একসময় দেখলাম, সবই কল্পনা, বাস্তবতায় শূন্য পৃথিবী।
ইরানী ফিল্ম ফেস্টিবলে গেলাম ক'দিন আগে। ইরানের ছবি এর আগে দেখেছি। The Apple (Samira Makmalbaf); Children of Heaven (Majid Majidi).
এদুটি মুভি দিয়েই শুরু করি ইরানের মুভি দেখা। যদিও দ্যা আপেল তেমন ভালো লাগেনি।
কিন্তু চিল্ড্রেন অফ হেভেন একটা অসাধারণ মুভি। এটা দেখেই মাজিদ মাজিদির সিনেমার উপর আসক্তি জাগলো।
তারপরই নামিয়ে ফেলি দ্যা কালার অফ প্যারাডাইস (রাং-ই-খোদা)। ইরানি ভাষায় এর নামের অর্থ দাঁড়ায় খোদার রঙ।
কালার অফ প্যারাডাইস মুভিটি একটি অন্ধ ছেলের পোট্রেট।
তার জীবন কাহিনী। সমাজে এ ধরণের অন্ধ প্রতিবন্ধীদের মানুষ সারাধারণত সমীহের চোখে দেখে না। ছেলেটির নাম মোহাম্মদ। ছবিটি শুরু হয় অন্ধদের একটি স্কুলের প্রেক্ষাপটে, যেখানে দেখা যায় মোহাম্মদ একজন অন্ধ ছেলে, এবং সে পড়াশোনা করছে।
তিন মাসের জন্য স্কুল ছুটি, সবাই নিজের বাড়িতে যায়।
সবার গার্ডিয়ান এসে তাদের নিয়ে যায়। অথচ মোহাম্মদের গার্ডিয়ান আসে একদিন দেড়ি করে। মোহাম্মদের বাবা মোহাম্মদকে একটা ঝামেলাই মনে করে তার সংসারের জন্য। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। মোহাম্মদের বাবা এসে স্কুলের হেডমাস্টারকে বলে, সে মোহাম্মদকে নিয়ে যেতে পারবে না।
কোনভাবে কি এই তিনমাস তাকে স্কুলে রাখা যায় কিনা। হেডমাস্টার বলে, তা অসম্ভব। দায়ে পড়ে মোহাম্মদের বাবা তাকে নিয়ে যায় সাথে করে গ্রামের বাড়িতে।
গ্রামটি পাহাড়ি, অতি মনোহর। চারিদিকে ফুলের বাগান।
মোহাম্মদ ঘোড়ার পিঠে করে যখন বাড়িতে আসে তখন তার বোনেরা উচ্ছোসিত হয়, মোহাম্মদের দাদি অনেক খুশি হয় তাকে দেখে।
মোহাম্মদ গ্রামের অবারিত খোলা মাঠ আর ফুলের বাগান দিয়ে ঘুরে ফিরে বোনদের সাথে। আর ফুলের পাপড়ি, গাছের ডালে হাতড়ে হাতড়ে কি যেন খুজে ফেরে। অপরদিকে মোহাম্মদের বাবা একটি গ্রামের মেয়ের প্রেমে পড়ে, এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। অথচ সেই পরিবারের কেউ জানেনা যে তার একটি অন্ধ ছেলে আছে।
তাই তো মোহাম্মদকে সহ্য হয়না তার বাবার।
একদিন মোহাম্মদের বাবা তাকে এক অন্ধ কার্পেন্টার (কাট মিস্ত্রী) এর কাছে রেখে আসেন। সেই কাঠমিস্ত্রীর কাছে মোহাম্মদ তার দুঃখ তুলে ধরে। তাকে বলে, "আমি অন্ধ বলে আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমার বাবাও না, আমার দাদিও না তাই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, আমি অন্য ছেলেদের মত স্বাভাবিক স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারি না, আমার পড়াশোনা করতে খুব ইচ্ছা করে। "
কানতে কানতে সে বলে যায়, "আমার টিচার আমাকে বলে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আল্লাহ নাকি অন্ধদের সব থেকে ভালোবাসে, তাহলে কেন আল্লাহ আমার চোখ দিলেন না, তাহলে তো আমি তাকে দেখতে পেতাম"।
টিচার বলে, "আল্লাহ সর্বদা সবখানে বিদ্যমান, তাঁকে কেউ দেখতে পায় না, তাকে খুজে নিতে হয়"।
ছবির এই মুহূর্তে এসেই বোঝা যায় মোহাম্মদ আসলে গাছে, সাগরের মাটিতে, পাখিদের কলতানে কি খুজে ফেরে, সে আল্লাহকে খুজে, সে স্বর্গের রঙ খুজে ফেরে তার হাত দিয়ে।
ছবির পরবর্তী কাহিনী আর বলব না। তবে মোহাম্মদের পরিণতি হয় এই যে সে মারা যায়। তার বাবা তাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকেন, আর ঠিক সেই মুহুর্তে দেখা যায় মোহাম্মদের হাত নড়ে উঠে, সে যেন হাত দিয়ে স্বর্গের রঙ ধরার চেষ্টা করে।
মূলত এটি একটি সিম্বলিক সট। এখানে মাজিদ মাজিদি এটুকু বোঝাতে চেয়েছেন, যে মোহাম্মদ বেহেশতের দ্বারে প্রবেশ করছে।
এই অনন্য মুভিটি সবাই দেখবেন। অন্তত মানুষের আবেগকে এত সুন্দর ভাবে প্রকাশ করার ভঙ্গি সত্যি অসাধারণ। অনবদ্য, সিনেমার মেসেজ অতি সুন্দর ও সাবলিল।
অদ্ভূত।
সবাইকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।