আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুমারিত্বের পরিচয় ঘ্রাণে

কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর

দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে। মেয়েটিকে দেখে পিছু নেয় ছেলেটি। এক সময় দ্রুত টপকে যায় তাকে। যাবার সময় ওর শরীরের এক ঝলক ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে ছেলেটির। ঘ্রাণটা তার মন কেড়ে নেয়।

এবার সে পিছনে ফেরে। ভাবে এই হয়তো সেই নারী যাকে সে সারা জীবন ধরে খুঁজে এসেছে। মেয়েটির পিছু পিছু এগোতে থাকে সে। এবার তার লৰ্য হয় মেয়েটির মনোরঞ্জন। না, কোন মানব-মানবীর ব্যাপার নয় এটা।

এখানে বলা হচ্ছে ৰুদে ইতর প্রাণীদের কথা। এভাবে শরীরের এক ঝলক ঘ্রাণ নিয়ে পুরুষ প্রাণীটা প্রকৃত অর্থে তার জীবনসঙ্গিনী বা প্রেমিকাকে নির্বাচন করে না, বরং নির্ণয় করে সেই স্ত্রী প্রাণীর কুমারিত্ব। এই কৌশল প্রয়োগ করে তৃণভূমির প্রণয়শীল ইঁদুর, বাদামী মূষিক, টিকটিকি, এমনকি কাঁচপোকা, মাকড়সা ও মৌমাছি পর্যনত্ম। প্রণয়ের ৰেত্রে এ ধরনের ঘ্রাণ নেয়ার গুরুত্ব আছে। অনেক পুরম্নষ তার সম্ভাব্য সঙ্গিনীটি কুমারী কিনা, কুমারী না হয়ে থাকলে কতবার দৈহিকভাবে মিলিত হয়েছে স্রেফ ঘ্রাণ নিয়েই তা নির্ণয় করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরম্নষ জাতের মেটে ইঁদুর (লেমাস সিবিরিকাস) সদ্য সঙ্গম করা স্ত্রী ইঁদুরের চেয়ে কুমারী ইঁদুরের ঘ্রাণ বেশি পছন্দ করে। মনে হয় পুরম্নষরা ঘ্রাণকে একটা নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করে। স্ত্রী জাতের মধ্যে যাদের একাধিক পুরম্নষসঙ্গী আছে তাদের শরীরের ঘ্রাণ কুমারীর ঘ্রাণ থেকে অতিমাত্রায় আলাদা। কারণ উভয়ের শরীরে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল তৈরি হয়। কীটপতঙ্গের জগতও যৌনতার ঘ্রাণে মাতোয়ারা থাকে।

লীফ মাইনার ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছি আছে। এদের স্ত্রী জাতের মাছিরা সঙ্গম না করা অবস্থায় ডাইমিথাইল মোনাডিকেন নামে এক ঘ্রাণময় কেমিক্যাল উৎপাদন করে। কিন্তু সঙ্গমের পর এর মাত্রা কমে যায়। মৌমাছিদের মধ্যেও দেখা গেছে, সঙ্গমের পর স্ত্রীজাতের মৌমাছির শরীর থেকে একধরনের কেমিক্যালের ৰরণ ঘটে যা কুমারীদের শরীর থেকে হয় না। বিভিন্ন গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, অনেক প্রজাতির বেলায় শরীরী ঘ্রাণ সফল প্রজননের জন্য একানত্মই প্রয়োজনীয় হতে পারে।

প্রাণীরা তাদের যৌনতার অবস্থা গোপনে ঘ্রাণের মাধ্যমে তিনভাবে প্রকাশ করে থাকে। প্রথমত, দেখা হবার পর স্ত্রী জাতের প্রাণীরা এমন ঘ্রাণ উৎপাদন করতে পারে যা অন্য পুরম্নষদের তাড়িয়ে দেবে। দ্বিতীয়ত, স্ত্রীরা সঙ্গম করার পর পুরম্নষকে প্রলুব্ধকারী ফেরোমন ৰরণ করা বন্ধ করে দিতে পারে। জিপসী মথের বেলায় এমনটা ঘটতে দেখা যায় যাতে করে গর্ভবতী স্ত্রী অন্যান্য প্রণয়লিপ্সুু পুরম্নষদের দ্বারা উত্ত্যক্ত না হয়ে নিশ্চিনত্মে চলে ফিরে বেড়াতে পারে। সর্বশেষ, পুরম্নষ বা যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত থাকাকালে সঙ্গিনীর গায়ে কেমিক্যালের প্রয়োগ ঘটাতে পারে।

গোপনে এমন ঘ্রাণ গায়ে ঘষে দিতে পারে যাতে করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরবতর্ীকালে তাদের সঙ্গিনীর সঙ্গে মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকে। ফলের মাছি ড্রোসোফিলিয়া মেলাপোগাস্টার যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত অবস্থায় পুরম্নষরা স্ত্রীদের গায়ে ৭-ট্রাইকোসিন নামে এক জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ স্থানানত্মর করে। স্রেফ শরীরী সংস্পর্শের দ্বারা দুই বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে ফেরোমোন স্থানানত্মরের এটাই একমাত্র জানা দৃষ্টানত্ম। প্রশ্ন হচ্ছে পুরম্নষরা কেন সঙ্গিনীর কুমারিত্ব নির্ণয় করতে যায়? কোন স্ত্রীটি অন্যের সঙ্গে প্রজনন করেছে সেটাই বা কেন তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন হয়? সে প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে প্রত্যেক প্রাণীর নিজ নিজ প্রজনন ব্যবস্থার ওপর। একগামী প্রাণীরা একটা সময়ে একজনের সঙ্গেই কেবল মিলিত হয়।

এ অবস্থায় কোন স্ত্রীর যৌনতার অবস্থা উভয় লিঙ্গের জন্য কল্যাণজনক সেই সঙ্কেত দেয়ার জন্য তারা ফেরোমোন ব্যবহার করে থাকে। এর অর্থ পুরম্নষদের উপযুক্ত স্ত্রীকে খুঁজে বের করতে সময় অপচয় করতে প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে স্ত্রীদেরও একসঙ্গে বহু পুরম্নষের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয় না। আবার যেসব প্রাণী বহুগামী অর্থাৎ একসঙ্গে একাধিক পুরম্নষ একটি স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় সেখানে কুমারী স্ত্রীকে খুঁজে বের করা স্বভাবতই সুফলদায়ক। সেটা অবশ্য পুরম্নষদের দিক থেকে দেখলে।

আর স্ত্রীদের বেলায় সেই সুফলটা তত পরিষ্কার নয়। অগ্রহণযোগ্য সঙ্গিনী হিসেবে চিহ্নিত হলে সেই স্ত্রী প্রাণীটির পৰে সেরা পুরম্নষ সঙ্গীকে খুঁজে বের করা সম্ভব নাও হতে পারে। সূত্র: ইন্টারনেট

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।