আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অঙ্গহীনে অঙ্গ দেবে 'জয়পুর ফুট'

সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসের পর অঙ্গ হারানোদের সহায়তার জন্য অঙ্গ-প্রতিস্থাপনে সহায়তার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের বেসরকারি সংস্থা 'জয়পুর ফুট' এ কাজটি করবে। সে লক্ষ্যে জয়পুর ফুটের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে সবার সঙ্গে কথা বলে গতকাল ঢাকা ত্যাগ করেছেন। মানবতার ব্রত নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা সংস্থাটির কর্মকর্তারা যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, শুধু সাভারের দুর্ঘটনার ২৫ জনের জন্য নয়, সুযোগ পাওয়া গেলে আমরা বাংলাদেশের সব অঙ্গহীনের পা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। এ জন্য কোনো অর্থও দিতে হবে না।

বরং অঙ্গহীনরা যখন সেই পা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তখন তাদের মুখের হাসিই হবে আমাদের অর্জন।

সত্তরের দশকে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনমৃত্যুর মাঝে চলে গিয়েছিলেন ভারতীয় সমাজসেবী ডি আর মেহতা। দুর্ঘটনায় তার অঙ্গহানিও ঘটে। বিপুল অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয় তাকে এর চিকিৎসায়। কিন্তু তার চিন্তায় আসে দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি হলে তা কতটা দুঃসহ হবে।

এই উপলব্ধি থেকে মহাত্দা গান্ধী হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ড. গঙ্গারাম পুরোহিত ও ড. এম এম বাপনাকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপন করেন ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি। বেসরকারি, অলাভজনক ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূল ভিত্তি করে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

তবে তাদের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সহায়তায় মাত্র ২০ ডলারে তৈরি 'হাঁটু'। পাঁচ টুকরো প্লাস্টিক ও চার জোড়া নাট-বল্টু দিয়ে তৈরি হাঁটুর এ প্রযুক্তিটি ২০০৯ সালের ৫০ সেরা আবিষ্কারে স্থান করে নেয়। শুধু কম মূল্যে নয় নিজ থেকে লুব্রিক্যাটিং পদ্ধতি, তেলযুক্ত নাইলন কোষসমৃদ্ধ হাঁটুটি একই সঙ্গে নমনীয় ও শক্ত, দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকলেও কমে না এর কার্যক্ষমতা।

আর আশ্চর্যের বিষয় হলো এটি তৈরিতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। ১৯৭৫ সালে ৫৯টি পা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে যে সহায়তা সংস্থার যাত্রা শুরু সেটি এখন প্রতি বছর গড়ে ৬০ হাজার ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। গত বছর ২৩ হাজার ৫টি পা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সুবিধাভোগীদের মাঝে প্রায় ১৫ হাজার ক্যালিপার্স, ১৬ হাজার ক্রাচ, ৭ হাজার হুইল চেয়ার, ২ হাজার যন্ত্র বিতরণ করেছে। শুধু ভারতেই নয়, এরই মধ্যে ২৬টি দেশে ক্যাম্প পরিচালনা করে ২১ হাজারের বেশি ব্যক্তির পা প্রতিস্থাপন করে দিয়েছে সংস্থাটি।

অবশ্য এর আগে বাংলাদেশেও দুই দফায় ক্যাম্প করেছেন জয়পুর ফুটের প্রতিনিধিরা। উত্তর ও দক্ষিণের দুটি জেলায় পরিচালিত সেই দুই ক্যাম্পে ১ হাজার অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে জয়পুর ফুটের ম্যানেজার সঞ্জীব কুমারের নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলে ছিলেন জয়পুর ফুটের প্রধান কনসালট্যান্ট। অঙ্গ হারানো ব্যক্তিদের প্রাথমিক পরীক্ষা করেছেন তারা। ২৫ জন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ২৮টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে পেরেছেন।

হোটেল সোনারগাঁওয়ের লবিতে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্জীব কুমার বললেন, আগামী অক্টোবরে ঢাকায় ক্যাম্প পরিচালনা করা হবে। সঞ্জীব কুমারের মতে, এ ক্যাম্প পরিচালনার সময় সাভারের ভিকটিমদের পাশাপাশি আরও ব্যক্তিদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকবে, এ কারণে অন্যদেরও আমরা সহায়তা দেব। সঞ্জীব কুমার বললেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল ট্রমাটোলজি ও অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রস্তাব করেছি স্থায়ী ভিত্তিতে জয়পুর ফুটের একটি ক্যাম্প চালানোর বিষয়ে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আমরা সাভারের সিআরপি ও ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।

সবাই আমাদের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়।

অর্থের সংস্থান কীভাবে হচ্ছে_ এমন প্রশ্নে সঞ্জীব কুমার জানালেন, আমাদের বার্ষিক বাজেট প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এর ২৫ শতাংশ ভারত সরকার প্রদান করে থাকে। বাকিটা আসে সমাজের ধনী ব্যক্তিদের ডোনেশন বা সহায়তা থেকে।

বাংলাদেশের কয়েকজনের কাছ থেকে আমার কাছে ই-মেইল এসেছে, এখানে জয়পুর ফুটের শাখা স্থাপনের জন্য। তবে আমি তাদের কথার ধরন দেখেই বুঝতে পেরেছি, তারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটি করতে চাচ্ছেন। তাই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছি।

উপস্থিত হাইকমিশন কর্মকর্তাদের একজন জানালেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর কত জনের অঙ্গহানি হয় এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতি বছর শুধু সড়ক দুর্ঘটনায়ই ১০ হাজারের বেশি মৃত্যু ও ৫০ হাজারের বেশি আহত হয়।

এই ৫০ হাজারের বেশির ভাগেরই অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটে থাকে। বিপুল এই হতভাগার অধিকাংশই হতদরিদ্র।

ফোরবস ম্যাগাজিনের মতে, জয়পুর ফুটের ৪৫ ডলার খরচের আলট্রামডার্ন প্রোস্থেটিক অতুলনীয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হওয়া ১২ হাজার ডলারের পা-এর চেয়ে কয়েক গুণ উন্নত ও ভালো। আর ২০ ডলার খরচের হাঁটুর প্রযুক্তি টাইম ম্যাগাজিনের বছরের সেরা আবিষ্কারের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

সঞ্জীব কুমার বলেন, পুরো 'পা'ই পানি নিরোধক, তাই এ পা নিয়ে চাইলেই কৃষি কাজ করা সম্ভব। সাধারণ মানুষের পায়ের সদৃশ দেখতে এই পা দিয়ে নামাজ পড়া, পূজা করা- সবই সম্ভব। এমনি আঁকাবাঁকা হয়ে ঘুমানোর যে অভ্যাস অনেকের আছে তা-ও সম্ভব। যে কেউ সকালে আমাদের ক্যাম্পে এলে সন্ধ্যার আগেই তিনি হেঁটে বাড়ি চলে যেতে পারবেন।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.