আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথ ভুলে জেলেদের পাতা কারেন্ট জালে গর্ভের সন্তান সহ জীবন দিল ডলফিনটি

কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর

গর্ভে সন্তান নিয়ে কোনো মাই বিপজ্জনক পথে পা বাড়ান না। তবে ভুল তো হতেই পারে। কিন্তু সে ভুলের মাশুল যদি দিতে হয় জীবন দিয়ে, তা হয় বড়ই বেদনার। আর সে প্রাণীটি যদি হয় নিরীহ প্রকৃতির, তাহলে এর জন্য কার না মন কাঁদবে! গর্ভবতী গাঙ্গেয় ডলফিনটিও চিত্রা নদী পার হচ্ছিল হয়তো বা পথ ভুলে। এটাই বিশ্বজুড়ে মহাবিপদাপন্ন এই প্রাণীর জন্য কাল হলো।

মাগুরার শালিখা উপজেলার কাছে জেলেদের পাতা কারেন্ট জালে আটকে গেল সে! জানা গেছে, স্থানীয় জেলেরা প্রায়ই এই এলাকা থেকে ডলফিন শিকার করে থাকেন। গত ১৭ জানুয়ারি একই এলাকা থেকে জেলেদের জালে আটকে একটি ডলফিন মারা গিয়েছিল। পূর্বপুরুষেরা মানুষের ভয়ে এই পথ আগেই ছেড়েছে। এই ডলফিনটিকেও মরে ভুলের মাশুল দিতে হলো। স্থানীয়ভাবে একে শুশুক বলে।

জেলেরা শুশুক ধরতে পারলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। ডলফিন বা শুশুক আর মানুষ উভয়ের রক্ত গরম এবং স্তন্যপায়ী। কিন্তু এই মিল ডলফিনটিকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেতে দিল না। জেলেরা একে মেরে নিয়ে গেলেন শালিখার শুরশুনা বাজারে। তেল ও হাড়গোড় দিয়ে ওষুধ বানানোর জন্য অনেকেই মৃত ডলফিন কেনে।

বেশ কয়েকজন ক্রেতাও মিলল। ঘটনাচক্রে বাজারে ডলফিন বিক্রির খবর গিয়ে পৌঁছাল যশোর বন বিভাগের কর্মকর্তা সাইদুর রশীদের কাছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বনরক্ষীদের বাজারে পাঠিয়ে মৃত ডলফিনটি উদ্ধার করলেন। পাঠালেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন বিভাগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে দেখলেন, গর্ভবতী ডলফিনটি পৃথিবীর অন্যতম মহাবিপদাপন্ন প্রজাতি প্লাটানিস্টা গাঞ্জেটিকা বা গাঙ্গেয় ডলফিন।

গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁও বন বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে দেখা গেল, ভবনের ছাদে ডলফিনটি রাখা হয়েছে; পাশে পেট কেটে বের করে আনা বাচ্চাটি। প্রধান বন্য প্রাণী সংরক্ষক তপন কুমার দে বলেন, ‘এটি ডিটারিয়া বর্গের ডিলপিনিডি পরিবারভুক্ত। ডলফিনের প্রায় সব প্রজাতি পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্ত। আমাদের দেশে নদী ও সমুদ্রে আট প্রজাতির ডলফিন দেখা যায়। আগে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের সব নদীতে ডলফিন দেখা যেত।

এখন শুধু গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, পদ্মা, সাঙ্গু ও কর্ণফুলী নদীতে মাঝেমধ্যে ডলফিন দেখা যায়। ’ ডলফিন রক্ষায় কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বন বিভাগ থেকে ডলফিনটির যে পরিমাপ করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে: এটি লম্বায় সাত ফুট এক ইঞ্চি, বেড় তিন ফুট সাত ইঞ্চি এবং ওজন ১৩০ কেজি। বাচ্চাটি লম্বায় দুই ফুট তিন ইঞ্চি, বেড় এক ফুট এক ইঞ্চি এবং ওজন পাঁচ কেজি। বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিল গাঙ্গেয় ডলফিনকে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী ও মহাবিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রাণীটির বসবাস। এই এলাকায় ৫০টি বাঁধ ও অসংখ্য অবকাঠামো নির্মাণ হওয়া এবং নদীদূষণের কারণে এর স্বাভাবিক বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জেলেদের কারেন্ট জাল দিয়ে ডলফিন শিকার। বর্তমানে সর্বসাকল্যে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০টি গাঙ্গেয় ডলফিন পৃথিবীতে টিকে আছে। বাংলাদেশের নদীগুলোতে এই সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০ বলে ধারণা করছেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

এখানে দেখুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।