আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলো ট্রাস্ট: অর্থ আছে নেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা



প্রথম আলো ট্রাস্ট: অর্থ আছে নেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ঢাকা: নীলফামারীর মাদ্রাসা শিক্ষক রঞ্জিত কুমার রায়। তার জীবন সংগ্রামের কথা পড়ে প্রথম আলো ট্রাস্টে সহায়তা দিতে দেশ-বিদেশ থেকে এগিয়ে আসেন মানবহিতৈষী ব্যক্তিরা। তার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের তহবিলে জমা পড়ে প্রায় নয় লাখ টাকা। এখনো সেই তহবিলে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু রঞ্জিতের মাদ্রাসা এবং ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

এতে ব্যয় হয় ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বাকি টাকার কথা রঞ্জিত নিজেও জানেন না। অর্থাৎ বাকি প্রায় চার লাখ টাকা রঞ্জিতের নামে প্রথম আলো ট্রাস্টে জমা হলেও তার কোনো সুফল তিনি পাচ্ছেন না। জানতে চাইলে নীলফামারীর সেই শিক্ষক রঞ্জিত বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম আলো কতো টাকা সংগ্রহ করেছে, আমি তা জানি না। তহবিলে টাকা-পয়সা জমা আছে কিনা তাও আমাকে প্রথম আলো জানায়নি।

গত বছরের জুলাইয়ের পরে আমার সঙ্গে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের আর যোগাযোগ হয়নি। তারা আমাকে দুটি ঘর দিয়ে দিয়েছে। তাই আমি জানতে চাইনি। ’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম আলো ট্রাস্ট এভাবে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে থাকে বিভিন্ন জন কল্যাণের কথা বলে। কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যাপকভাবে।

প্রমাণও মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে তহবিল তসরূপেরও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমনটি করা হয়েছে ওই শিক্ষক রঞ্জিতের নামে জমা হওয়া অর্থের বেলায়। বিধান অনুযায়ী, ট্রাস্টের আর্থিক প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার কথা থাকলেও প্রথম আলো তা করে না। ফলে যে বা যারা এই তহবিলে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন, তারা কিছুই জানতে পারছেন না।

ফলে অভিযোগ রয়েছে, প্রথম আলো ট্রাস্ট তহবিলের ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতার। নেই কোনো জবাবদিহিতাও। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রচারণা জোড়ালো থাকে। কিন্তু সংগৃহীত অর্থ কোন খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করে দাতাদের জানানো হয় না। ক্ষেত্র বিশেষে দু’একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করে তার ব্যাপক প্রচারণা চালায় প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, এর পেছনে মূল কারণ, যাতে পরে আরো অর্থ জমা হয় এর তহবিলে। এবং তা খরচ না করে আত্মসাৎ করা যায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রথম আলো ট্রাস্টের অধীনে ৫টি তহবিল পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে রয়েছে, এসিডদ্বগ্ধ নারীদের সাহায্যার্থে সহায়তা তহবিল, মাদকবিরোধী আন্দোলন, ত্রাণ তহবিল, অদম্য মেধাবী তহবিল এবং নির্যাতিত সাংবাদিক তহবিল। প্রত্যেকটি কার্যক্রমে অর্থ সংগ্রহ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

রয়েছে অস্বচ্ছতা ও অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ। ট্রাস্টের একাধিক দাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা শুধু সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন খাতে কিভাবে তার ব্যবহার করা হচ্ছে, তা প্রথম আলো তাদের জানায় না। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোও সরল বিশ্বাসে জানতে চায় না। প্রথম আলোও বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।

এসিডদগ্ধ নারীদের সহায়তা: প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত এগারো বছরে প্রথম আলো ১৩২ জন এসিডদগ্ধ নারীকে সহায়তা দিয়েছে। তাদেরকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্য কোনো সহায়তা। এছাড়া আরো একশ’ নারীকে সহায়তা করার কথা জানা গেছে। কিন্তু বিগত এগারো বছরে এই তহবিলে জমাকৃত বাকি টাকা কোথায় যাচ্ছে, কি হচ্ছে তা দাতারা তো জানেনই না, প্রকাশও করা হয় না।

অথচ তহবিল গড়ে উঠেছে সাধারণের সহায়তায়। বরং কিছু সভা-সিম্পোজিয়ামের নাম করে এসব অর্থের অনেকটা অপব্যবহার করা হচ্ছে। এমন কি ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যরাও বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই অনুমোদন দিচ্ছেন এসব অনিয়ম। তারা জানতেও চান না এ বিষয়ে। জানা গেছে, পদাধিকার বলে ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যবস্থাপক থাকেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

গঠনতন্ত্রে কৌশলে এটি করেছেন প্রথম আলো সম্পাদক নিজেই। তাই তার ইচ্ছার বাইরে যেতে চান না অন্য সদস্যরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা নয়জন। এর অন্য সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই মুহাম্মদ আজিজ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও মতিউর রহমানের শ্যালক আব্দুল কাইয়ুম এবং এনভয় গ্রুপ’র চেয়ারম্যান ও শেলটেক’র স্বত্ত্বাধিকারী কুতুবউদ্দিন আহমেদ। জানা গেছে, ট্রাস্টের কিছু পদ তিন বছরের জন্য নির্ধারিত থাকলেও ব্যবস্থাপক পদের (মতিউর রহমান পদাধিকার বলে) কোনো পরির্বতন হবে না।

তিনি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি এর ব্যবস্থাপক রয়েছেন। যেটি ট্রাস্ট ব্যবস্থাপনা আইন বিরোধী। এভাবে একজন তহবিল ব্যবস্থাপক থাকার বিধান নেই বড় কোনো ট্রাস্টেই। অন্য তহবিল ব্যবস্থাপনা: মাদকবিরোধী আন্দোলন, ত্রাণ তহবিল, অদম্য মেধাবী এবং নির্যাতিত সাংবাদিক সহায়তা তহবিলসহ সব তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং অর্থ ব্যবহারেরও নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে। দাতাদের অর্থ নিয়ে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা ছাড়াই প্রথম আলো এসব করছে।

সভা- সেমিনারের নামে অর্থ খরচ করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা ছাড়া এভাবে একটি বড় ট্রাস্ট চলতে পারে না। ট্রাস্টের একজন সদস্য জানান, ‘ট্রাস্টটি পরিচালনা করে মূলত প্রথম আলো। আমরা এর সদস্য হলেও সিদ্ধান্ত নেয় প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ । সদস্যরা তা অনুমোদন করে দেন।

এর বেশি কাজ নেই সদস্যদের। ’ এদিকে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রথম আলো ট্রাস্টের যে সাইট রয়েছে সেখানেও ট্রাস্টের সাম্প্রতিক কিছু কার্যক্রমের সচিত্র বিবরণী দেওয়া থাকলেও নেই এসব কার্যক্রমসহ ট্রাস্টের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব বিবরণী। অথচ আজকাল যে কোনো ট্রাস্ট বা এনজিও’র হিসাব বিবরণী তুলে ধরতে বলা হয়, এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে সবাই তা দেন। সাইটটিতে ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের তালিকা পদবীসহ তুলে ধরা হয়েছে নানা তথ্য। অথচ তাদের বা ট্রাস্টের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর বা মাধ্যম না দিয়ে প্রথম আলো্রই যাবতীয় যোগোযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বরগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে।

############################################## Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।