আমি জানতে চাই
বৌদ্ধ দর্শনে আসলে কোন ঈশ্বরের স্থান নেই...বৌদ্ধগণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না...তাঁদের মতে পরিণতিকারণ(Final cause) রুপে কোন জগত্ কর্তার অস্তিত্ব নেই, কেননা পরিণতিকারণ বলে কিছুই নেই....
(বৌদ্ধ দর্শনের কর্মবাদ অস্তিত্বের ধারনাকে প্রয়োজনহীন প্রতিপন্ন করে..)..প্রত্যেকটি কার্যেরই পূর্ববতী কারণ আছে..
তাছাড়া, নৈতিক অগ্রগতির জন্যও কোন ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই, যেহেতু ঈশ্বরের ধারনা নিষ্ক্রিয়তা এবং দায়িত্বহীনতার সৃষ্টি করে...ঈশ্বর যদি সকল কিছুরই কারন স্বরুপ হয়,তাহলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার অবকাশ কোথায়..? যদি মন্দকে তিনি(ঈশ্বর)ঘৃনা করেন এবং মন্দের কর্তৃত্ব স্বীকার না করেন তাহলে তাঁকে সর্বময় কর্তা বলা চলে না..ঈশ্বরের করুণার যদি অসীম শক্তি থাকে, যা পাপীকে এক মুহূর্তে সাধুতে পরিণত করতে পারে, তাহলে ধর্ম আচরণের ও চরিত্র গঠনের প্রতি মানুষের কোন উদ্যমই পরিলক্ষিত হবে না...বুদ্ধের মতে, 'কর্মবাদের পরিসীমা এতই ব্যাপক যে ঈশ্বরে অস্তিত্ব কর্মবাদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ...কর্মের থেকে বড় কিছুই নেই, যেহেতু কর্মের দ্বারাই জগতের দুঃখের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যায়..'
কর্মের(বিবর্তণ) ফলেই জীবের উদ্ভব..জীবের সৃষ্টিকর্তা রুপে কোন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের প্রয়োজন নেই...
ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য সাধারণতঃ যে সব যুক্তি উপস্থাপিত হয়, সেগুলো প্রাচীন বৌদ্ধগণ স্বীকার করেন না...ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিভিন্ন প্রমানগুলির মধ্যে একটি হল বিশ্বতত্ত্ববিষয়ক বা পরিণতিকারণবিষয়ক যুক্তি(The Cosmological or Causal Arguement)..এই যুক্তি অনুসারে এই জগতের সৃষ্টিকর্তারুপে কোন পরিণতিকারন(Final cause) থাকা দরকার...কিন্তু প্রাচীন বৌদ্ধদের মতে ,স্বয়ংসৃষ্ট কোন পরিণতিকারন থাকতে পারেনা..বীজ থেকে যেমন গাছ হয়,ঠিক তেমনি জগত-প্রবাহের কারন জগতই..
কোন চেতন সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করার প্রয়োজন নেই , কারন বস্তু এবং চিন্তা সর্বই কর্মফল...পূর্ববর্তী কোন কারন থেকে উদ্ভূত নয়,এমন কোন স্বয়ংসৃষ্ট পরিণতির কারণের ধারনার মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে...অপর একটি প্রমাণ, উদ্দেশ্যবাদ-বিষয়ক যুক্তি(Teleological Arguement)গ্রহনযোগ্য নয়,কারন জগত বহু ত্রুটিত পূর্ণ.....ঈশ্বর যদি পূর্ণ(Perfect) হন তবে এই অপূর্ণ জগতের সৃষ্টিকর্তা তিনি কিরুপে হতে পারেন..?
বরং, কোন করুণাময় ঈশ্বর এই জগতকে নিয়ন্ত্রণ করছেন না...জগত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে একটি নিয়মের দ্বারা, যে নিয়ম জগতের মধ্যেই নিহিত...বস্তুতঃ ঘটনা কিভাবে ঘটছে,কেন ঘটছে, সেই সম্পর্কে যদি আমরা অবহিত হই, তাহলে জগত্বর্হিভূত কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করার প্রয়োজন নেই ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।