একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি? না পারিনা। আর পারিনা বলেই বারবার শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে সেইসব ভাষাসৈনিকদের কথা মনে করে। তেমনি একজন ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী। যিনি ভাষা আন্দোলনে মহা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
যার নেতৃত্বে চট্রগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাতেও ভাষা আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে এবং চট্রগ্রামে ভাষা আন্দোলনকে আরো তীব্রতর করে তুলে।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সারা ভুখন্ড তখন উত্তাল। এমনি এক উত্তাল সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারীতে পাকিস্থানি শাসক গোষ্টী মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার এক মিছিলে গুলি চালায়। ২২শে ফেব্রুয়ারী পত্রিকা মারফত সেই খবর পৌছে যায় মাদ্রাসার ফাজিল শ্রেণীর ছাত্র আহমেদুর রহমান আজমীর কাছে।
কন্ঠরোধের হায়েনাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সেদিনই তিনি ঝাপিয়ে পরেন। সেদিন বিকালেই তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেন। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী সকালে হাটহাজারী সদরে প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেন। সেদিনই মাওলানা আজমীকে আহবায়ক করে "হাটহাজারী উপজেলা রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠিত হয়। একইদিন "চট্রগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" এর সদস্য নির্বাচিত হোন তিনি।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং তা সংগঠিত হতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন কর্মপন্থা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাওলানা আজমীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন "চট্রগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" এর আহবায়ক এবং একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা মাহবুব উল আলম।
একজন মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি জোড়ালো কন্ঠে বলে গিয়েছিলেন, "যে দেশে প্রাণ দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্টা হয়েছে, সে দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয়না। বর্তমানে ইংরেজি শিক্ষার নামে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ চলছে।
এটি জাতি হিসাবে আমাদের জন্য অত্যান্ত কষ্টের। "
এই প্রগতিশীল ভাষাসৈনিক বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বৃহত্তর চট্রগ্রামের প্রতিষ্টাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কর্মকান্ড এবং দেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম এই সহযোদ্ধা ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১ তে চট্রগ্রামের মিরসাইয়ের আবুরহাট গ্রামের দেওখালীতে নিজের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
মাদ্রাসা ছাত্র হয়েও ভাষা আন্দোলনের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, "সবসময় বাস্তববাদী ছিলাম। ৪৭ এ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ কোনভাবেই মানতে পারেনি।
এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙা, ধর্মের নামে জুয়াচুরি আমাকে মানবতাবাদী হতে শিখিয়েছে। "
তথাকথিত লুন্ঠন, তৈলাক্ত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয় নাই বলে ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমীকে বাংলাদেশের কোন সরকারই উপযুক্ত সম্মান বা সম্মাননা দেয় নাই। কিন্তু আমাদের প্রাণের মাঝে চরম শ্রদ্ধা নিয়ে ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী বেঁচে থাকবেন। এ ভাষাসৈনিকের প্রতি রইলো শত সহস্র সালাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।