আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধু্ সবুজ চিরদিন।


হাতেনিয়ে আলোকবর্তীকা। আমার রেগুলার পোস্ট। এর মদ্ধে আবার অন্য এতটা পোস্ট দেয়া লাগলো। এমন একখান টুরে আছি শেয়ার না করে পারা যাচ্ছেনা। আমাদের ভার্সিটির একটা কোর্সআছে নেচার অবসারভেশন এন্ড স্টাডি।

সবগুলো ব্যাচ এই কোর্সটা করে ঢাকাথেকে দুরে কোন সুন্দর আর ঐতিহাসিক স্থানে। আমরাও অনার্স জীবনের শেষ ক্লাসটা করার জন্য প্রস্তুত হলাম। জানুয়ারির ২৭ তারিখ আমাদের যাত্রা শুরু ঢাকার ২৭ নম্বর সড়কের অগ্রদেশ থেকে। প্রথমেই ট্যুরমেট পরিচিতি____ ১. প্রধান সমন্বয় কারী--- শাজাহান মাস্টারমশাই। (লিখিত দিচ্ছি মোঘল সম্রাজ্জের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই) ২. উপদেশ্টা------------ আলাউদ্দিন মাস্টারমশাই।

(কেউ ভাইবেননা তার পালিত জ্বীন আছে। ) ৩. সহকারী সমন্বয়কারী- পারভেজ মাস্টারমশাই। (তিনি কিন্তু জেনারেল না, একে বারে মার্শাল। ) ৪. শ্রি কানাই চন্দ্র মল্লিক ৫. শ্রী যুক্ত বাবু পবিত্র কুমার নন্দন বনিক ৬. রবিন্দ্র নাথ সরকার। (ঠাকুর সাহেবের যাওয়ার কথা ছিল, হয়ে উঠলোনা) ৭. বা_ প্রবির।

(সেন্সর্ড নাম) ৮. করপোরেট সৈকৎ। ৯. বাচ্চা সোহাগ। ১০. মুরুব্বি সোহাগ। ১১. গাতক পল্টু। ১২. শমি ১৩. জিনাত আমান ১৪. কিমি ১৫. প্রিতি।

(পাঠক কুল নিশ্চয় আমাকে চাপাবাজ ভাবছেন, আসোলোই আমাদের ব্যাচ নাইকায় ভর্তী। ) ১৬. আর্ট ক্রিটিক ওয়াযেদ। ১৭. হা-ছিব। (মাই সেল্প) মহাখালী থেকে যত্রা শুরু: আহারে সাধের ট্যূর, মহাখলীর বুক খালি করিয়া আমরা বাংলা মায়ের ১৭ সন্তান বিরিসিরির উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলাম। ময়মন সিংহে যাত্রা বিরতি এবং হালকা পানাহার পূর্বক পুনরায় যাত্রা।

ময়মন সিংহ থেকে বিরিসিরির রাস্তা মনে করিলেও গা রিরি করিয়া ওঠে। রাস্তায় ক্ষনে ক্ষনে মনে পড়ে, ডারউইন বলেছিল-মানুষও বাদর ছিল। প্রতি মূহুর্তে বাসের সিট, স্যেক হোল্ডার, পাশে বসা গাতক পণ্টু, যাহাই হাতে পাইতেছিলাম সম্বল ভাবিয়া আঁকরাইয়া ধরিতেছিলাম। এহেন উড়ন্ত-ঝুলন্ত-পড়ন্ত যাত্রা শেষে বৈকাল ৫ ঘটিকায় আমরা বিরিসিরি বাজারে পৌছিলাম। আহামরি কিছুই না।

এহেন কষ্টকর যাত্রা করিয়া এমন উষর যায়গায় শিক্ষা সফরের হেতু বোধগম্য না হওয়ায় আমি সামগ্রিকতার প্রতি কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে রেস্ট হাউজে উঠলাম। একরুমে মেয়েরা আর অন্য রুমে ছেলেরা। ছেলেেদের রুমটা আসলে ডর্মেটরি। ৯ খানা বিছানা তক্তপোশে ৯ জন এর থাকার ব্যবস্থা। আমরা সেই সন্ধা সন্ধা করে দুপুরের খাবার গ্রহন করিয়া বাইরে বেরুলুম।

উদ্দেশ্য সুসং দূগাপূর বাজার এবং তদ সংলগ্ন সমেস্বরী নদী অবলকন। কিন্তু হায়! আমাবস্যার রাতে যে অন্ধকারে দেখা যায়না তা বোধকরি আমাদের জানা ছিলনা। কি আর করার? অন্ধকার নদী দেখিয়া হায় হায় করিয়া, সকলে এক পেয়ালা করে চা পান করিয়া আবার জায়গা মত ফিরিয়া আসিলাম। রাতে আমাদের সং দের সংগিত রাত্রি শুরু হইল। গাতক পল্টুর হৃদয় মোচড়ানো গলার ঘাতক গান শোনা হইল।

ঢোল, গিটার আর জিপসি, পুরা বেপারটা অনেকটা মাখনের মত মধুর হইল। গোলযোগ সমৃদ্ধ যলযোগ শেষে প্রত্যেকে শ্রান্ত শরীরে তক্তপোষে গড়াইয়া পড়িলাম। ২য় দিন ঘুম ভাংলো কানাইদার ডাকে। যলযোগের গোলাযোগে মাথাটা কিঞ্চিৎ ভারি ঠেকলো। কোনমতে তক্তপোষ ত্যাগ করিয়া হাতমুখ ধুইতে গেলাম।

নাস্তা হইলো সিদ্ধ আটার রুটি আর ভাজি। আজকের রুটিন ঘোষনা করা হইলো। আমাদের নাকি দূর্গাপুর পাহাড়ে লইয়া যাওয়া হইবে। পাহাড় আমাকে সর্বদাই টানে। শুনিয়া খুশি হইলাম।

কিন্তু পেছন হইতে নারী কন্ঠে আশ্চর্য বোধক এবং বিস্ময় বেধক নানা শব্দ শুনিয়া ফিরিয়া তাকাইলাম। হায় হায়। পাহাড়ের নাম শুনিয়া তাহারা কাঁপিয়া উঠিল। একজন সোজা সাপ্টা ঘোষণা করিল- আমী যাবনা (যোর বাড়ানোর জন্য আমি বানান আমী লিখিলাম)। মনে মনে কহিলাম, তেমার পাহাড় দেখিতে যাওয়ার কি দরকার? আয়নায় নিজেকে দেখিয়া নিলেই হইবে।

পর্বত দর্শন হইয়া যাবে। পাহাড়তো কোন ছাড়। (এই লেখা পোস্টাইলে কি পরিমান মাইর যে খাব তার মনে হয় ইয়াত্তা নাই। ) রিকসা লইয়া দুর্গাপুর বাজার অতিক্রম করিয়া পাড়ের দিকে গেলাম। রিকসা লইয়া গেলাম না বলিয়া রিকসার পাশে হাটিয়া গেলাম বলিলে ভালো হয়।

রাস্তা মাশ্শাল্লাহ পৃথিবির সবচাইতে ভালো (!) রাস্তা। আমি যখন মনে মনে চিন্তা করিতেছি পাহাড় টা বুঝি টিলা গুলির ওপারে, তখন ই মাস্টার মশাইরা ঘোষনা করিলেন আমরা নাকি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করিতেছি, এইবার নাকি আরোহনের পালা। মর্মাহত হইলাম। এই পাহাড়(!)। কি আর করার, সকলের সহিত আরেহন শুরু করিলাম।

আদ্দেক যাইতে না যাইতেই পর্বত কন্যা কাঁকাইয়া উঠিল। আমি আর যাইবোনা। সকলে মিলিত কন্ঠস্বরে বুঝাইলাম। সে রাজি না। এইবার? শেষ পর্যন্ত মধ্যস্ততা হইলো উহাকে টানিয়া তোলা হইবে।

কিন্তু সময় যখন আসিল দেখা গেল আমি ছাড়া সকলেই হাওয়া। দাড়াইয়া ছিলাম সারকাস দেখিবার জন্য। নিজেই সারকাস হইয়া গেলাম। রিতিমত আতংক জনক অরস্থা। যাহাই হোক, উপায় যখন আর নাই, কি আর করা।

টানিতে শুরু করিলাম। যেই পাহাড়কে মনে মনে টিলা বলিয়া উপহাস করিতে ছিলাম উহাই আমার কাছে হিমালয় সম মনে হইল। এরই মাঝে কখন যেন অগ্রদেশ আসিয়া গেল। হাপাইতে লাগিলাম। হঠাৎ দুরে চোখ পরিলো।

সমান খোলা সমভূমি প্রান্তর। উজ্জল আকাশ। রোদ খেলা করিতেছে। আলোর সে কি তেলেসমতি। নিচে তাকাইয়া লাফাইয়া পড়িতে ইচ্ছা করিল।

মূহুর্তে আমার সকল বিরক্তি গলিয়া গেল। মাস্টার মশাইদের প্রতি মনটা উষ্ন হইয়া উঠিল। কিয়দখন হন্টন শেষে আমরা একটা গারো পল্লিতে আসিলাম। এখানে আবার আরেক তেলেসমতি। মাটি ফুঁড়িয়া জল উঠিতেছে।

টলটলে সচ্ছ ঠান্ডা জল, সকলে অজলা ভরে পান করিল, হাত-মুখ ধুইলে। এক গারো বাসার সামনে বসিয়া হল্কা নাস্তা শেষে রওয়ানা দিলাম। মিনিট দশেক হটিতেই দেখি আমাদের রিকসা গুলো দাড়াইয়া আছে। রিকসা যোগে আসিলাম দুর্গাপুর বাজারে। নিরব নামের এক রেস্টুরেন্টে আগেথেকে বোয়াল মাছের ফরমায়েস দেয়া ছিল।

মনে বড় আসা নিয়া বোয়াল মাছের উপর হামলা করিলাম। কিন্তু হায়! যেমন ভাবিয়াছিলাম তেমন না। দুপুরে লাঞ্চিত হইয়া দুর্গাপুর বালু ঘাটায় গেলাম। এই প্রথম দিনের আলোয় সমেস্বরী দর্শন হইল। দেখিয়া মনে পড়ে গেল ছেলেবেলায় পড়া, আমাদের ছোট নদী চলে একে বেকে, বৈশাখমাসে তার হাটুজল থাকে।

দুই পাশে ধুধু চর লইয়া চিকন সমেস্বরী। সচ্ছ টলটলে জল। কোথাও হাটু সমান কোথাও গলা আবার কোথাও হাটুরও নিচে পানি। সেখান থেকে একটা ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া নেয়া হইল। উদ্দেশ্য "রানি খং"।

বিকাল লাগিয়া আসিতেছে। নৌকায় উঠিয়া বিকাশ মাস্টার মশাই আমাদের রানি খং এর গল্প বললেন। রানি খং ছিলেন কোন এক সুসং রাজার কন্যা। ভালোবেসেছিলেন সাধারন প্রজাকে। আর কি? রাজা জানিবা মাত্র রোষানল।

কন্যাকে তিনি ত্যাজ্য করিলেন। এই দুখেঃ রানি আত্মাহূতি দিলেন। সেই স্থানটি-ই রানি খং নামে পরিচিত। সন্ধা মুখে আমরা রানি খং এ পৌছাইলাম। পাহাড়ের উপরে একটি মিশনারি চার্চ।

আমরা যখন উপরে পৌছাইলাম, আলো তখন অন্ধকারের সাথে লড়াই শেষে রণে ভঙ্গ দিচ্ছে। সবকিছুর ছায়া ছয়া অবয়ব। কানে আসিল চার্চের সম্মিলিত প্রর্থনা সংগিত। হঠাৎ মনে হইলে, চারিপাশ কেমন অপার্থীব হইয়া গেল। হঠাৎ করিয়া কেউ যেন আকাশে কালী গুলিয়া দিল।

অন্ধকারের মধ্যে অন্ধকারের ছোপ মিলিয়া কেমন যেন একটা মায়াময়ী ব্যাপার। আমরা নিচে নামিয়া আসিলাম। নৌকা ছাড়তে নতুন এক গোল লাগিল। অন্ধকার ছাড়া দেখার কিছু নাই। যে দিকে চোখ যায় শুধু অন্ধকারের দেয়াল।

কালী গোলা অন্ধকার। তার উপরে নদীতে পানি কম। কপাল ভালো আমাদের মাঝি পাকিয়া টসটসে হইয়া আছে। সমেস্বরীকে সে নিজের ঘরটার চাইতে কম চিনে না। দুই একবার ডুবো চরে আটকাইলেও তেমন মহা কোন গোল লাগিল না।

অন্ধকারের চাদরে পেচাইয়া আমরা বিড়িসিড়ির দিকে আগাইতেছি। সবাই কেমন চুপ করিয়া গেল। কি মনে হইতে আমি নৌকায় চিৎপটাং হইলাম। আকাশের দিকে তাকাইয়া কেমন অস্থির লাগিল। আকাশ ভরা তারা।

মনে হইতেছিল আকাশ থেকে তারা থসিয়া আমার রন্ধ্রে প্রবেশ করিতেছে। নিজের অস্তিত্বকে বিলীন মনে হইল। গাতক পল্টু হঠাৎ করেই গান ধরিল। কোন এক অজানা ফুৎকারে সকলে সমস্বরে কিন্তু মৃদু লয়ে নিচু কন্ঠে গলা মেলাইলো। একটু আগে শুনিয়া আসা প্রর্থনা সংগিতের মত কেমন স্থিতিস্থাপক সময় আমাদের ধরিয়া রাখিল।

জলের শব্দ, ইঞ্জিনের আওয়াজ, ১৭ খানা গলার কোরাস, আর গিটারের সুর মিলিয়া যে অদ্ভুৎ পাচন হইলো, এর থেকে অপার্থীবতা আমি আর অনুভব করিনাই। যানিনা রাতজাগা কোন পাখি আমাদের সাথে গলা মিলাইলো কিনা, মহাজগতের নিয়ম ভাঙ্গিয়া একটি তারা নড়িয়া উঠিল কিনা, আমাদের সবকটি মানুষের আত্মায় দাগ পড়িল এইটুকু হলফ করিয়া বলা যায়। আমার মনে হইতেছে সেই অন্ধকারের কোন কোনে আমার ছেলেবেলার চিরচেনা রোদ চুরি যাওয়া বিকেলের মিষ্টি গন্ধ মেশা বাতাস মিলিয়া আমার স্মৃতিতে নাড়া দিতেছে। ন'টা নাগাদ আমরা বিড়িসিড়ি পৌছাইলাম। এই দিনটি নিয়া আর লিখিতে চাইতেছিনা।

দিনটির মজা এইখানে সমাপ্ত করাই শ্রেয়। ৩য় দিনঃ আগের দিনের রাতের রেশ কাটিতে না কাটিতে, হৈ চৈ করিয়া সকাল নামিল। আমাদের আজকের লক্ষ কামারখালী বাজারে নামিয়া, সেখানথেকে হাঁটিয়া বেগুনী পাহাড়ে যাওয়া। সকালের নাস্তা শেষে যাত্রা করিলাম। এইখানে রিকসা অপেক্ষা নৌকা যাত্রা বেশি আরামদায়ক।

যাত্রা ও দ্রুত হয়। আমরা শেষ দিন ব্যবহার করা ইঞ্জিন নৌকাটাই ভাড়া করিলাম। নৌকা ঘাটে কাজের মধ্যে কর্ম হইল, আমাদের কিমি বালির পাড় ভাঙ্গিয়া আদ্দেক পানিপতীত (ভূমি তে পতিত হইলে ভূপতীত তাই পানির জন্য পানি পতিত) হইল। তাহাকে পানি হইতে তুলিয়া আমাদের নৌকা যাত্রা শুরু করিল। আমরা ভাসিয়া চলিলাম কামার খালী বাজারের উদ্দেশ্যে।

কামারখালীতে, নামিয়া আমরা একটি ছোট্ট ছাপরা হোটেলে আমাদের দুপুরের জন্য খাবারের ফর্মায়েশ দিলাম। সেইখান থেকে হাঁটিয়া যাত্রা করিতে হইবে। হাঁটা ধরিলাম। আমি কপালগুনে (!) কোন ভাবে পর্বত কন্যার এসকর্ট করিতেছিলাম। আমার সহীত ছিল কানহা বাবু।

স্বাভাবিক কারনেই আমরা পিছাইয়া গেলাম। নন্দন বাবু ছবি তুলিতে আমাদের সাথে রহিয়া গিয়াছে। আমাদের সাথের ব্যাক্তি সমূহ কিছুক্ষনেই আহা উহু শুরু করিল। হঠাৎ তাহাদের নিকট দেবদুত হইয়া উদয় হইল একটি ট্রাক্টর। দেখিয়া হাততুলিয়া দাড়া করাইলাম।

বেগুনী পাহাড় পর্যন্ত ১০০ খানা টাকায় রফা হইল। আমরা ৬ জনা উঠিলাম। রাস্তায় আরো কয়েকজনকে তুলিয়া নিলাম। হঠাৎ জানা গেল, বিকাশ মাস্টার মশাই -কে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছেনা। আমাদের মুঠোফোন তখন ক্ষমতার বাইরে।

বেতার যন্ত্রটাও কাজ করিতেছেনা। আমি এবং কানাই ট্রাক্টর হইতে নামিয়া গেলাম। পেছনে হাঁটা শুরু করিলাম। ১০ মিনিট হাটিতে দেখি আমাদের মাস্টার মশাই হাতে তিন টুকরা মিষ্টি লাঠি লইয়া হাঁটিয়া আসিতেছে। একটা তিনি ইতি মধ্যে চর্বন শুরু করিয়াছেন।

বাকি দুইটি আমি আর কানাইদা ভাগা ভাগি করিয়া লইলাম। মাস্টার মশাই এর পেছন পেছন মিষ্টি লাঠি লইয়া হাঁটিতে লাগিলাম। ২০ মিনিট হাঁটিয়া বেগুনী পাহাড়ে পৌছিলাম। পাহাড়টা হইল মূলত অতি মূল্যবান সাঁজি মাটির। এহাই বাংলাদেশের একমাত্র সাঁজিমাটির খনি।

সাঁজিমাটির রং হালকা বেগুনী। গারো মহিলা পুরুষরা খনিতে কাজ করিতেছে। বিশাল এলাকা যুড়ে খনন কার্য চলিতেছে। পেছনে খনন হেতু সৃষ্ট বিশাল একটি হ্রদ। পানি চকচকে নীল।

পুরা নীল না, নীলের মাত্রা কেমন যেন একটু ভিন্ন। অদ্ভুৎ। পানি দেখিয়া কানাইদা ফট করিয়া লাফাইয়া পড়িল। পছেন পেছন রবিন্দ্র নাথ এবং নন্দন বাবু ঝাপাইয়া পড়িল। মাষ্টার মশাইরা কাগজ লইয়া আঁকিতে বসিলেন।

আমিও তাই করিলাম। কানাইরা কিছুক্ষন পানিতে দাপাইয়া ক্ষান্ত দিল। তাহারাও উঠিয়া আসিয়া ছবি আঁকিতে বসিল। বিকেল ৩ টা নাগাদ, আমরা আবার ট্রাক্টর যোগে কামার খালী ফিরিয়া আসিলাম। মধ্যাহ্নভোজ সারিলাম পুর্বল্লেখিত ছাপরা খাবার দোকানে।

দোকান ছাপরা হইতে পারে কিন্তু আমাদের সকল চিন্তা ছাপিয়ে দোকানের খাবার হইল আশাতিত রকমের ভাল। মুরগী, ভর্তা, শাক আর ছোটমাছ। আহা আহা করিয়া সকলে গলধকরণ করিল। খাইতে খাইতে বিকাল গড়াইয়া গেল। সন্ধ্যার মুখে মুখে আমরা নৌকায় চড়িলাম।

আবার সেই অন্ধকারে নৌকা যাত্রা। এই যাত্রর পুনরাবৃত্তি করিবনা, কিন্তু টানা ২য় বারের মতন এই যাত্রায় আমি এহেন নৌকাভ্রমনের প্রেমে পড়িলাম। রাতে গোলযোগ সমৃদ্ধ জলযোগ এর ব্যবস্থা রাখা ছিল। জলযোগ শেষে কখন যে ঘুমাইলাম মনে নাই। ৪ র্থ দিনঃ এই দিনটি সম্ভবত আমাদের ভ্রমনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।

আমরা আজকে ইন্সটলেশন আর্ট ওয়ার্ক করিব, স্থান কামার খালী চর। সকালের নাস্তা পূর্বক আমরা যথারীতি সেই নৌকা যোগে যাত্রা শুরু করিলাম। পথিমধ্যে আমরা মাঝ নদীর হাটুপানিতে নামিয়া খানিক দাপা দাপি করিলাম। আমাদের মাস্টার মশাইরাও আমাদের সহীত যোগ দিলেন। খানিক দাপাদাপি শেষে আমরা পূনরায় কামারখালী আসিলাম।

ঘন্টা খানেক পর আমরা কামারখালী চরে পৌছিলাম। নামিতেই সকলে ছড়াইয়া পড়িল। ইহাই আমাদের প্রথম ইন্সটলেশন আর্ট ওয়ার্ক বিধায় আমরা সকলে ভিষন ছুটা ছুটি করিয়া কাজটা শেষ করিলাম। বিকাল নাগাদ কর্ম শেষ হইতে কর্মসমূহের চলচ্চিত্র এবং স্থির চিত্র ধারন করিয়া আমরা লাঞ্চিত হইতে গেলাম। খাওয়া শেষে সকলে মিলিয়া আবার নৌকা তে ভ্রমনে বের হইলাম।

আজকে উদ্দেশ্য রাণী খং পার হইয়া ভারতিয় বর্ডার সংলগ্ন বিজিবি ক্যম্প। নৌকায় আমাদের মাষ্টার মশাই দুর্দান্ত কিছু জলরং করিয়া আমাদের টাশকি লাগাইয়া দিলেন। বিজিবি এর ক্যাম্প দেখিয়া সন্ধ্যার সময় যাত্রা, অতঃপর আবারো সেই অন্ধকার নৌযাত্রা। আমি পুনঃপ্রেমে পরিলাম। আজকে রাতে আমরা, মুরগী পোড়া খাইলাম, প্রযত্নে, পর্বত কন্যা, শমী।

গোলযোগ সমৃদ্ধ যলযোগের শেষে যথেষ্ট নর্তন কুর্দন হইলো। শিলার যৌবন হইতে মুন্নির বদনাম সকলই চলিল। শেষ রাতে সকলে মিলিয়া টলমল পায়ে যার যার স্ব স্থানে ফিরিয়া গেলাম। আর একটি দিন শেষ হইল ৫ম দিনঃ আজকে সকালে আমারা গড়িয়ে গড়িয়ে তক্তপোশ ছাড়িলাম। আজকে দিনটি আমরা রাখিয়াছি কেবল মাত্র আমাদের আয়েশ এর জন্য।

আমরা আজকে তারাহুরো করে কোথাও যাবনা। আজকে আমাদের ছুটি। তক্তপোশ ছাড়িলাম আমরা বেলা ১১ টার দিকে। নাস্তা করিলাম ঠান্ডা পোরটা দিয়া। তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে আমরা গেলাম সংস্কৃতি কেন্দ্র দেখিতে।

স্থানিয় গারো আদিবাসিদের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি নিয়া সমৃদ্ধ একটি যাদুঘর আছে এখানে। দুপুরে বিশ্রাম কেন্দ্রে মধ্যাহ্ন ভোজ সারিয়া রিকসা যোগে গেলাম সুসং দূর্গাপুরে, সুসং রাজার বাড়ি দেখিতে। বাড়িটি এখন একটি মন্দির এ পরিবর্তীত। সুসং রাজা ভারতে চলিয়া যাওয়ার সময় বাড়িটি তার মালী মধু বাবু কে দান করিয়া যান। এর পর গেলাম বিক্ষাত টংক আন্দোলনের নেতা কমরেড মনি সিং এর বাড়ি দেখিতে।

বাড়ির পাশেই হচ্ছে তাহার এবং টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিতে তৈরি একটি মনুমেন্ট। স্থানিয় মানুষদের সাক্ষাৎকার লৈলাম। টংক আন্দোলন সম্পর্কে আগে ভাষা ভাষা জানিতাম, এইবার সুযোগে স্বচ্ছ একটি ধারনা পাওয়া গেল। আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত মস্তকে বিশ্রামাগারের পথে চলিলাম। আমাদের যাত্রা সমাপ্ত হইতে যাচ্ছে।

আগামি কাল আমরা পুনরায় পুরাতন যান্ত্রিকতায় পরিপূর্ণ জীবনে ফিরিয়া যাব। বন্ধ্যুত্বের সারল্যতা স্বার্থের পঙ্কিলতায় কলুশিত হইবে। তবুও কোন এক অ-সময়ে, দেখা হওয়া বন্ধুর সাথে, সহসাই সুসং দুর্গাপূরের সবুজ স্মৃতি স্বরনে আসিবে। এইত চির সবুজ বন্ধুত্বের আশ্রয় হইয়া রইল। জগাইমাধব, ১৪ ই ফেব্রুয়ারী, ধানমন্ডি,
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.