আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালোগ্লাসের দামি গাড়িতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, কলকি অবতার ইউনুস সাহেবের যত্রতত্র অসন্মানী আর মাননীয় মহিলা আইনজীবীর আস্ফালন

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন বা এর কার্যক্রম সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. মিজান সাহেব সম্পর্কেও আমার জানাশুনাটা অল্পবিস্তর। সত্যিকথা হচ্ছে যে, এই পদে আসার আগে আমি ওনার সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল ছিলাম না। এটা অবশ্যই আমার জানা বা জ্ঞানের দুর্বলতা। তবে মাসখানেক একটি সেমিনারে তাঁর বক্তব্য শুনার পর ভদ্রলোকের প্রতি আমার একটা অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ জন্মে।

সে সেমিনারে অনেকটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতোই তিনি বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, বাংলাদেশের বর্তমান এই বাজে অবস্থার জন্য দায়ী পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং যতদিন আমরা পুঁজিবাদের এই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে না পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই। ধারণা জন্মাল তিনি হয়তো মওলানা ভাসানী, কমরেড মনিসিংহ, কমরেড ফরহাদ, কমরেড তোয়াহা, কমরেড আবদুল হকদের মতো নির্লোভ ও সাদাসিদে ব্যক্তিদেরই অনুসারী। মনে এ বিশ্বাসও জন্মাল তাঁর দ্বারা কিছু একটা করা সম্ভব। একটা অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ থেকেই এই লোকটিকে সামনে থেকে একনজর দেখার ইচ্ছা জাগল। দেখা অবশ্য পেলামও এবং সেটা কোন প্রকার পূর্বপ্রস্তুতি ব্যতিরেকেই।

তবে চেয়ারম্যান মহোদয়ের দেখা পেয়েছিলাম এটা বললে ভুল হবে, দেখা পেয়েছিলাম কালোগ্লাসের আবৃত ওনার গাড়িটিকে। দিন দুয়েক আগে নুর হোসেন চত্বরের কাছে অনেকের মতো আমাদের বহনকারী গাড়িটিও (গাড়ি মানে গণ পরিবহন) যানজটে আটকে ছিল। ঠিক তখনই জানালার ফাক দিয়ে পাশে দাড়ানো "মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান" পতাকা সম্বলিত পতাকাবাহী গাড়িটি নজরে আসল। সামনে ড্রাইভার আর চেয়ারম্যান সাহেবের গানম্যান বসা। ভাবলাম, পেছনেই হয়তো চেয়ারম্যান মহোদয় বসে আছেন।

অনেক আগ্রহ নিয়ে তাঁকে দেখার আশায় পেছনের দিকে তাকালাম। না, চেয়ারম্যান মহোদয়কে দেখতে পেলাম না। দেখতে পেলাম একসারি কালোগ্লাস যা চেয়ারম্যান মহোদয়-কে সযতনে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করছে। বছর কয়েক আগে শুনেছিলাম যে, ঢাকার রাজপথে পুলিশ নাকি কালোগ্লাসের গাড়ি নিষিদ্ধ করেছে। নিয়মটি এখনো আছে কিনা আমি জানিনা।

কিংবা এমনো হতে পারে নিয়মটি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা তার সমগোত্রীয়দের জন্য প্রযোজ্য নয়। চেয়ারম্যান মহোদয়কে দেখতে না পেয়ে অনেকটা "দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর" আশায় তাঁর গাড়িখানির দিকে একনজর তাকালাম। গাড়ির মূল্য সম্পর্কে আমার তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে আমার চোখ যদি আমার সাথে প্রতারণা না করে থাকে তাহলে বলতে পারি এমন বিলাসি গাড়ি ঢাকার রাজপথে হরহামেশা দেখা যায় না। একটু পরে সিগন্যাল ওঠে গেল।

নিমিষেই চোখের সামনে থেকে চেয়ারম্যান মহোদয়ের গাড়ি মিলিয়ে গেল। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যখন এমন প্রটোকল নিয়ে চলাফেরা করেন, এমন বিলাসী গাড়িতে চড়েন তখন কি তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তথা জনগণের জীবনমানের সাথেই তামাশা করছেন না? সর্বোপরি তিনি কি জনগণের মানবাধিকারটাকেই তার আচরণের দ্বারা বৃদ্ধাংগুলি দেখাচ্ছেন না? একজন সচিব-কে হয়তো এ ধরণের আচরণ করলে মানায়। কারণ তিনি জনবিচ্ছিন্ন, জনগণের কাছে তার কোন দায়বদ্ধতাও নেই। ক্ষেত্রেবিশেষে তিনি হয়তো নিজেকে জার্মানীর হিটলারের মতোই নীলরক্তের প্রাণী মনে করে আমাদের মতো ইতরদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবেন, বিচ্ছিন্ন রাখেন। একজন মন্ত্রীকেও হয়তো এ আচরণ করলে মানায়।

কারণ তিনি ধরেই নেন জনগণ যেহেতু তাকে নির্বাচিত করেছে তাই জনগণের পয়সা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহারের অধিকার তার আছে। কিন্তু মুখে সমাজতন্ত্রের ফেনা তোলা তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রদেশের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এমন বাহুল্যতা কি প্রাসংগিক? নিজের কাছ থেকে কোন উত্তর পাইনা। উত্তরটা হয়তো তাকে যারা নির্বাচিত করেছেন তারাই ভাল দিতে পারবেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে এই যে উত্তর দিতে তাঁরা বাধ্য নন। সন্মানী ইউনুস সাহেবের সন্মান নিয়ে অনেকেই আজ উদগ্রীব।

কিন্তু যাদের বেশি উদগ্রীব হওয়ার কথা ছিল তারা কিন্তু কেউই উদগ্রীব নন। হ্যাঁ, আমি এখানে তাঁদের বলতে গ্রামীণ ব্যাংকের ভাষার সেই তথাকথিত ৮৩ লক্ষ সুবিধাভোগীর কথাই বলছি। একজন মাত্র শেখ মুজিবের নির্দেশে, তারপর প্রতি আস্থা রেখে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী মুত্যুকে পরোয়া না করে মুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। কালের বিবর্তনে আওয়ামী লীগ একটি পচনশীল প্রগতিশীল দল। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আর মাস্তান ছাত্রলীগই এখন এই দলের নিয়ামক শক্তি।

তারপরেও আমি বলব এ দলে এখনও খুব অল্পসংখ্যক লোক হলেও আছেন যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে তাঁদের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারেন। এর কারণ একটাই: তারা অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন বাংলা এবং বাঙ্গালীর জন্য বঙ্গবন্ধু কতোটা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৮৩ লক্ষ মানুষ যদি তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়ে থাকে, নতুন জীবন লাভ করে, তবে তাঁরা কেন প্রতিবাদ করছেনা? কেন তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন করে বলছেনা এই লোকটি আমাদের ভাগ্যবিধাতা, এই লোকটি কলকির অবতার, তাঁকে ছাড়া আমাদের চলবেনা, আপনি তাঁকে টানা-হেচড়া থেকে বিরত থাকুন? হ্যাঁ, উদগ্রীব অবশ্যই কেউ কেউ হচ্ছেন। অবশ্য তাঁরা কেউই গ্রামীণব্যাংকের সরাসরি সুবিধাভোগী নন। এদের মধ্যে একদল আছেন বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করতে অভ্যস্ত, আমাদের চিরায়ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির লালনকারী মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ।

আরেক পক্ষ হচ্ছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ও বাড়িতে বসবাসকারী বহুজাতিক কোম্পানীর আইনী পরামর্শক কতিপয় আইনজীবী। তবে উদগ্রীব হওয়ার এই প্রতিযোগিতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন এক মহিলা আইনজীবী। ওনার উদগ্রীব হওয়ার মাত্রাটা এমন চরম পর্যায়ে পৌছেছে যে অভিব্যক্তিটাকে এখন আস্ফালন বলাই শ্রেয়। ইউনুস সাহেবের রীট আবেদন খারিজ হওয়ার পরে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে যেয়ে উক্ত মহিলা আইনজীবী আদালতকে ইউনুস সাহেবের নোবেল পুরস্কার ফেরত দিতে চেয়েছেন। বটে! নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সময়ে কি নোবেল কমিটি ইউনুস সাহেব-কে এমন সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন যে, এটা অর্জনের মাধ্যমে তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে চলে গেছেন? এটার বদৌলতে তিনি সব জায়গায় আলাদা প্রটোকল পাবেন? আদালত বিচার করবে প্রচলিত আইন কি বলে সে ধারা মোতাবেক।

প্রচলিত আইনের বাইরে যাওয়ার সাধ্য আদালতের নেই। আদালত যদি প্রচলিত আইনের ব্যত্তয় ঘটিয়ে এ রায় দিয়ে থাকে তবে মাননীয় আইনজীবী সেদিকটা তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু তা না করে এখানে নোবেল পুরস্কারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা কেন? বুঝলাম, তালগাছবাদীরা শুধু ব্লগেই নয়, আদালতেও সগৌরবে বিরাজমান।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।