হলেও কবি ইবনের চিত্রে সে শিল্পমূল্য শিল্পিত উৎকর্ষ ও সুষমার সম্মিলনে পংক্তিগুচ্ছ উৎকষর্তা লাভ করেছে। যেমন___ ১. আমার মা সকল ক্ল্যাসিক সমুদ্র পদার্পনে- হাঁটে, অর্ধেক পা অর্ধেক মস্কোর ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে (আমার মা সকল ক্ল্যাসিক) ২.............................................................. .............................................................. ............................................................ ............................................................ ৩..................................................................... .................................................................... ....................................................................... ............................................................................ ........................................................................... ..................................................................কবি ইবনের আত্মদর্শন উপরোক্ত পংক্তিগুলোতে ফুটে উঠেছে।

রবি ঠাকুরও বলেছিলেন __শিল্পকলা হবে আত্মদর্শন। ইবনও সেই পথেই মনমতো ও সাধ্যমতো সেই দর্শন বা আত্মবীক্ষণকেই প্রকাশ করলেন। .............................................................................................................................কবি রাকিবুল হক ইবন সেই রহস্যময় মনোযাত্রার মাধ্যম্যে অরূপ জগতের সন্ধানে বেড়িয়েছেন। তার কবিতা আধুনিক কলা-কৌশল; উপমা, অনুপ্রাস, আবহ, আঙ্গিক, প্রভৃতি স্বাচ্ছন্দ্যে আবৃত। তবু কারো কারো কাছে পংক্তিগুচ্ছ জটিলাকার মনে হতে পারে।

তবে এ ক্ষেত্রে বলতে পারি তার কাব্য অনেকটা আখের মতো প্রথমে কঠিন আবরণ পরে চিবুতে চিবুতে মূল রসায়ন। ..............................................................................................................................................................................................................................................বুঝি, ইবনের যত স্বার্থকতা এখানেই ওঁৎপেতে থাকে আর শূন্যের অনেক গতানুগতিক কবিতাকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে বেড়ে উঠতে চাইছে। তাকে বুঝতে হলে __অনেক অল্প আকাশ __নয় বিস্তৃত-অসীম আকাশের প্রয়োজন। (অসস্পূর্ণ, চলবে, শূন্যস্থানগুলো পূরন করা হবে ....................................) লেখাটি ইবন নিজেই তার ব্লগে দিয়েছিলেন এবং তা হুবুহু এভাবে। ইবনের ব্লগ : http://www.somewhereinblog.net/blog/ebon007


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।