ja
[img]http://comps.fotosearch.com/compb/CRT/CRT159/view-outside-home_~15259-34AT.jpg[/img]
ছুটির দিন ভোর ছয়টায় প্রচণ্ড এক অতৃপ্তি নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে তমালের। অফিস না থাকলেও ব্যক্তিগত কিছু কাজ আছে তাই দুইটা দিন অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। অবশ্যক এত সকালে উঠার দরকার ছিলনা, কিন্তু ঘুম ভালো হয়নি, সেই রেশ ধরে এখন আর বিছানায় থাকতে ইচ্ছা করছেনা। ঠিক কি কারণে ঘুম হলনা তা তমালের কাছে স্পষ্ট নয়। কাল সন্ধার পর অফিস থেকে ফেরার পর তুহিনের ফোন পেয়ে বেরিয়ে পড়ে সময় কাটানোর জন্য।
তুহিন ঝাড়বাতি কিনবে তাই তমালের ডাক পড়ল যদিও তুহিন জানে ঝাড়বাতি সম্পর্কে তমাল খুব সামান্যই ধারনা রাখে। জিইসি’র ‘ক্যান্ডি’তে নাস্তা সেরে দুজন হাঁটতে শুরু করে ‘চৌধুরী লাইটিংস’র দিকে। দূরত্ব বেশি নয়, অল্পক্ষণের মধ্যেই তারা পৌঁছে যায়। বিশাল শোরুমে সাজানো হাজার হাজার ঝাড়বাতি দেখে তমালের চোখে ধাঁধা লেগে যায়। সে আদতে এইসব পার্থিব চাকচিক্যের প্রতি ততটা মোহগ্রস্থ নয়।
তাই দ্রুত নজর এড়িয়ে বাইরে ব্যাল্কনিতে এসে দাঁড়ায়। তুহিন এসে বলে, কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন!!
- দেখ তুই, আমি এসব বুঝবনা।
- তুই বুঝবিনা বলেইতো তোকে নিয়ে এলাম। যে মুখে বলে বুঝেনা তার ঐ বস্তুনিচয় সম্পর্কে রুচিবোধ ভালো থাকে।
- হুম, ভালই বলেছিস।
- শুধু ভালো বল্লেতো হবেনা, এখান থেকে একটা লাইট চুজ করে দে।
- আমার পছন্দ কি তোর ভালো লাগবে?
- আচ্ছা যা, তোর যেটা পছন্দ হবে আমি সেটাই নেব।
- তা কি করে হয়!! আমার পছন্দের লাইটতো আমার ঘরেই মানাবে, তোর ঘরতো সে আলোকিত করতে পারবেনা।
- তাইলে ঠিক আছে, তোর জন্য দেখ।
- আমার ঘরে ঝাড়বাতি!!! গরীবের ঘোড়ারোগ যাকে বলে!!!
- ব্যবস্থা আমি করব।
- যার ঘরে ছাদ নেই সে ঝাড়বাতি টাঙাবে কোথায়!!
- ছাদ লাগবেনা, চালায় টাঙিয়ে দিবি।
- ঐ উজ্জ্বলতা শুধু আমার ঘুমটাই কেড়ে নিবে। আমার ঘরে তার কোন উপযোগিতা নেই। সেখানে একটা এনার্জি সেভিং ল্যাম্প আর একটা ডিম লাইট যথেষ্ট।
- কিন্তু তোর মন কি বলে?
- মনের ক্ষুধা মেটানো মানুষের সাধ্যি নয়।
পৃথিবীতে অনেক কিছুই এড়িয়ে চলতে হয়। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রাখতে হয়।
- তাই বলে স্বপ্নও দেখবিনা?
- যেই স্বপ্ন পথভ্রান্ত করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে সেই স্বপ্নকে আমি উৎসমুলেই দমিয়ে ফেলি।
- হয়েছে, আর বুঝাতে হবেনা। ঐ নীলাভ ঝাড়টা ভালো লেগেছে কিন্তু বিশাল দাম হাঁকছে।
- ভালো যদি লেগেই যায় তবে টাকাতো তোর বাঁধা হতে পারেনা।
- তা ঠিক, কিন্তু ঝাড়টা মনে হচ্ছে আমার ঘরে মানানসই হবেনা।
- তাহলে আবার আফসোস কেন!! বাদ দে, অন্য ঝাড় দেখ।
- হুম... চল দেখি কিছু।
দুইজন আবার ঢুকে পড়ে শোরুমে।
নানা বর্ণিল চোখ ধাঁধানো সব ঝাড়বাতি। এর মধ্যে নিজের শয্যাকক্ষের উপযুক্ত একটা বেছে নেয়া সত্যি দুরুহ ব্যাপার। সাময়িক মোহ অনেক সর্বনাশ ঘটিয়ে ফেলতে পারে। দেখা যাবে অনেক পয়সাপাতি খরছ করে অনেক সময় ব্যয়ে কিনে নিল একটা, বাসায় ফিরে দেখা গেল সেটা আর স্যুইট করছেনা। ঘরের অন্যান্য অনুষঙ্গের সাথে মোটেই মানানসই হচ্ছেনা।
তবে যে পুরো পয়সা আর সময়টাই জলে গেল। দীর্ঘ দুইঘন্টা ঘাঁটাঘাঁটি করেও পছন্দের ঝাড় না পেয়ে বিফল মনোরথে দুই বন্ধু ঘরের পথে পা বাড়ায়। তমাল ভাবে, ‘ঝাড়বাতি, তোমার উজ্জ্বলতাই আমাকে তোমার কাছে ঘেঁষতে দিলনা। যদি তুমি হতে নিষ্প্রভ একটি সাধারন বাতি তবে হয়ত আমি তোমাকে নিয়ে কিছু ভাবতাম। থাক তুমি তোমার মত, সিলিং ছাড়া ঘরে আমি তোমাকে নিয়ে রাখব কোথায়!! কেউ একজন আসবেই তোমাকে নিতে।
সেই তোমার প্রকৃত প্রেমিক’।
উৎসর্গঃ ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু অথবা বন্ধুপ্রতিম বড়ভাই তাজবির মওলা পার্থ’কে, যিনি আমাকে একটা শব্দ শিখালেন। আর দেখালেন সৃজনশীলতার একটা বিশাল দ্বার।
ইংরেজি মেটাফোর (Metaphor) শব্দের অর্থ কল্পালঙ্কার, প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু ইসহাক তাঁর অনেক রচনাই মেটাফোর অলঙ্কারে লিখেছেন।
আমার ব্লগে আসা সকল বন্ধুদের প্রতি রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।