গেদু চাচার খোলা চিঠি।
মা মাধবী,
কেমন আছিস রে তুই? তোর জন্যে আমার বড় কষ্ট হয় রে মা...তোর একটা সংসার হতে পারত...কোল আলো করে ফুটফুটে সন্তান আসতে পারত। কিন্তু তা আর হল না রে মা। কিভাবে তুই ঐ পথেই চলে গেলি...আমরা বুঝেই উঠতে পারলাম না। মা রে,তোর বাবা বড় কষ্ট করে তোর পাঠানো টাকাগুলো তুলে আনে...আর কতদিন এই টাকায় বাজার করে আনা তরকারি রান্না করে খাওয়াবে এই দুঃখে তোর মা আজও কেঁদে মরে।
পড়া লেখায় তুই বরাবরই ভাল ছিলি...আমরা গর্ব করে বলতাম আমাদের মাধবী মা এলাকার মধ্যে সব থেকে ভাল ছাত্রী...ও আমাদের মুখ উজ্জল করবে। একটা ঝড়ে সব উলট পালট হয়ে গেল রে মা...।
মাধবী মা, আমি যখনি তোদের বাসায় যাই তোর মা আমাকে বলে একবার হলেও তোর কাছে নিয়ে যেতে...বারবার বলে একবার দেখেই চলে আসবে...আর জালাবে না। আমি বুঝাতে পারিনা অতবড় ঢাকা শহরে কোথায় খুজব?কোথায় গেলে পাবো আমাদের এক সময় স্বপ্ন দেখান মাধবী মাকে। তোর মা আজও এক বুক আশা নিয়ে বসে আছে কবে তুই আসবি...তোর ঘরটা আজও গুছিয়ে রাখে।
প্রতি বছর এখনো তোর মা আমের,কুলের বা চালতার আচার বানিয়ে রাখে যদি তুই এসে চেয়ে না পাস। গ্রাম কখনও পর হয়না...পর হই আমরা,আমাদের কথাবার্তা...চালচলন। তুই কি জানিস তোর প্রিয় সই শেফালী এবারও এসে তোকে খুঁজে গেছে?বলে গেছে একবার তোকে পেলে ভিষণ ঝগড়া করবে...আরও বলে গেছে তোর ছেলের সাথে বিয়ে না দিলে ও নাকি ওর মেয়ের বিয়েই দেবেনা...কোথায় যেন পড়েছিলাম...
"সুখের কথা কেমনে বলিলে...
এমনও সজল আঁখিতে"
মা মাধবী,সামাজিক ভাবেই আমাদের মেয়েরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় না। একটা সময় ছিল যখন মেয়ে মানেই বঞ্চনা ছিল কিন্তু এখন সেই ধারনা কিছুটা পাল্টালেও তারা সামাজিক ভাবে নিরাপদে নেই। তোরা তো আর উন্নত বিশ্বে জন্ম নিসনি যে তোদের সামাজিক অনিরাপত্তার ব্যাপার গূলো বলে দেয়া হয়...বলে দেয়া হয়না পরিবারে থেকেও কি কি বিপদ আসতে পারে আবার তোদের কথা শুনলেও পাত্তা না দিয়ে উড়িয়েও দেয়া হয় অনেক সময়।
কোন এক পত্রিকায় পড়ে আমি অবাক হয়ে গেছি এমন কিছু ঘটনার কথা জেনে। তেমনি এক সংঘাতে পরে তোর জিবনটা এলোমেলো হয়ে গেছিল। ইশ্ যদি শুনত তোর কথাগুলো ঐ সময়; তবে আজকে তোর এমন জিবন হত না।
মা মাধবী,তোর ভেতরের কষ্ট অনুধাবন করা কঠিন...আমাদের সমাজ তোকে অবাঞ্চিত জানে,তোদের জায়গা হয়না হাস্পাতালে যদি জানতে পারে তোদের পেশা...আর যদি এই পৃথিবীর মায়া কখনো ত্যাগ করে কেউ তবে নাকি অনেক জায়গায় তাদের ধর্মীয় মতে শেষ যাত্রাতেও সামাকজিক ভাবে রয়েছে অনেক বাধা। তুই চুরি করিস না,ডাকাতি করিসনা তবে তোর দোষটা কোথায়?যাদের আমোদের জন্যে নিজেদের জিবন বিলি করে দিচ্ছিস তারা সমাজের সব সুবিধা পায় কিন্তু তোদের বেলায় নানান বিধি নিষেধ।
মাধবী মা,যদি তুই আমাদের সমাজে স্বাভাবিকভাবে জিবন যাপন করতি তবে তুই হতে পারতি কারো বধু...কারও মা অথবা কারও দুষ্টুমিতে ভরা বান্ধবী...বা কোন প্রতিষ্টানের গর্বিত কর্মকর্তা। আমাদের ঘুনে ধরা সমাজের নানান বিধিনিষেধের ফাঁকফোকরে তোদের মত অনেক মাধবী তাদের সাধারণ জিবন যাপনের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে...চলে যায় অন্ধকার জিবনে আবার অনেকই বাধ্য হয়ে এমন পেশা বেছে নেয়...আর আমাদের মত অনেকেরই তথাকথিত ধ্যান ধারনার বলি হয়ে যায়। আমরা যদি শুধু এতটুকু চিন্তা করতাম তোদের পাঠানো টাকা গোপনে অনেক মানুষের আহার যোগায়...স্বপ্ন পুরণ করে তবে আমাদের উচিৎ ছিল ঘেন্না ভরা দৃষ্টিতে না তাকান। আর দশটা বাংলাদেশী নাগরীকের মত তোদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।
পরিশেষে ভাল থাকিস।
নিজের প্রতি খেয়াল রাখিস। আর পারলে তোর মার সাথে কথা বলিস।
ইতি তোর,
গেদু চাচা,
১২-০৩-১১ ইং।
মাধবীকে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।