মানুষ আসে মানুষ যায় কিন্তু সময় যায় চিরতরে
সদ্য সমাপ্ত সারাদেশ ব্যাপি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশের যে ক;টি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে তার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর একটি। পৌর নির্বাচনের প্রচারনা চলাকালীন শহরের দুটি বিবাদমান গ্রুপের সংঘর্ষের জের হিসাবে ৩টি হত্যাকান্ডের জন্য ঐ সময় নির্বাচন কমিশন ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার ভোট গ্রহন স্থগিত ঘোষনা করেন।
অতঃপর শুরু হয় আওয়ামিলীগের দুটি গ্রুপের দুজন প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতার আপ্রান চেষ্টা। তৃনমুল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেও যা কোনো সমাধানে পৌঁছায়নি। সব শেষ চেষ্টা হিসাবে দলীয় সভানেত্রীর হস্তক্ষেপে কয়েকজন কেন্দ্রিয় নেতাকে কোন্দল মেটাবার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী ২৭ফেব্রুয়ারী রবিবার ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে এক জনসভার আয়োজন করে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামিলীগ। উদ্দেশ্য-উভয় গ্রুপের মেয়র প্রার্থিদের একত্রিত করে একজনকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা। জনসভার বিশেষ অথীতি হিসাবে ঢাকা থেকে আওয়ামিলীগের যুগ্মসাধারন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান হানিফ-স্বেচ্ছা সেবকলীগের আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম-খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সহ ঝিনাইদহ জেলার চারজন সংসদ সদস্য-উপজেলা চেয়ারম্যান গন-এবং জেলা উপজেলা আওয়ামিলীগ নেতারা হাজির হন।
স্থানীয় আওয়ামিলীগের জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ও পৌর এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়। জনসভা শুরুর প্রাক্কালে জেলা সভাপতি সংসদ সদস্য আঃ হাই সাহেব বক্তব্য শুরু করতেই-পৌর মেয়র প্রার্থী এক গ্রুপের (আঃখালেক) হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশীদুল ইসলাম রশীদ এর নেতৃত্ব প্রায় হাজার খানেক সমর্থক জনসভাস্থলে অতর্কিত হামলা করে।
তারা চেয়ার টেবিল ভাংচুর করতে থাকে এবং নীরিহ সাধারন মানুষেকে নির্বিচারে পেটাতে থাকে। সাধারন জনতা দিকবিদিক ছোটা ছুটি শুরু করে দিলে-কেন্দ্রীয় নেতারা সভামঞ্চ ত্যাগ করে স্থানীয় সার্কিট হাউসে আশ্রয় নেন। ঘটনার আকষ্মিকতায় পুলিশ নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে।
অপরদিকে কিছুক্ষন পরেই অপর মেয়রপ্রার্থী সাইদুল করিম মিন্টুর সমর্থকেরা সংগঠিত হয়ে খালেক সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে করে আনুমানিক ৪০-৫০ জন গুরুতর আহত হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, এবং পুলিশ অন্তত ১০-১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
শহরে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
@@ ঘটনার অন্তরালে! সাইদুল করিম মিন্টূ একজন উদিয়মান রাজনৈতিক নেতা। ছাত্র রাজণীতির মাধ্যমে তিনি ঝিনাইদহ সহ সমগ্র দক্ষিন বঙ্গেই বেশ পরিচিত মুখ। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দক্ষিনাঞ্চিলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামিলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং তাঁকে পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন।
অপর দিকে-মোঃ আঃ খালেক,সাবেক ছাত্রনেতা। তিনি একসময় ঝিনাইদহ শহর ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি করতেন। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামিলীগের জেলা কমটির কার্যকরি সদস্য। প্রবীন রাজনীতিক হিসাবে শহরবাসীর নিকট তিনি বেশ পরিচিত। সৎ ব্যাক্তি হিসাবে তাঁর একটা স্বচ্ছ ভাবমুর্তি রয়েছে।
বিগত চারদিলীয় সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামিলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন। ঝিনাইদহ শহরে গুঞ্জন রয়েছে-জেলা কমিটি বিপুল পরিমান টাকার বিনিময়ে জনাব খালেককে মনোনয়ন দিয়েছেন। যে কারনে তাঁরা দলীয় নেত্রীর নির্দেষ সত্তেও সাইদুল করিম মিন্টূর পরিবর্তে আঃ খালেক কে সমর্থন দিয়ে চলেছেন। কিন্তু বাইরে বাইরে সকলেই মিন্টূর পক্ষে কথা বলেন।
ঝিনাইদহ উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকে নিজেকে এম পি, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী থেকেও বেশী ক্ষমতাবান হিসাবে মনে করে ঝিনাইদহ এলাকার একচ্ছত্র অধীপতি ভাবতে শুরু করেছেন।
তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা প্রচার করে থাকেন তিনি আগামীতে এম পি নির্বাচন করবেন। উল্লেখ্য কনক কান্তি দাস সাবেক বি এন পি এম পি মশিউর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন একজন ঠিকাদার হিসাবে পরিচিত। অনেকেই মনে করেন তিনি আওয়ামিলীগে মশিউর রহমানের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে থাকেন।
যেহেতু ঝিনাইদহ পৌরসভার আওয়ামিলীগ দলীয় প্রার্থী সাইদুল করিম মিন্টূ একজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন-সেহেতু স্থানীয় সকল নেতার ভয় একটাই-তা হলো মিন্টূ পৌর চেয়ারম্যান হওয়া মানেই আগামী সাধারন নির্বাচনে মিন্টূই হবেন ঝিনাইদহ সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী। মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জেলা ও উপজেলা নেতারা।
তাই কোনো অবস্থাতেই মিন্টূকে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে না দেওয়ায় তাদের একমাত্র উদেশ্য। আর সেই মহাপরিকল্পনার অংশ হচ্ছে ঝিনাইদহ শহরের আজকের সহিংসতা। ঝিনাইদহ পৌর-উপজেলা-জেলা নেতারা একত্রিত হয়ে দল ও দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে পৌর নির্বাচনকে বিলম্বিত করে চলেছেন। অবস্থা দৃষ্টে এমন মনে হচ্ছে যে তারা দল ও সরকারের চেয়েও বেশী শক্তিশালী। আর কেনো জানিনা আওয়ামিলীগের কঠোর মনোভাবাপন্ন সভানেত্রীও এ ক্ষেত্রে নীরব ভুমিকা পালন করে চলেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।