মেয়েটা কাঁদছিল। শুক্রবার সকাল। ওরা যাচ্ছিল শিশুপার্কের দিকে। ওর বাবা কি ফিরবে, না মেরে ফেলবে তাঁকে। ওর মা সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যুদ্ধ হচ্ছে লিবিয়ায়_সৌদি আরবে নয়।
ও জিজ্ঞেস করল, সৌদি আরব থেকে লিবিয়া কত দূর। দোহারের গ্রামের মেয়ে জানত না। বাবার উপার্জনের টাকায় শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে এক ভাতিজি ও ভাতিজি জামাইয়ের সঙ্গে। তবুও যদি শক্তিমান দেশের তেলযুদ্ধ নিখুঁতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে গ্রাস করে গণতন্ত্রের বন্যায়, কী হবে ওদের?
আমি একটি সংস্কৃতিকেন্দ্রে কিছু লোকের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। একটি মার্কিন সমর্থিত এনজিওর লোক বলে আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল কেউ, যখন ওরা চে গুয়েভারার মৃত্যুবার্ষিকী ও মাও সেতুংয়ের জন্মদিন পালন করছিল।
এখন ভোল বদলিয়েছে ওরা_মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিমানদের হস্তক্ষেপের পক্ষে। হাজার হাজার বাঙালির জীবন বিপন্ন হচ্ছে। লিবিয়া থেকে হাজার হাজার বাঙালি পালাচ্ছে_ তাতে ওদের মাথাব্যথা নেই। এ উদ্যোগের হোতাটি প্রতি-বিপ্লবের আগে মিসর সফর করেছিল। বিশ্বব্যাপী ওদের নেটওয়ার্ক।
আমি পড়েছি বিশ্বব্যাপী শক্তিমানদের প্রতি-বিপ্লবী নেটওয়ার্ক এমনই কাজ করে। ওরা ভেবেছিল ওদের মুখে মাও ও চে'র মুখোশ দেখে আমি ওদের আপন ভাবব। কিন্তু ওদের মুখোশটি খুলে গেল।
ওরা কোনোদিন ইরাক ও আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি। ওরা প্রতিবাদ করেনি বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেনের বিরুদ্ধেও।
ওরা কেন মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত গণতন্ত্রের জোয়ার বওয়াইতে চাইবে? দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন লিখেছে, এ গণতন্ত্রের জোয়ার তেলভিত্তিক বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্রিটিশ-মার্কিন আধিপত্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। কোনটা আশা, কোনটা দুরাশা_তা জানি না।
লরেন্স অব আরাবিয়াহ নামক ব্রিটিশ দুষ্কৃতকারী আরবদের বিদ্রোহকে লেলিয়ে দিয়েছিল তুরস্কের খলিফার বিরুদ্ধে। আমাদের দেশের মানুষ যখন মহাত্মা গান্ধী ও মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনে তুরস্কের জনগণকে সমর্থন দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে_তখন শরিফ প্রশাসকের নেতৃত্বে গোটা কয়েক আরববিরোধী শক্তিমান রাষ্ট্রকে জিতিয়ে দেয়। জার্মানি-তুরস্ক-বার্লিন-বাগদাদ রেলওয়ে তৈরি করতে চেয়েছিল।
এতেই ব্রিটিশ মার্কিনিরা তুরস্ক ও জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু করে। তার প্রায় ১০০ বছর পরও আরব বিশ্বে এখনো রেললাইন আসেনি।
মুবারক যা-ই করুন না কেন, আট কোটি মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করেছিলেন। আইএমএফ চাপ দিয়ে তাঁকে ভর্তুকি বন্ধ করেছিল_খাবার ও তেলের দাম বাড়িয়েছিল। তাই জনগণ তাঁর ওপর খেপেছিল।
যারা এ কাজটি করিয়েছিল, তারা কি জনগণকে সামাল দিতে পারবে? হাতের পুতুলদের দিয়ে আরব বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
ক্রমেই বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে নয়, দেশে শ্রমবাজার সৃষ্টি করে আমাদের অর্থনীতিকে পুষ্ট করতে হবে। আমরা অনেকেই গাদ্দাফির কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ব্যাপারে তিনি ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন, যদিও স্বীকার করেছেন তিনি শক্তিমান রাষ্ট্রের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তাদের ফাঁদে পড়েই তিনি আবদুল কাদের খানের পারমাণবিক অস্ত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু তিনি দরিদ্র লিবিয়াকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন_যা আমাদের দেশের ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছিল। কোথায় যাবে এ মানুষগুলো?
গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে শক্তিমান রাষ্ট্রের সেনাপতিরা, বুদ্ধিজীবীরা নন। গেটস আর মুলেন বলছেন এ সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হবে।
তত দিনে কি ওই মেয়েটির বাবা ফিরবেন? কেউ কি প্রতিবাদ করবে এ এই আগ্রাসনের? মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের অন্যতম শ্রমবাজার। এ দেশের দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সর্বস্বান্ত হয়ে আর্থিক সচ্ছলতা আনার লক্ষ্যে সেসব দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে আমাদের ভাবতে হবে নতুন করে। সময় থাকতেই এ কাজটি করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।